কমপক্ষে ৩০ বছর জেলে থাকতেই হবে, আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নির্যাতন মামলায় সাজা ঘোষণা আদালতের
- আপডেট : ৩ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার
- / 38
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ২০২৪ সালের চেন্নাইয়ের আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন মামলায় জ্ঞানশেখরনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে চেন্নাইয়ের একটি মহিলা আদালত। একই সঙ্গে তাকে ৯০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক রাজালক্ষ্মী। গত বুধবারই আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর যৌন নির্যাতনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত এ জ্ঞানশেখরনকে দোষী সাব্যস্ত করে চেন্নাইয়ের মহিলা আদালত। অবশেষে এই মামলায় সাজা ঘোষণা হল।
গত বছর ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্রীর যৌন নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে উত্তাল হয় তামিলনাড়ু। চেন্নাইয়ের আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ১৯ বছর বয়সী এক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠে।
বিচারক রাজালক্ষ্মী জানিয়েছেন, কমপক্ষে ৩০ বছর তাকে জেলে থাকতেই হবে। মা ও নাবালিকা কন্যার কথা বলে নূন্যতম শাস্তির আবেদন জানিয়েছিল অভিযুক্ত। কিন্তু তাকে যাবজ্জীবনের সাজা শুনিয়েছে আদালত। বিগত ৫ মাস ধরে বিচারের পর অবশেষে শাস্তি পেয়েছে অভিযুক্ত। বিচারক গত বুধবার জ্ঞানশেখরনকে যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, ভয় দেখানো এবং অপহরণ সহ ১১টি অভিযোগের দোষী সাব্যস্ত করেছেন। মামলায় কমপক্ষে ২৯ জন সাক্ষী দিয়েছেন এবং পুলিশ ১০০ পৃষ্ঠার চার্জশিট জমা করেছে। সমস্ত অভিযোগ দেখে বিচারক জানিয়েছিলেন, সর্বোচ্চ সাজা হবে অভিযুক্তের।
এর আগে মহিলা আদালতের বিচারক রাজালক্ষ্মী বলেছিলেন, ‘উপযুক্ত প্রমাণ রয়েছে ৷ সমস্ত তথ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ করে বিরিয়ানি ব্যবসায়ী এ জ্ঞানশেখরনকে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত ৷ পরে সরকারি পক্ষের আইনজীবী সাংবাদিকদের জানান, দোষীর বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ৷ প্রতিটি অভিযোগের সপক্ষে উপযুক্ত তথ্য এবং ফরেন্সিক প্রমাণ আদালতে পেশ করা হয়েছে ৷ সেই সমস্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত ৷ পরিবারের একমাত্র রোজগেরে এ জ্ঞানশেখরন ৷ তাই আদালতের কাছে সে নূন্যতম সাজার আর্জি জানায় ৷ যদিও, সরকারের তরফে চরমতম সাজার আবেদন জানানো হয় ৷
২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর রাত ৮টার পর এই ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যাবেলা নির্যাতিতা তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে ক্যাম্পাসের ওল্ড বিল্ডিংয়ের কাছে নির্জন এলাকায় গল্প করছিলেন। নির্যাতিতার সেই বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। রাত ৮টা নাগাদ সেখানে উপস্থিত হয় অভিযুক্ত জ্ঞানশেখরন। সে দাবি করে, নির্যাতিতা ও তাঁর পুরুষ বন্ধুর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি সে তুলেছে। ব্ল্যাকমেলের ভয় দেখিয়ে সে নির্যাতিতার বন্ধুকে মারধর করে এবং সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য করে। এরপরই দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করে জ্ঞানশেখরন। রাজ্যের ক্ষমতাসীন শাসক দল ডিএমকে-র সঙ্গে জ্ঞানশেখরনের সম্পর্কের কথাও তখন উঠে আসে। যার ফলে রাজনৈতিক বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল। যদিও দলের সভাপতি তথা মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, জ্ঞানশেখরন দলের একজন সমর্থক মাত্র সদস্য নন।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই বিরিয়ানি দোকান চালাত জ্ঞানশেখরন। আগেও তার বিরুদ্ধে চুরি এবং ভাঙচুরের মতো ছোটখাটো অপরাধের ২০টি মামলা দায়ের হয়েছে।এরপর ২৪ ডিসেম্বর পুলিশের হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে ঘটনার কথা জানান নির্যাতিতা। অভিযোগের পরেই ঘটনার কথা সামনে আসে। অভিযোগ পাওয়ার পর ৬টি ধারায় মামলায় রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ৷ তদন্তে, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের সমস্ত সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখেন তদন্তকারীরা ৷ মোবাইলের সিগন্যালও খতিয়ে দেখা হয় ৷
তিনদিন পর ২৬ ডিসেম্বর কোট্টুপুরম থেকে জ্ঞানশেখরনকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ গ্রেফতারের সময় পালানোর চেষ্টাও করে সে ৷ সেই সময় হাত ও পায়ে চোট লাগে তার ৷পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ২০১১ সালে ওই ক্যাম্পাসেই এক মহিলাকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ রয়েছে। তদন্ত চলাকালীন ভিডিয়ো কলে অভিযুক্তকে চিহ্নিত করেন নির্যাতিতা ছাত্রী ৷ পরে জ্ঞানশেখরনের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য ৩ জন মহিলা আইপিএস নিয়ে বিশেষ দল গঠন করে তামিলনাড়ু সরকার ৷ তদন্তের পর ফেব্রুয়ারি মাসে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট জমা দেয় সিট ৷ পরে সেই মামলাটি চেন্নাইয়ের মহিলা আদালতে স্থানান্তরিত করা হয় ৷ এবার সেখানেই রায় ঘোষণা হল ৷
উল্লেখ্য, এই মামলার এফআইআর কপি তামিলনাড়ু পুলিশের সিসিটিএনএস ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়। সেই এফআইআর কপি ডাউনলোড করে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম সম্প্রচার করেছিল। যা ফলে তীব্র সমালোচনার সূত্রপাত হয়। পরে, মাদ্রাজ হাইকোর্ট মামলার তদন্ত একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে তার কাছে হস্তান্তর করে, যারা এফআইআর ফাঁসের বিষয়টিও তদন্ত করছে।