০৫ অক্টোবর ২০২৫, রবিবার, ১৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাপানে ১৫ লক্ষ মানুষ ‘হিকিকোমোরি’ রোগে আক্রান্ত, জানুন কেন এই অবস্থা হল দেশটির

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ৬ এপ্রিল ২০২৩, বৃহস্পতিবার
  • / 45

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক:  জাপানের প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছে। করোনার সময় যেমন মানুষ নিজেকে আইসোলেশনে রাখত, ঠিক সেইভাবেই তারা নিজেকে অন্যের কাছ থেকে সরিয়ে রেখেছে। জাপানের পরিভাষায় এই মানসিক রোগের নাম ‘হিকিকোমোরি’।

যে কাউকেই কি হিকিকোমোরি বলে অভিহিত করা যায়?  না,  তা যায় না। জাপানি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে দুইটি শর্ত বেঁধে দিয়েছে, যার যেকোনও একটি পূরণ হলে একজন মানুষকে হিকিকোমোরি বলা যেতে পারে। একজন ব্যক্তিকে তখনই হিকিকোমোরি  বলা যাবে, যখন সে কোনও শারীরিক অক্ষমতা বা অন্য কোনও প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই,  সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছাতেই ছয় মাস বা ততোধিক সময়কাল ধরে ঘরের বাইরে যায়নি, কিংবা সমাজের অন্য কারও সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রাখে।

আরও পড়ুন: রুশ হামলায় ওডেসার ১৫ লক্ষ মানুষ বিদ্যুৎহীন

হিকিকোমোরি এখন একটি বিশেষ ধরনের মানসিক অবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যার ফলে একজন মানুষ ঘরের মাঝে, সমাজের সঙ্গে যোগাযোগহীন অবস্থায় নিজেকে বন্দি রাখে। এই সমস্যা জাপানের ‘মূলধারার সমস্যাগুলোর’ একটি। এই ধরনের মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরা নিজেকে সমাজ থেকে একদম বিচ্ছিন্ন করে রাখে। এই প্রবণতা জাপানের জনসংখ্যার মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সুস্থতার বিষয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।  সমীক্ষা অনুযায়ী এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনও নির্দিষ্ট বয়স নেই, যুবক থেকে বয়স্ক সকলের মধ্যেই এই মানসিক রোগ বাসা বাঁধতে পারে।  হিকিকোমোরি শব্দটির সঙ্গে মানুষের সঙ্গে পরিচিত ঘটে ১৯৯০ সালে। বিভিন্ন কারণে এই রোগ মানুষের শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে বিষন্নতা, অবসাদ, অত্যাধিক কাজের চাপ প্রভৃতি।

আরও পড়ুন: রাশিয়ার হামলায় অন্ধকারে ইউক্রেনের ১৫ লক্ষ মানুষ

হিকিকোমোরি তাদের মধ্যেই বেশি দেখা দেয়, যারা  জাপানে হিকিকোমোরি অতিরিক্ত হারে বেড়ে চলেছে। কেন জাপানে এই রোগ দেখা দিচ্ছে?

দেশটিতে শিক্ষাব্যবস্থায় অতিরিক্ত পড়াশোনার চাপ এর অন্যতম কারণ। ভালো চাকরি, নিশ্চিন্ত জীবন-যাপনের জন্য একটা বয়সের পর থেকে মানুষের অবসাদ বাড়তে থাকে। আরও একটি কারণ হচ্ছে চাকরি চলে যাওয়া।  জাপান এখনও পারিবারিক ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দেয়। যেখানে বাড়ির গুরুজনদের সম্মান প্রদর্শন করার প্রথা চলে আসছে। অনেক সময় সন্তানরা মনে করে, তারা তাদের বাবা-মায়ের যত্ন ঠিকভাবে করে উঠতে পারছে না, ফলে এই মানসিকতা থেকেও কষ্ট-অবসাদ মনে ভিড় করে।

জাপানের চাকরি ক্ষেত্রেও অত্যাধিক কাজের চাপ ‘হিকিকোমোরি’র অন্যতম কারণ। কাজের ক্ষেত্রে বহু ক্ষণ সময় ধরে কাজ, স্বল্প সুযোগ, অবসাদ প্রভৃতি কারণে হিকিকোমোরি দেখা যায়। জাপান সরকার হিকিকোমোরির সমস্যাকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এটি সমাধানের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে। এই উদ্যোগগুলির মধ্যে রয়েছে কাউন্সেলিং পরিষেবা, সহায়তা গোষ্ঠী এবং হিকিকোমোরি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা।

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

জাপানে ১৫ লক্ষ মানুষ ‘হিকিকোমোরি’ রোগে আক্রান্ত, জানুন কেন এই অবস্থা হল দেশটির

আপডেট : ৬ এপ্রিল ২০২৩, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক:  জাপানের প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছে। করোনার সময় যেমন মানুষ নিজেকে আইসোলেশনে রাখত, ঠিক সেইভাবেই তারা নিজেকে অন্যের কাছ থেকে সরিয়ে রেখেছে। জাপানের পরিভাষায় এই মানসিক রোগের নাম ‘হিকিকোমোরি’।

যে কাউকেই কি হিকিকোমোরি বলে অভিহিত করা যায়?  না,  তা যায় না। জাপানি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে দুইটি শর্ত বেঁধে দিয়েছে, যার যেকোনও একটি পূরণ হলে একজন মানুষকে হিকিকোমোরি বলা যেতে পারে। একজন ব্যক্তিকে তখনই হিকিকোমোরি  বলা যাবে, যখন সে কোনও শারীরিক অক্ষমতা বা অন্য কোনও প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই,  সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছাতেই ছয় মাস বা ততোধিক সময়কাল ধরে ঘরের বাইরে যায়নি, কিংবা সমাজের অন্য কারও সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রাখে।

আরও পড়ুন: রুশ হামলায় ওডেসার ১৫ লক্ষ মানুষ বিদ্যুৎহীন

হিকিকোমোরি এখন একটি বিশেষ ধরনের মানসিক অবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যার ফলে একজন মানুষ ঘরের মাঝে, সমাজের সঙ্গে যোগাযোগহীন অবস্থায় নিজেকে বন্দি রাখে। এই সমস্যা জাপানের ‘মূলধারার সমস্যাগুলোর’ একটি। এই ধরনের মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরা নিজেকে সমাজ থেকে একদম বিচ্ছিন্ন করে রাখে। এই প্রবণতা জাপানের জনসংখ্যার মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সুস্থতার বিষয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।  সমীক্ষা অনুযায়ী এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনও নির্দিষ্ট বয়স নেই, যুবক থেকে বয়স্ক সকলের মধ্যেই এই মানসিক রোগ বাসা বাঁধতে পারে।  হিকিকোমোরি শব্দটির সঙ্গে মানুষের সঙ্গে পরিচিত ঘটে ১৯৯০ সালে। বিভিন্ন কারণে এই রোগ মানুষের শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে বিষন্নতা, অবসাদ, অত্যাধিক কাজের চাপ প্রভৃতি।

আরও পড়ুন: রাশিয়ার হামলায় অন্ধকারে ইউক্রেনের ১৫ লক্ষ মানুষ

হিকিকোমোরি তাদের মধ্যেই বেশি দেখা দেয়, যারা  জাপানে হিকিকোমোরি অতিরিক্ত হারে বেড়ে চলেছে। কেন জাপানে এই রোগ দেখা দিচ্ছে?

দেশটিতে শিক্ষাব্যবস্থায় অতিরিক্ত পড়াশোনার চাপ এর অন্যতম কারণ। ভালো চাকরি, নিশ্চিন্ত জীবন-যাপনের জন্য একটা বয়সের পর থেকে মানুষের অবসাদ বাড়তে থাকে। আরও একটি কারণ হচ্ছে চাকরি চলে যাওয়া।  জাপান এখনও পারিবারিক ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দেয়। যেখানে বাড়ির গুরুজনদের সম্মান প্রদর্শন করার প্রথা চলে আসছে। অনেক সময় সন্তানরা মনে করে, তারা তাদের বাবা-মায়ের যত্ন ঠিকভাবে করে উঠতে পারছে না, ফলে এই মানসিকতা থেকেও কষ্ট-অবসাদ মনে ভিড় করে।

জাপানের চাকরি ক্ষেত্রেও অত্যাধিক কাজের চাপ ‘হিকিকোমোরি’র অন্যতম কারণ। কাজের ক্ষেত্রে বহু ক্ষণ সময় ধরে কাজ, স্বল্প সুযোগ, অবসাদ প্রভৃতি কারণে হিকিকোমোরি দেখা যায়। জাপান সরকার হিকিকোমোরির সমস্যাকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এটি সমাধানের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে। এই উদ্যোগগুলির মধ্যে রয়েছে কাউন্সেলিং পরিষেবা, সহায়তা গোষ্ঠী এবং হিকিকোমোরি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা।