১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এক ধাক্কায় বিজ্ঞান বিভাগের ১১ জন শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়ায় সমস্যায় কুলতলি ভগবান চন্দ্র হাইস্কুল

কিবরিয়া আনসারি
  • আপডেট : ৪ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার
  • / 76

উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়,কুলতলি: চাকরি গেল সুন্দরবনের কুলতলির একটি স্কুলের ১১ জন শিক্ষকের। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত পিছিয়ে পড়া এলাকা হিসাবে পরিচিত কুলতলি ব্লক। তফসিলি অধ্যুষিত এলাকায় একমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল হিসেবে বিজ্ঞান পড়ানো হয় কুলতলির জামতলা ভগবান চন্দ্র হাইস্কুলে।বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে সেই স্কুলেই এখন শ্মশানের নিরবতা।এই স্কুলের ৪৬ জন শিক্ষক শিক্ষিকার মধ্যে এক ঝটকায় ১১ জনই চাকরি চলে গেছে।কুলতলি ব্লকের সবচেয়ে বড় এই স্কুলে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পড়ুয়া। সেখানে ১১ জন শিক্ষকের চাকরি হারানোর ঘটনায় রীতিমতো মাথায় বজ্রপাত পড়ার মতো অবস্থা প্রধান শিক্ষকের।সুন্দরবন এলাকার মধ্যে এই স্কুল ২০১৬ সালে বিজ্ঞান পড়ানোর অ্যাফিলেশান পেলেও শিক্ষকের অভাবে বিজ্ঞান বিভাগ শুরু করা যায়নি। এর পর ২০১৮ ও ১৯ সালে স্কুলে ১১ জন নতুন শিক্ষক ও শিক্ষিকা যোগ দেন।যাঁদের মধ্যে ৬ জন শিক্ষক ও ৫ জন শিক্ষিকা। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই অঙ্ক ও বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তাঁদের ভরসায় সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এই স্কুলে বিজ্ঞান শাখার পথচলা শুরু হয়। প্রথম বছরে একাদশ শ্রেণিতে একজন। পরের বছর দু’জন। তার পর বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৭ জন।একটা সময় স্কুলের পক্ষ থেকেই এলাকার মানুষকে আশ্বস্ত করা হয় শুধুমাত্র বিজ্ঞান পড়ার জন্য কুলতলি ছেড়ে দূরের জয়নগর কিংবা মথুরাপুরের স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করার দরকার নেই। শিক্ষকদের সেই ডাকে সাড়া দিয়ে অনেক অভিভাবক ভরসা রাখতে শুরু করেছিলেন। সেই কারণেই তিন বছরেই বিজ্ঞান শাখায় পড়ুয়ার সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। ঠিক তখনই সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে একেবারে মুখ থুবড়ে পড়তে চলেছে স্কুলের পড়াশোনা।বৃহস্পতিবার স্কুলে এসেও একে একে ওই ১১ জন শিক্ষকশিক্ষিকা স্কুল ছেড়ে ফিরে গিয়েছেন যে যাঁর বাড়িতে। অসহায় অবস্থায় তাঁদের চলে যেতে দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে সহ শিক্ষিকারা।বৃহস্পতিবার থেকেই স্কুলের পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ইউনিট টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালীন সেই রায় ঘোষণায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে ওই ১১ জন শিক্ষক শিক্ষিকার। পরীক্ষার হল ছেড়ে তাঁরা ব্যাগ গুছিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করে চোখের জল ফেলতে ফেলতে স্কুলছাড়েন। স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রীরা বলে,ওই ১১ জন শিক্ষক শিক্ষিকা আমাদের খুব ভালো ভাবে পড়াতেন। যে কারণে আমাদের বাইরের টিউশন পড়ার দরকারই হতো না। জানি না এখন আমাদের কী হবে।স্কুলের প্রধান শিক্ষক শান্তনু ঘোষাল বলেন,সুপ্রিম কোর্টের আদেশকে মান্যতা দিয়েও বলছি, আজকে আমার স্কুলের ১১ জন যোগ্যতম শিক্ষক ও শিক্ষিকাকে হারালাম। যাদের ভরসায় সুন্দরবনের এই অজ পাড়াগাঁয়ে স্কুল পড়ুয়ারা বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ পেতে শুরু করে ছিল, জানি না তাদের এখন কী হবে।এমনিতেই আমার স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা অনেক বেশি। এক সঙ্গে এতজন শিক্ষক চলে যাওয়ায় বাকি প্রত্যেকটা ক্লাসের পঠন পাঠনে ও বিস্তর সমস্যায় পড়তে হবে আমাদের।এখন স্কুল শিক্ষা দপ্তর কি করে সেটাই দেখার।

আরও পড়ুন: যোগ্যদের তালিকা প্রকাশের দাবিতে SSC ভবনের সামনে বিক্ষোভ

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

এক ধাক্কায় বিজ্ঞান বিভাগের ১১ জন শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়ায় সমস্যায় কুলতলি ভগবান চন্দ্র হাইস্কুল

আপডেট : ৪ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার

উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়,কুলতলি: চাকরি গেল সুন্দরবনের কুলতলির একটি স্কুলের ১১ জন শিক্ষকের। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত পিছিয়ে পড়া এলাকা হিসাবে পরিচিত কুলতলি ব্লক। তফসিলি অধ্যুষিত এলাকায় একমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল হিসেবে বিজ্ঞান পড়ানো হয় কুলতলির জামতলা ভগবান চন্দ্র হাইস্কুলে।বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে সেই স্কুলেই এখন শ্মশানের নিরবতা।এই স্কুলের ৪৬ জন শিক্ষক শিক্ষিকার মধ্যে এক ঝটকায় ১১ জনই চাকরি চলে গেছে।কুলতলি ব্লকের সবচেয়ে বড় এই স্কুলে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পড়ুয়া। সেখানে ১১ জন শিক্ষকের চাকরি হারানোর ঘটনায় রীতিমতো মাথায় বজ্রপাত পড়ার মতো অবস্থা প্রধান শিক্ষকের।সুন্দরবন এলাকার মধ্যে এই স্কুল ২০১৬ সালে বিজ্ঞান পড়ানোর অ্যাফিলেশান পেলেও শিক্ষকের অভাবে বিজ্ঞান বিভাগ শুরু করা যায়নি। এর পর ২০১৮ ও ১৯ সালে স্কুলে ১১ জন নতুন শিক্ষক ও শিক্ষিকা যোগ দেন।যাঁদের মধ্যে ৬ জন শিক্ষক ও ৫ জন শিক্ষিকা। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই অঙ্ক ও বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তাঁদের ভরসায় সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এই স্কুলে বিজ্ঞান শাখার পথচলা শুরু হয়। প্রথম বছরে একাদশ শ্রেণিতে একজন। পরের বছর দু’জন। তার পর বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৭ জন।একটা সময় স্কুলের পক্ষ থেকেই এলাকার মানুষকে আশ্বস্ত করা হয় শুধুমাত্র বিজ্ঞান পড়ার জন্য কুলতলি ছেড়ে দূরের জয়নগর কিংবা মথুরাপুরের স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করার দরকার নেই। শিক্ষকদের সেই ডাকে সাড়া দিয়ে অনেক অভিভাবক ভরসা রাখতে শুরু করেছিলেন। সেই কারণেই তিন বছরেই বিজ্ঞান শাখায় পড়ুয়ার সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। ঠিক তখনই সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে একেবারে মুখ থুবড়ে পড়তে চলেছে স্কুলের পড়াশোনা।বৃহস্পতিবার স্কুলে এসেও একে একে ওই ১১ জন শিক্ষকশিক্ষিকা স্কুল ছেড়ে ফিরে গিয়েছেন যে যাঁর বাড়িতে। অসহায় অবস্থায় তাঁদের চলে যেতে দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে সহ শিক্ষিকারা।বৃহস্পতিবার থেকেই স্কুলের পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ইউনিট টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালীন সেই রায় ঘোষণায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে ওই ১১ জন শিক্ষক শিক্ষিকার। পরীক্ষার হল ছেড়ে তাঁরা ব্যাগ গুছিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করে চোখের জল ফেলতে ফেলতে স্কুলছাড়েন। স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রীরা বলে,ওই ১১ জন শিক্ষক শিক্ষিকা আমাদের খুব ভালো ভাবে পড়াতেন। যে কারণে আমাদের বাইরের টিউশন পড়ার দরকারই হতো না। জানি না এখন আমাদের কী হবে।স্কুলের প্রধান শিক্ষক শান্তনু ঘোষাল বলেন,সুপ্রিম কোর্টের আদেশকে মান্যতা দিয়েও বলছি, আজকে আমার স্কুলের ১১ জন যোগ্যতম শিক্ষক ও শিক্ষিকাকে হারালাম। যাদের ভরসায় সুন্দরবনের এই অজ পাড়াগাঁয়ে স্কুল পড়ুয়ারা বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ পেতে শুরু করে ছিল, জানি না তাদের এখন কী হবে।এমনিতেই আমার স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা অনেক বেশি। এক সঙ্গে এতজন শিক্ষক চলে যাওয়ায় বাকি প্রত্যেকটা ক্লাসের পঠন পাঠনে ও বিস্তর সমস্যায় পড়তে হবে আমাদের।এখন স্কুল শিক্ষা দপ্তর কি করে সেটাই দেখার।

আরও পড়ুন: যোগ্যদের তালিকা প্রকাশের দাবিতে SSC ভবনের সামনে বিক্ষোভ