২৮ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার, ১০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ওড়িশায় ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক ১৯ ফেরিওয়ালা, বীরভূমে আতঙ্কে পরিবার

চামেলি দাস
  • আপডেট : ২৮ জুন ২০২৫, শনিবার
  • / 605

দেবশ্রী মজুমদার, নলহাটি: মুর্শিদাবাদের পর এবার বীরভূমের ১৯ জন বাংলাভাষীকে ওড়িশায় প্রশাসনিকভাবে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হল। এর ফলে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পেরে আটক হওয়া মানুষগুলো পড়েছে চরম আতান্তরে। একইভাবে তাদের পরিবারের অর্থাৎ বাড়ির লোকজনেরা চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে।

অভিযোগ, শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলার জন্য ওড়িশার বালেশ্বর জেলার রিমনা থানার ওসি বীরভূমের ১৯ জন ফেরিওয়ালাকে কাগজপত্র নিয়ে থানায় ডেকে পাঠান। ২৫ জুন সকাল নটা নাগাদ থানায় যাওয়ার আগে তারা শেষবারের মতো বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। থানায় যাওয়ার পর তাদের কাছ থেকে কাগজপত্র এবং মোবাইল ফোন কেড়ে জমা নেওয়া হয়। তারপরেই বালেশ্বরের ডিটেনশন ক্যাম্পে তাদের রেখে দেওয়া হয়। কোনওভাবেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হচ্ছে না তাদের। ঘটনার পরে নলহাটি থেকে একজন ওড়িশার বালেশ্বরে যায়। কিন্তু তাকেও ডিটেনশন ক্যাম্পে যেতে দেওয়া হয়নি বা কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়নি। ফলে সে ফিরে এসেছে বলে সূত্রের খবর।

জানা গেছে, ১২ দিন আগে বীরভূমের নলহাটি থানার নলহাটি-২ ব্লকের শুকরাবাদ থেকে ১৬ জন এবং রামপুর থেকে একজন ওড়িশার বিভিন্ন গ্রামে অ্যালুমিনিয়াম এবং প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ফেরি করতে গেছিলেন। তাদের সঙ্গেই একই জেলার মুরারই-২ ব্লকের পাইকর থানা এলাকার দুজন ব্যক্তিও জিনিস ফেরি করতে যান। মূলত তারা বালেশ্বর-এর কাছে রেমুনা থানার অন্তর্গত আরমালা, বাহাবলপুর, বালগোপালপুর প্রভৃতি গ্রামে অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ফেরি করতেন।

বারা-২ অঞ্চলের তৃণমূল কংগ্রেসের আহ্বায়ক তথা নলহাটি-২ এর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ড. মুহাম্মদ মহসিন মণ্ডল বলেন, বাপ-দাদাদের আমল থেকে প্রায় তিরিশ বছরের অধিক সময় ধরে তারা জিনিসপত্র ফেরি করছেন। আগে কোনওদিন কোনও অসুবিধা হয়নি। সম্প্রতি তাদের কয়েকজনকে ওড়িশায় গ্রামের মধ্যে মারধরও করা হয়। ওড়িশা ছেড়ে যেতে বলা হয়। আবুল হোসেন, আমির হামজা, নাসিম আখতারের মতো ফেরিওয়ালারা বুঝতে পারছেন না, তাদের সঙ্গে কেন এমন আচরণ হচ্ছে? বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশী হিসেবে দেগে দেওয়া হচ্ছে। এনিয়ে বেশ কয়েকদিন আগে তারা পরিবারের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

ওড়িশায় রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এই সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। একই সমস্যা অন্যান্য বিজেপি শাসিত রাজ্যেও ঘটছে বলে জানান রাজ্যসভার সাংসদ তথা পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলার জন্য এরকম অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। বাংলা দখল করতে না পেরে বিজেপি এভাবে প্রতিহিংসা মূলক কাজ করে চলেছে। প্রশাসনিক স্তরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাদের উদ্ধার করার জন্য সর্বতোভাবে কাজ করছে।

উল্লেখ্য, আবুল হোসেন, আমির হামজা, নাসিম আখতার, সোহেল রানা চৌধুরী, জসীমউদ্দীন চৌধুরী, ইশা চৌধুরী, নুরে আলম চৌধুরী, আখতারুজ্জামান মন্ডল, কলিম উদ্দিন শেখ, আবদুল হালিম,  সাহিবুর রহমান, মাজিদ মন্ডল-সহ মোট ১৯ জন এখন ডিটেনশন ক্যাম্পে কি অবস্থায় আছে তা জানতে পারছে না পরিবার-সহ এলাকাবাসী। ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে থাকা নলহাটির শুকরাবাদের সাহেবুর শেখের স্ত্রী খাদিজা বিবি জানান, প্রায় ১২ দিন আগে তার স্বামী সকলের সঙ্গে ওড়িশায় যান। তারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন। সকাল হলেই সাইকেলে করে অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র গ্রামে গ্রামে ফেরি করতেন। ৩০ বছর ধরে এই কাজ করে আসছেন। কোনওদিন কোনও সমস্যা হয়নি। ইদানিং এই সমস্যার কথা ফোনে তার স্বামী তাকে বলতেন। গত পরশুদিন সকালে থানায় যাওয়ার আগেও তার সঙ্গে স্বামীর শেষ কথা হয়েছিল। তারপর থেকেই ফোন বন্ধ। ছোট দুই মেয়ে এবং বৃদ্ধা শ্বশুর নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি।

সাহেবুরের বৃদ্ধ পিতা আবদুর রউফ বলেন, এই ক’দিন আমাদের বাড়িতে রান্না-বান্না কিছুই হয়নি। সবাই দুশ্চিন্তায় আছে। কবে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরবে সেটা আল্লাহই জানে। একইভাবে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক শুকরাবাদের আবদুল হালিমের স্ত্রী সাবিলা বিবির মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। দুই ছোট ছোট ছেলে নিয়ে সে কী করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। তবে আবদুল হালিমের আব্বা সাগর শেখ বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর উপর তার আস্থা আছে। তিনি নিশ্চয়ই কোনও একটা ব্যবস্থা করবেন।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ওড়িশায় ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক ১৯ ফেরিওয়ালা, বীরভূমে আতঙ্কে পরিবার

আপডেট : ২৮ জুন ২০২৫, শনিবার

দেবশ্রী মজুমদার, নলহাটি: মুর্শিদাবাদের পর এবার বীরভূমের ১৯ জন বাংলাভাষীকে ওড়িশায় প্রশাসনিকভাবে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হল। এর ফলে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পেরে আটক হওয়া মানুষগুলো পড়েছে চরম আতান্তরে। একইভাবে তাদের পরিবারের অর্থাৎ বাড়ির লোকজনেরা চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে।

অভিযোগ, শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলার জন্য ওড়িশার বালেশ্বর জেলার রিমনা থানার ওসি বীরভূমের ১৯ জন ফেরিওয়ালাকে কাগজপত্র নিয়ে থানায় ডেকে পাঠান। ২৫ জুন সকাল নটা নাগাদ থানায় যাওয়ার আগে তারা শেষবারের মতো বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। থানায় যাওয়ার পর তাদের কাছ থেকে কাগজপত্র এবং মোবাইল ফোন কেড়ে জমা নেওয়া হয়। তারপরেই বালেশ্বরের ডিটেনশন ক্যাম্পে তাদের রেখে দেওয়া হয়। কোনওভাবেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হচ্ছে না তাদের। ঘটনার পরে নলহাটি থেকে একজন ওড়িশার বালেশ্বরে যায়। কিন্তু তাকেও ডিটেনশন ক্যাম্পে যেতে দেওয়া হয়নি বা কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়নি। ফলে সে ফিরে এসেছে বলে সূত্রের খবর।

জানা গেছে, ১২ দিন আগে বীরভূমের নলহাটি থানার নলহাটি-২ ব্লকের শুকরাবাদ থেকে ১৬ জন এবং রামপুর থেকে একজন ওড়িশার বিভিন্ন গ্রামে অ্যালুমিনিয়াম এবং প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ফেরি করতে গেছিলেন। তাদের সঙ্গেই একই জেলার মুরারই-২ ব্লকের পাইকর থানা এলাকার দুজন ব্যক্তিও জিনিস ফেরি করতে যান। মূলত তারা বালেশ্বর-এর কাছে রেমুনা থানার অন্তর্গত আরমালা, বাহাবলপুর, বালগোপালপুর প্রভৃতি গ্রামে অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ফেরি করতেন।

বারা-২ অঞ্চলের তৃণমূল কংগ্রেসের আহ্বায়ক তথা নলহাটি-২ এর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ড. মুহাম্মদ মহসিন মণ্ডল বলেন, বাপ-দাদাদের আমল থেকে প্রায় তিরিশ বছরের অধিক সময় ধরে তারা জিনিসপত্র ফেরি করছেন। আগে কোনওদিন কোনও অসুবিধা হয়নি। সম্প্রতি তাদের কয়েকজনকে ওড়িশায় গ্রামের মধ্যে মারধরও করা হয়। ওড়িশা ছেড়ে যেতে বলা হয়। আবুল হোসেন, আমির হামজা, নাসিম আখতারের মতো ফেরিওয়ালারা বুঝতে পারছেন না, তাদের সঙ্গে কেন এমন আচরণ হচ্ছে? বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশী হিসেবে দেগে দেওয়া হচ্ছে। এনিয়ে বেশ কয়েকদিন আগে তারা পরিবারের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

ওড়িশায় রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এই সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। একই সমস্যা অন্যান্য বিজেপি শাসিত রাজ্যেও ঘটছে বলে জানান রাজ্যসভার সাংসদ তথা পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলার জন্য এরকম অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। বাংলা দখল করতে না পেরে বিজেপি এভাবে প্রতিহিংসা মূলক কাজ করে চলেছে। প্রশাসনিক স্তরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাদের উদ্ধার করার জন্য সর্বতোভাবে কাজ করছে।

উল্লেখ্য, আবুল হোসেন, আমির হামজা, নাসিম আখতার, সোহেল রানা চৌধুরী, জসীমউদ্দীন চৌধুরী, ইশা চৌধুরী, নুরে আলম চৌধুরী, আখতারুজ্জামান মন্ডল, কলিম উদ্দিন শেখ, আবদুল হালিম,  সাহিবুর রহমান, মাজিদ মন্ডল-সহ মোট ১৯ জন এখন ডিটেনশন ক্যাম্পে কি অবস্থায় আছে তা জানতে পারছে না পরিবার-সহ এলাকাবাসী। ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে থাকা নলহাটির শুকরাবাদের সাহেবুর শেখের স্ত্রী খাদিজা বিবি জানান, প্রায় ১২ দিন আগে তার স্বামী সকলের সঙ্গে ওড়িশায় যান। তারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন। সকাল হলেই সাইকেলে করে অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র গ্রামে গ্রামে ফেরি করতেন। ৩০ বছর ধরে এই কাজ করে আসছেন। কোনওদিন কোনও সমস্যা হয়নি। ইদানিং এই সমস্যার কথা ফোনে তার স্বামী তাকে বলতেন। গত পরশুদিন সকালে থানায় যাওয়ার আগেও তার সঙ্গে স্বামীর শেষ কথা হয়েছিল। তারপর থেকেই ফোন বন্ধ। ছোট দুই মেয়ে এবং বৃদ্ধা শ্বশুর নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি।

সাহেবুরের বৃদ্ধ পিতা আবদুর রউফ বলেন, এই ক’দিন আমাদের বাড়িতে রান্না-বান্না কিছুই হয়নি। সবাই দুশ্চিন্তায় আছে। কবে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরবে সেটা আল্লাহই জানে। একইভাবে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক শুকরাবাদের আবদুল হালিমের স্ত্রী সাবিলা বিবির মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। দুই ছোট ছোট ছেলে নিয়ে সে কী করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। তবে আবদুল হালিমের আব্বা সাগর শেখ বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর উপর তার আস্থা আছে। তিনি নিশ্চয়ই কোনও একটা ব্যবস্থা করবেন।