পুবের কলম,ওয়েব ডেস্ক, বসিরহাট:
বুলবুল বিপর্যয় পরবর্তী ত্রাণ পরিষেবাকে
মডেল হিসেবে নজির তৈরির নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।সমস্ত
আধিকারিকদের পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর
নির্দেশ দেন তিনি।
পাশাপাশি আক্রান্ত এলাকাবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেন, কোনরকম প্ররোচনায় পা না দেওয়ার আহ্বান
জানাচ্ছি। আমাদের সরকার সবসময় আপনাদের পাশে আছে। এত বড় বিপর্যয়, অপুরণীয়
ক্ষতি। তবু রাজ্য পর্যাপ্ত ত্রাণ পরিষেবা দেবে। জমির পাকা ধান নষ্ট হয়েছে। ফসলের
ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিপুরণ ছাড়াও চাষীরা শস্য বীমা যথাযথ পাবেন। মাটির ঘর আংশিক
ক্ষতি বলে কিছু হয় না। পুর্ণ ক্ষতিপুরণ পাবেন। শুকনো খাবার চিড়ে গুড় মুড়ি,
বাচ্চাদের মিল্ক পাউডার দেওয়া হবে। সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি
চিকিৎসকদের মেডিকেল টিমও পাঠানো হবে। পরিবার পিছু একটি করে হ্যারিকেন ও ৫ লিটার
কেরোসিন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
তারপর বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর
হেলিকপ্টার বসিরহাট সুইচগেটের কাছে মেরুদন্ডীর মাঠে নামে। সেখানে অবস্হিত
কর্মতীর্থে তিনি খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, জেলা শাসক চৈতালী চক্রবর্তী, জেলা পুলিশ সুপার, কংকর
প্রসাদ বাড়ুই, বসিরহাট জেলা
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবব্রত মুখোপাধ্যায়, মহকুমা শাসক
বিবেক ভাসমে সহ বসিরহাট মহকুমার সমস্ত বিধায়ক, আধিকারিক, জেলা পরিষদ, ব্লক স্তরের
সমস্ত আধিকারিক ও জন প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কাছ থেকে তিনি সমস্ত
রিপোর্ট নেন।সেই সঙ্গে দ্রুত ত্রাণ পরিষেবা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, বুলবুল বিপর্যয় ত্রাণ পরিষেবা যেন
মডেল হয়ে ওঠে। প্রায় একঘণ্টা বৈঠক করেন তিনি। এই মহকুমার ৫ জন মৃত পরিবারের হাতে
দু'লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা করে
চেক তুলে দেন তিনি ।বলেন বুলবুলের তান্ডবের ক্ষতির পরিমাণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
এখনো পর্যন্ত কয়েকশো কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। বসিরহাট মহকুমা সহ তিনজেলায় ১৫
লক্ষ হেক্টর জমির জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। এমনকি পাকা ধানে মই পড়েছে। পাশাপাশি
মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। তার মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তিনজনের নৌকাডুবিতে মৃত্যু। নিখোঁজ
রয়েছেন সাতজন। বসিরহাটে ৫ ও পূর্ব মেদিনীপুরে ১ জন।
পাশাপাশি ডায়রিয়া প্রকোপ বাড়তে পারে বলে
আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
তাই আগেই স্বাস্থ্য দফতরের মেডিকেল টিমকে গ্রামে গ্রামে
গিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেন। বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে দুর্যোগ মোকাবেলায়
এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। অন্যদিকে দুর্গতদের পাশে থাকতে কেউ যদি সাহায্য হাত
বাড়ান সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী দফতরের জেলাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করার আবেদন জানান
তিনি। ত্রাণ বণ্টন নিয়ে যাতে কোনো রাজনৈতিক না করা হয় সেবিষয়টি নিয়েও তিনি সবাইকে
সতর্ক করেন।
পাশাপাশি জানান, সাড়ে ছ লক্ষ জলের পাউচ দেওয়া হয়েছে।
আরো বিষুদ্ধ জল দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।
পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সামনে মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা হতে চলেছে তাই
পরীক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাতে
হ্যারিকেন ও কেরোসিনের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন।
ধানের জমিতে ঢুকে পড়া নোনা জল সরাতে পাম্পের ব্যবস্থা
করার নির্দেশ দেন। ভাঙন রুখতে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলিতে ম্যানগ্রোভ গাছ নতুন করে
লাগানো হবে। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে বুলবুল বিপর্যয় নিয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেবেন
বলে জানান। পাশাপাশি কেন্দ্রকে আবেদন জানিয়েছেন , একটি প্রতিনিধি
দল এসে যাতে দুর্গত এলাকায় ঘুরে দেখেন। তারাও চোখে দেখলে অনুমান করতে পারবেন
ক্ষতির পরিমাণ কতটা ভয়ানক।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন