কেরলের এতিমখানায় শিশুপাচার রহস্য
প্রায় বছর পাঁচেক আগে সারাদেশে এমনকী বিদেশেও একটি খবরে ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা দেয়। খবরটি ছিল– পশ্চিমবাংলা– ঝাড়খণ্ড ও বিহারের ৫৭৯ জন শিশু ও বালককে ট্রেনে করে ‘পাচার করা’ হচ্ছিল। তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল দক্ষিণ ভারতের কেরলে। শেষ সময় কয়েকজন যাত্রীর কাছ থেকে খবর পেয়ে কেরলের এক রেলস্টেশনে কয়েকটি বগি ভর্তি এইসব বাচ্চাদের পুলিশ ‘উদ্ধার করে’। সেই সময় সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলের হেডলাইনে নানারকম ‘তথ্য’ প্রচার করা হয়। এই বাচ্চাদের গালফ বা উপসাগরীয় দেশে পাচার করার জন্য– তাদের শিশুশ্রমিক হিসাবে কাজে লাগানোর জন্য কিংবা ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োগ করার উদ্দেশ্যে নাকি পাচার করা হচ্ছিল। কয়েকটি সংবাদপত্র এও লেখে যে এদের কিডনি বা অন্য শারীরিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বের করে অন্যর শরীরে প্রতিস্থাপন করার জন্যও হয়তো এই বাচ্চাদের ব্যবহার করা হতে পারে। আর সেইজন্যই এই পাচার প্রক্রিয়া। একেবারে হইহই-রইরই কাণ্ড। শেষপর্যন্ত সিবিআই তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয়। দু’একদিন পরে অবশ্য বলা হয়– কেরলের ২টি এতিমখানায় এই বাচ্চাদের পাচারের জন্য নিয়ে আসা হচ্ছিল।
তবে রক্ষা– সম্প্রতি সিবিআই কোচির এক আদালতে রিপোর্ট পেশ করে বলেছে এই ‘উদ্ধার-কাণ্ডের’ সঙ্গে পাচারের কোনও সম্পর্ক নেই– ছিল না। কেরলের ওই দুই এতিমখানা কাঝিকোড বা কালিকট-এর মুককম মুসলিম অরফানএজ এবং মালাপ্পুরামের আনোয়ার-উল এতিমখানা সিবিআই-এর এই তদন্তের ফলাফলকে স্বাগত জানিয়েছে। সিবিআই সম্প্রতি এর্নাকুলামের এক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তাদের এই তদন্ত রিপোর্ট পেশ করেছে। কেরলের ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ যারা এখন রাজ্যের ইউডিএফ জোটের শরিক– তারা বলেছে তাদের বক্তব্যকেই সিবিআই মান্যতা দিল। উল্লেখ্য– মুসলিম লিগের কয়েকজন নেতা এতিমখানাগুলির পরিচালক দাতব্য ট্রাস্টগুলির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল। আর সেইজন্য তাদেরকেও বিপক্ষের কড়া সমালোচনার মধ্যে পড়তে হয়। কেরলের ‘উদ্ধার’ হওয়া ক্লান্ত বিধ্বস্ত ৪৬৬ জন বাচ্চা (প্রথম ব্যাচের) পটনা-এর্নাকুলাম এক্সপ্রেস থেকে পালাক্কাড রেলস্টেশনে ২০১৪ সালের ২৪ মে অবতরণ করা মাত্রই শোরগোল শুরু হয়। এই বাচ্চাদের বয়স ছিল ৫-১৩। এই নাবালকরা বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। তাদের সঙ্গে ছিল সাত-আটজন তত্ত্বাবধায়ক ও চলনদার। আর এখান থেকেই বাচ্চা পাচারের এই কাহিনি শুরু।
মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়, এই বাচ্চাদের ঠাসা ভিড় সম্পন্ন ৩টি কামরায় ২৭০০ কিমি সফরের জন্য তোলা হয়েছিল। পথে তারা বেশ কয়েক ঘণ্টা খাবার ও পানি পায়নি। এই বাচ্চাদের অনেকেরই নাকি টিকিট ছিল না।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই বাচ্চাদের একটি উদ্ধারকেন্দ্রে নিয়ে যায়। আর ওই বাচ্চাদের সঙ্গে থাকা প্রাপ্তবয়স্ক তত্ত্বাবধায়কদের গ্রেফতার করে। শিশু পাচারের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে জিজ্ঞাসাবাদ চলতে থাকে। সন্দেহ বৃদ্ধি পায় যখন ২ দিন পর আরও ১১৩ জন বাচ্চার দ্বিতীয় ব্যাচটি ওই একই স্টেশনে আসে। তারা গুয়াহাটি-তিরুবনন্তপুরম এক্সপ্রেসে করে ওই একই স্টেশনে অবতরণ করে।
এই শিশু ও বালকরা মূলত ছিল অসম ও পশ্চিমবঙ্গের। যখন অফিসাররা জানতে পারলেন যে, এই ২ ব্যাচের বাচ্চাদেরও মুককম মুসলিম এতিমখানা এবং আনোয়ার-উল অরফানএজে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আর বাচ্চাদের অনেকেই দরিদ্র হলেও এতিম নয়– তখন ওই ২ এতিমখানাও সন্দেহের আওতায় আসে। আর যে সমস্ত মুসলিম দাতব্য সংস্থার সঙ্গে এই ২ এতিমখানা জড়িত ছিল তারাও সাম্প্রদায়িক ও বিদ্বেষমূলক সন্দেহের আওতায় পড়ে। শেষপর্যন্ত ৩৪৬ জন বালক এবং ২৩৩ জন বালিকা যারা এসেছিল পশ্চিমবাংলার মালদা, ঝাড়খণ্ডের গোডডা এবং বিহারের ভাগলপুর ও বাংকা থেকে তাদেরকে ঘরে ফিরিয়ে স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আর ৮ জন তত্ত্বাবধায়ক ও চলনদার যারা ছিল পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যগুলির বাসিন্দা তাদের গ্রেফতার করা হয়। তবে কিছুদিন পর অবশ্য তাদের জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়।
রেলওয়ে পুলিশ ওই ৮ জন চলনদার ও ওই ২ এতিমখানার বিরুদ্ধে শিশুপাচারের মামলা দায়ের করে। কেরলের চাইল্ডস রাইটস কমিশন-এর পক্ষ থেকে এই মামলা রুজু করা হয়েছিল। মামলাটি খুব শীঘ্রই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের হাতে অর্পণ করা হয়। পরে কেরলা হাইকোর্টের নির্দেশে ‘শিশুপাচার’-এর এই মামলাটি সিবিআই-এর হাতে দেওয়া হয়।
চলতি বছরের ১৭ অক্টোবর সিবিআই কোচি শহরের আদালতকে একটি রিপোর্ট পেশ করে। তারা জানায় যে– এতিমখানাগুলি দরিদ্র শিশু ও বালক-বালিকাদের দেশের অন্য প্রান্ত থেকে এনে এতিমখানায় ভর্তি করছিল– তার মধ্যে অবৈধ বা বেআইনি কিছু নেই। ওই এতিমখানাগুলি এই বাচ্চাদের বিনামূল্যে খাদ্য– পোশাক– শিক্ষা এবং থাকার ব্যবস্থা করেছিল। সিবিআই ৮ অভিযুক্ত এবং এতিমখানাগুলির ব্যবস্থাপকদের বিরুদ্ধে তোলা সমস্ত অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়।
.....শেষাংশ আগামীকাল
প্রায় বছর পাঁচেক আগে সারাদেশে এমনকী বিদেশেও একটি খবরে ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা দেয়। খবরটি ছিল– পশ্চিমবাংলা– ঝাড়খণ্ড ও বিহারের ৫৭৯ জন শিশু ও বালককে ট্রেনে করে ‘পাচার করা’ হচ্ছিল। তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল দক্ষিণ ভারতের কেরলে। শেষ সময় কয়েকজন যাত্রীর কাছ থেকে খবর পেয়ে কেরলের এক রেলস্টেশনে কয়েকটি বগি ভর্তি এইসব বাচ্চাদের পুলিশ ‘উদ্ধার করে’। সেই সময় সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলের হেডলাইনে নানারকম ‘তথ্য’ প্রচার করা হয়। এই বাচ্চাদের গালফ বা উপসাগরীয় দেশে পাচার করার জন্য– তাদের শিশুশ্রমিক হিসাবে কাজে লাগানোর জন্য কিংবা ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োগ করার উদ্দেশ্যে নাকি পাচার করা হচ্ছিল। কয়েকটি সংবাদপত্র এও লেখে যে এদের কিডনি বা অন্য শারীরিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বের করে অন্যর শরীরে প্রতিস্থাপন করার জন্যও হয়তো এই বাচ্চাদের ব্যবহার করা হতে পারে। আর সেইজন্যই এই পাচার প্রক্রিয়া। একেবারে হইহই-রইরই কাণ্ড। শেষপর্যন্ত সিবিআই তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয়। দু’একদিন পরে অবশ্য বলা হয়– কেরলের ২টি এতিমখানায় এই বাচ্চাদের পাচারের জন্য নিয়ে আসা হচ্ছিল।
তবে রক্ষা– সম্প্রতি সিবিআই কোচির এক আদালতে রিপোর্ট পেশ করে বলেছে এই ‘উদ্ধার-কাণ্ডের’ সঙ্গে পাচারের কোনও সম্পর্ক নেই– ছিল না। কেরলের ওই দুই এতিমখানা কাঝিকোড বা কালিকট-এর মুককম মুসলিম অরফানএজ এবং মালাপ্পুরামের আনোয়ার-উল এতিমখানা সিবিআই-এর এই তদন্তের ফলাফলকে স্বাগত জানিয়েছে। সিবিআই সম্প্রতি এর্নাকুলামের এক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তাদের এই তদন্ত রিপোর্ট পেশ করেছে। কেরলের ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ যারা এখন রাজ্যের ইউডিএফ জোটের শরিক– তারা বলেছে তাদের বক্তব্যকেই সিবিআই মান্যতা দিল। উল্লেখ্য– মুসলিম লিগের কয়েকজন নেতা এতিমখানাগুলির পরিচালক দাতব্য ট্রাস্টগুলির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল। আর সেইজন্য তাদেরকেও বিপক্ষের কড়া সমালোচনার মধ্যে পড়তে হয়। কেরলের ‘উদ্ধার’ হওয়া ক্লান্ত বিধ্বস্ত ৪৬৬ জন বাচ্চা (প্রথম ব্যাচের) পটনা-এর্নাকুলাম এক্সপ্রেস থেকে পালাক্কাড রেলস্টেশনে ২০১৪ সালের ২৪ মে অবতরণ করা মাত্রই শোরগোল শুরু হয়। এই বাচ্চাদের বয়স ছিল ৫-১৩। এই নাবালকরা বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। তাদের সঙ্গে ছিল সাত-আটজন তত্ত্বাবধায়ক ও চলনদার। আর এখান থেকেই বাচ্চা পাচারের এই কাহিনি শুরু।
মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়, এই বাচ্চাদের ঠাসা ভিড় সম্পন্ন ৩টি কামরায় ২৭০০ কিমি সফরের জন্য তোলা হয়েছিল। পথে তারা বেশ কয়েক ঘণ্টা খাবার ও পানি পায়নি। এই বাচ্চাদের অনেকেরই নাকি টিকিট ছিল না।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই বাচ্চাদের একটি উদ্ধারকেন্দ্রে নিয়ে যায়। আর ওই বাচ্চাদের সঙ্গে থাকা প্রাপ্তবয়স্ক তত্ত্বাবধায়কদের গ্রেফতার করে। শিশু পাচারের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে জিজ্ঞাসাবাদ চলতে থাকে। সন্দেহ বৃদ্ধি পায় যখন ২ দিন পর আরও ১১৩ জন বাচ্চার দ্বিতীয় ব্যাচটি ওই একই স্টেশনে আসে। তারা গুয়াহাটি-তিরুবনন্তপুরম এক্সপ্রেসে করে ওই একই স্টেশনে অবতরণ করে।
এই শিশু ও বালকরা মূলত ছিল অসম ও পশ্চিমবঙ্গের। যখন অফিসাররা জানতে পারলেন যে, এই ২ ব্যাচের বাচ্চাদেরও মুককম মুসলিম এতিমখানা এবং আনোয়ার-উল অরফানএজে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আর বাচ্চাদের অনেকেই দরিদ্র হলেও এতিম নয়– তখন ওই ২ এতিমখানাও সন্দেহের আওতায় আসে। আর যে সমস্ত মুসলিম দাতব্য সংস্থার সঙ্গে এই ২ এতিমখানা জড়িত ছিল তারাও সাম্প্রদায়িক ও বিদ্বেষমূলক সন্দেহের আওতায় পড়ে। শেষপর্যন্ত ৩৪৬ জন বালক এবং ২৩৩ জন বালিকা যারা এসেছিল পশ্চিমবাংলার মালদা, ঝাড়খণ্ডের গোডডা এবং বিহারের ভাগলপুর ও বাংকা থেকে তাদেরকে ঘরে ফিরিয়ে স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আর ৮ জন তত্ত্বাবধায়ক ও চলনদার যারা ছিল পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যগুলির বাসিন্দা তাদের গ্রেফতার করা হয়। তবে কিছুদিন পর অবশ্য তাদের জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়।
রেলওয়ে পুলিশ ওই ৮ জন চলনদার ও ওই ২ এতিমখানার বিরুদ্ধে শিশুপাচারের মামলা দায়ের করে। কেরলের চাইল্ডস রাইটস কমিশন-এর পক্ষ থেকে এই মামলা রুজু করা হয়েছিল। মামলাটি খুব শীঘ্রই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের হাতে অর্পণ করা হয়। পরে কেরলা হাইকোর্টের নির্দেশে ‘শিশুপাচার’-এর এই মামলাটি সিবিআই-এর হাতে দেওয়া হয়।
চলতি বছরের ১৭ অক্টোবর সিবিআই কোচি শহরের আদালতকে একটি রিপোর্ট পেশ করে। তারা জানায় যে– এতিমখানাগুলি দরিদ্র শিশু ও বালক-বালিকাদের দেশের অন্য প্রান্ত থেকে এনে এতিমখানায় ভর্তি করছিল– তার মধ্যে অবৈধ বা বেআইনি কিছু নেই। ওই এতিমখানাগুলি এই বাচ্চাদের বিনামূল্যে খাদ্য– পোশাক– শিক্ষা এবং থাকার ব্যবস্থা করেছিল। সিবিআই ৮ অভিযুক্ত এবং এতিমখানাগুলির ব্যবস্থাপকদের বিরুদ্ধে তোলা সমস্ত অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়।
.....শেষাংশ আগামীকাল
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন