এম এ হাকিম, বনগাঁ : উত্তর ২৪ পরগণার গোপালনগর থানা এলাকার পানপাড়ায় বিজেপি’র মণ্ডল সভাপতিকে মারধর করার অভিযোগ উঠল বিজেপি’রই একাংশের লোকজনের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার ওই ঘটনার জেরে গোপালনগর-১ নম্বর মণ্ডলের সভাপতি বিদেশ দাসকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর নাকে বেশ কয়েকটি সেলাই পড়েছে বলে আহত বিদেশ বাবু জানিয়েছেন।
আহত বিজেপি নেতা বিদেশ দাস বুধবার বলেন, ‘আকাইপুর এলাকার পানপাড়া বুথে ‘সেবা সপ্তাহ’ কর্মসূচিতে মিটিং করে ফেরার পথে পানপাড়া চৌনাথা এলাকায় আক্রান্ত হয়েছি। বিপ্লব সরকার নামে বিজেপি’র এক বহিষ্কৃত নেতার নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত গাড়ি থামিয়ে আমার উপরে হামলা চালিয়েছে। ওই ঘটনায় তৃণমূল আশ্রিত সমাজবিরোধীরাও জড়িত রয়েছে। বিপ্লব সরকারকে তৃণমূলের সঙ্গে আর্থিক যোগসাজশের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে। গোপালনগর থানায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।’ হামলাকারীরা ৩০ থেকে ৩৫ জন ছিল এবং তাঁকে রড, হাতুড়ি, শাবল ইত্যাদি দিয়ে মারধর করা হয় বলেও বিজেপি নেতা বিদেশ দাসের দাবি।
যদিও ওই অভিযোগ, সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপি সদস্য অভিযুক্ত বিপ্লব সরকার। তিনি বলেন, ‘আমি ওই বিষয়ে জড়িত নই। আমাকে অন্যায়ভাবে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমিই এই এলাকার বিজেপি’র আদি প্রতিষ্ঠাতা। এদিন মিটিং শেষে বিদেশ দাস বিজেপি’র প্রতিবাদী মহিলাদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করলে স্থানীয় মানুষজনই তাঁকে মারধর করেছে। অন্ধকারের মধ্যে কে বা কারা মারধর করেছে জানি না।’ ‘ওই ঘটনায় বিজেপির মণ্ডল সভাপতির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে’ পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপি সদস্য বিপ্লব সরকার জানান।
বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপি সদস্য অভিযুক্ত বিপ্লব সরকার অবশ্য ওই ঘটনাকে বিজেপি’র ‘গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব’ বলতে চাননি। তিনি বলেন, পরিবার বড় হলে মতানৈক্য হতে পারে। সেটাই হয়েছে। অভিভাবক হিসেবে বিদেশ দাসের উচিত ছিল মতানৈক্য দূর করা। কিন্তু তিনি তা করেননি।’
সুপ্রিয়া সরকার নামে স্থানীয় এক বিজেপি সমর্থক জানান, ‘একটা বাড়িতে বিজেপি’র মিটিং হচ্ছিল। অন্যদের পাশাপাশি আমরা তিনজন মহিলা সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে বাজে ভাষায় কথাবার্তা বলছিলেন, বিদেশ বাবু। আমরা তার প্রতিবাদ জানালে তিনি আমাদেরকে মিটিং থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। আমরা পরে তাঁকে জানাই আমরা সদস্য হওয়ার জন্য দুইশো করে টাকা দিয়েছি। আপনারা আমাদেরকে বের করে দিলেন, তাহলে আমাদের টাকা ফেরত দিন, নইলে সদস্য কার্ড দিন। এসময় উনি আমাদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করেন এবং শাড়ির আঁচল ধরে টানাটানি করেন। আমাদের চিৎকার শুনে গ্রামবাসীরা গিয়ে ওনাকে মারধর করেছে।’ অন্ধকারের মধ্যে কে বা কারা মারধর করেছে তা জানি না’ বলেও সুপ্রিয়া দেবী জানান।
ওই ঘটনা প্রসঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর ও বনগাঁর সাবেক বিধায়ক গোপাল শেঠ বলেন, এটি বিজেপির গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের ফল। ওঁদের দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল। মারধরের ঘটনায় তৃণমূলের কেউ জড়িত নয়। এটি জেলা বিজেপি নেতা শঙ্কর চ্যাটার্জি এবং বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের মধ্যে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের ফল বলেও গোপাল বাবু মন্তব্য করেছেন।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি গত ২৯ আগস্ট এবং ৬ সেপ্টেম্বর দু’দফায় জেলা বিজেপি সভাপতি শঙ্কর চ্যাটার্জির বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ জানিয়ে বনগাঁ কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের কাছে সোচ্চার হয়েছেন বিজেপি’রই একাংশের নেতা-কর্মী। তাঁর হাতে স্মারকলিপিও তুলে দিয়েছেন। এমনকি গত ৬ সেপ্টেম্বর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের ঠাকুরনগরস্থিত বাসভবন এলাকায় বিজেপি নেতা শঙ্কর চ্যাটার্জির অপসারণের দাবিতে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড বহন করে স্লোগান দিয়ে তাঁর অপসারণের দাবি জানানোসহ কুশপুতল পোড়ানো হয়। সেই ঘটনার জের না মিটতেই এবার ফের বিজেপি’র অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে চলে এল এবং এবার তা সহিংস সংঘর্ষের রূপ নিল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন