দেবশ্রী মজুমদার, শান্তি নিকেতন, ৪ অগাস্ট: বিশ্ব ভারতীতে ফের বেনিয়মের বিতর্ক। সেই বিতর্ক যেমন বিশ্ব ভারতীর অন্দরে, তেমনি বাহিরে! সম্প্রতি এক ভবনের বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ নিয়েই এই বিতর্কের ঝড়।
এব্যাপারে জনৈকা আশা চক্রবর্তী নামে একজনের এক পোস্টের পর তোলপাড় হয় সোশ্যাল মিডিয়া। এব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩১ অগাস্ট দর্শন ও তুলনা মূলক ধর্ম বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আশা মুখোপাধ্যায়ের কর্ম সচিবের পদ থেকে অবসর গ্রহণের পর, নিয়ম মাফিক ওই বিভাগের সব থেকে বেশী সিনিয়র অধ্যাপক মহঃ সিরাজুল ইসলামের কাছেই দায়িত্ব যাওয়ার কথা। অধ্যাপকদের একাংশের দাবি, বিশ্ব ভারতী স্ট্যাটিউট এবং এ্যাক্ট অনুযায়ী সিরাজুল সাহেবকে অবশ্যই বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু তা না হয়ে ঘুর পথে দায়িত্ব দেওয়া হলো তুলনা মূলক কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন এ্যাসোসিয়েট প্রফেসরের কাছে। কিন্তু কেন? এখানেই প্রশ্ন উঠেছে গোটা বিষয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে।
জানা গেছে, আশা মুখোপাধ্যায়ের অবসর গ্রহণের পর বিভাগীয় প্রধান হিসেবে বিদ্যাভবনের প্রিন্সিপাল সর্বজিৎ সেনগুপ্তকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত ৩ সেপ্টেম্বর ফের একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। সেখানেই অনুপ বর্মণকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁর ঝুলিতে এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে আছে ৭ বৎসরের অভিজ্ঞতা। যেখানে প্রফেসর হিসেবে সিরাজুল ইসলামের অভিজ্ঞতা ১১ বছর। জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে অধ্যাপক হিসেবে বিশ্ব ভারতীতে বিভিন্ন স্তরে অধ্যাপনার কাজ করছেন সিরাজুল সাহেব। শুধু তাই নয়, ২০১২- ১৫ পর্যন্ত বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বহু বইয়ের প্রণেতা এবং তাঁর অধীনে অনেকেই পি এইচ ডি করেছেন, সেটা বিশ্ব ভারতী ওয়েবসাইট ঘাঁটলেই পাওয়া যায়।
এব্যাপারে বৃহস্পতিবার রাতে মহঃ সিরাজুল ইসলামকে প্রশ্ন করা হয়, বিভাগীয় প্রধান হতে তাঁর কোন অনীহা ছিল কিনা? বা এই মর্মে লিখিত কিছু তিনি বিশ্ব বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন কিনা?
তার উত্তরে সিরাজুল সাহেব কিছু বলতে চান নি। বার বার ফোন করাতে তিনি বলেন, না, না, আমার ইচ্ছা নিয়ে কেউ আমার কাছে কিছু জানতে চান নি। তাই আমার কাছ থেকে লিখিত কিছু পাঠানোর প্রশ্ন ওঠে না। বলে ফোন কেটে দেন। ফের শুক্রবার তাঁকে ফোনে ধরা হয়। জানতে চাওয়া হয়, বিভাগে সবথেকে বেশি একজন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অধ্যাপক থাকা সত্ত্বেও, তুলনা মূলক কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর দায়িত্ব পেলেন বিভাগীয় প্রধান হিসেবে, কিন্তু আপনি পেলেন না কেন? এই প্রশ্ন তো ঘুরপাক খাচ্ছে আশ্রমের অলিন্দে? অভিজ্ঞতার নিরিখে, তাঁর বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার কথা? এক্ষেত্রে তাঁর অভিমত কী?
উত্তরে সিরাজুল ইসলাম জানান, নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব নিতে আমার কোন আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু উপাচার্য আমাদের পরিবারের কর্তা। হয়তো কোন বৃহত্তর স্বার্থে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকবেন। এতে যদি বিশ্ব ভারতীর মঙ্গল হয়, ক্ষতি কী?
এব্যাপারে বিশ্ব ভারতীর তরফে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কোন স্পষ্ট আলোকপাত হবে এই আশায় বিশ্বভারতীর জন সংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকারকে কয়েকবার ফোন করা হয়। তা সত্ত্বেও তিনি ফোন ধরেননি। তাঁকে একই প্রশ্ন করে মেসেজ করা হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায় নি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন