পুবের কলম, নয়াদিল্লিঃ আমাদের দেশে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির কথা বলা কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এ সম্পর্কিত কোনও কিছু তুলে ধরা, প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। অথচ ভারতবর্ষ এখনও একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এখনও ভারতের সংবিধানে ব্যক্তিস্বাধীনতা অধিকার এক মৌলিক অধিকার হিসাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এখনও কেউ তা সংবিধান থেকে মুছে দেয়নি। কিন্তু কার্যত আমাদের এই দেশকে একটি মহল ‘ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র’ হিসাবে গড়ে তুলতে চাইছে। এই দেশে মুসলিম-খ্রিস্টান এবং দলিতদের নির্যাতন ছাড়াও হেয় করার জন্য এই বিশেষ মহলটি উঠে-পড়ে লেগেছে।
সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনায় তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যেমন, অসমে একটি টিভি চ্যানেল হিন্দু-মুসলিমের সম্প্রীতি প্রদর্শন করে। একটি হিন্দু তরুণীর একটি মুসলিম ছেলে ও মুসলিম মহল্লা ভালো ব্যবহার করে। আর যা কোথায়! প্রয়োগ করা হল সাম্প্রতিক শব্দ-বোমা ‘লাভ জিহাদ’। পুলিশ সিরিয়ালটির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। যদিও এই অধিকার পুলিশের ওপর খুব একটা বর্তায় না। মানুষ তো কোন ছাড়, বাঘ-সিংহকেও সাম্প্রদায়িকতায় জড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। পৃথিবীর সমস্ত চিড়িয়াখানার মতো গুয়াহাটির চিড়িয়াখানায়ও বাঘ-সিংহকে খাবার জন্য গরুর গোশ্ত সরবরাহ করা হত। এখন ওই বিশেষ মহলটি দাবি তুলেছে, বাঘ সিংঘকেও গরুর গোশ্ত দেওয়া যাবে না। এই নিয়ে চিড়িয়াখানার সামনে বিক্ষোভও হয়েছে। তবে সুন্দরবনে, ডুয়ার্সের চা-বাগানে, জঙ্গলঘেরা গ্রামগুলিতে অনেক সময় বাঘ ও চিতাবাঘ গৃহস্থের পালিত গরুগুলিকে হত্যা করে খেয়ে ফেলে। শোনা যাচ্ছে সেটাও বন্ধ করার জন্য বাঘেদের বলা হবে, ‘আপ রুচি খানা’ আর চলবে না। আর চললেও খাবারের তালিকা থেকে গরুকে অবশ্যই বাদ দিতে হবে। কে জানে বাঘ ও চিতা তাদের কথা মেনে নেবে কি না!
এই ধরনের শত শত নজির উল্লেখ করা যেতে পারে। এরমধ্যে এখন সরগরম রয়েছে ‘তানিশক্’ জুয়েলারির একটি বিজ্ঞাপন। এই বিজ্ঞাপনে দেখানো হয়েছে, একটি মুসলিম পরিবারে বধূ হয়ে এসেছে এক হিন্দু মহিলা। আর যায় কোথায়! উগ্র হিন্দুত্ববাদী মহলগুলি ক্যাম্পেন শুরু করল তানিশক্-এ যেন কোনও হিন্দু কেনাকাটা না করে। হ্যাশট্যাগ থেকে শুরু করে টিভি সব কিছুর মাধ্যমেই তারা আক্রমণ শানাল।
তানিশক্-এর মালিকানা আদতে ভারতের এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায় পার্শিদের। অগত্যা তানিশক্ এই সুন্দর বিজ্ঞাপনটি প্রাণের ভয়ে কিংবা বলা যায় লোকসানের আতঙ্কে প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছে। গুজরাতে তাদের শোরুমগুলিতে ঢুকে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে ক্ষমা চাইতে এবং বিজ্ঞাপনটি তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিতে বাধ্য করে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন