আবদুল ওদুদ
বাদ জুম্মা বাগনানের হাল্যানে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হল ড. আবদুল মুজিদ সাহেবের। মওলানা আজাদ অ্যাকাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান এবং বাংলায় সংখ্যালঘুদের শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ ড. আবদুল মুজিদ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি ওয়া রাজিউন)। মৃত্যর সময় বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। তিনি রেখে গেছেন স্ত্রী এবং একমাত্র কন্যাকে। তাঁর হাতে গড়া আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মওলানা আজাদ অ্যাকাডেমিতেই ইন্তেকাল করেন তিনি।
জনাব আবদুল মুজিদ পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদে চাকরি করতেন। কিন্তু ৮০-র দশক থেকেই সেই সময় পশ্চিমবাংলার মুসলিমদের মধ্যে বিদ্যমান শিক্ষার পশ্চাৎপদতা দূর করার জন্য তিনি প্রচেষ্টা শুরু করেন। এবং ধীরে ধীরে হাল্যানে মওলানা আজাদ অ্যাকাডেমি গড়ে তোলেন। জনাব আবদুল মুজিদের শিক্ষা প্রসারের এই প্রচেষ্টায় প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন শিল্পপতি আলহাজ্ব মোস্তাক হোসেন এবং জনাব শাজাহান সাহেব। ড. আবদুল মুজিদ রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছেলেদের জন্য ২০০৪ সালে গ্রামের বাড়ি হাওড়ার হাল্যানে মওলানা আজাদ অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন।
সংখ্যালঘু পরিবারের ছাত্রদের ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, অধ্যাপক হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তিনি। তাঁর স্বপ্নকে অনেকটা বাস্তবায়ন করে কলকাতা সহ বিভিন্ন রাজ্য, এমনকী বিভিন্ন দেশেও কর্মরত রয়েছেন মওলানা আজাদ অ্যাকাডেমির ছাত্ররা। নব্বইয়ের দশকে বাংলায় আল আমিন মিশন সংখ্যালঘুদের নতুন করে পথ দেখাতে যাত্রা শুরু করে। এরপর তিনিই দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি আবাসিক মিশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ২০০৪ সালে তৈরি হওয়া এই মিশনটি আবদুল মুজিদ সাহেবের হাত ধরে যাত্রা শুরু করার পর আর পেছনের দিকে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা জয়েন্টের মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিশেষ সাফল্য পেয়েছে তাঁর পরিচালনায়। জনাব মুজিদ সাহেবের উদ্যোগে বহু দুস্থ মেধাবী ছাত্রছাত্রী স্কলারশিপ পেয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করেছে।
ড. আবদুল মুজিদ সাহেবের ইন্তেকালে শোকজ্ঞাপন করেছেন ‘পুবের কলম পত্রিকা’র সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান। তিনি বলেন, রাজ্যের সংখ্যালঘুরা হারাল এক শিক্ষাদরদি মানুষকে। আর ‘পুবের কলম’ হারাল একজন প্রকৃত শুভানুধ্যায়ীকে। তিনি পুবের কলমের প্রচার-প্রসারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। ইমরান বলেন, আল্লাহ্ তাঁর পরিবারকে ধৈর্য ধারণের তৌফিক দিন এবং আবদুল মুজিদ সাহেবকে জান্নাতুল ফিরদৌস দান করুন। বাংলায় যখন সংখ্যালঘুদের শিক্ষার জন্য আবাসিক মিশন গড়ে উঠতে শুরু করেছিল, তখন আবদুল মুজিদ ছিলেন প্রথম সারিতে। তাঁর মৃত্যুতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষা আন্দোলন অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হল বলে ইমরান মন্তব্য করেন।
ফ্রন্টপেজ অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, আমরা হারালাম এক অভিভাবককে। তিনি সবসময় আমাদের সুপরামর্শ দিয়ে এসেছেন। রাজ্য মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি ড. আবু তাহের কামরুদ্দিন বলেন, বাংলার সংখ্যালঘুরা একজন শিক্ষাবিদকে হারাল। তিনি মাদ্রাসা বোর্ডে কর্মরত ছিলেন, সেই সুবাদে নানা পরামর্শ দিয়েছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদান ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়।
আল আমীন মিশনের সম্পাদক জনাব নুরুল ইসলাম বলেন, আল আমীন মিশনের পরই তিনি সংখ্যালঘুদের শিক্ষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি ছিলেন আবাসিক মিশন আন্দোলনের অন্যতম কাণ্ডারি। আল আমীন মিশনের পক্ষ থেকে তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন তিনি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন