পুবের কলম আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ নিরীহ আফগানদের বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যার দায়ে অবশেষে চাপে পড়ে পদক্ষেপ করতে বাধ্য হল অস্ট্রেলিয়া সরকার। ৩৯জন শিশু, কৃষক ও বন্দিকে বিনা প্ররোচনায় গুলি করে খুনের দায়ে আফগানিস্তানে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার ১৩ সেনা জওয়ানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জানা গিয়েছে, মানুষ খুনের প্রশিক্ষণ দিতেই তাদেরকে অকারণে নিরীহ মানুষদেরকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ান এলিট ফোর্সের কমান্ডাররা। সম্প্রতি এই রোমহর্ষক তথ্য ফাঁসের পর ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। অন্য সব বিষয়ের মতো এক্ষেত্রেও কড়া প্রতিক্রিয়া দেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। তিনি বলেন, যেটুকু প্রকাশ্যে এসেছে তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। আফগানিস্তানে ১৯ বছরের যুদ্ধে এর থেকে কয়েক হাজার গুণ হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে পশ্চিমা ন্যাটোবাহিনী। কথিত সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে অগণিত নিরীহ আফগানকে হত্যা করা হয়েছে, যার কোনও হিসেব নেই।
৪ বছর ধরে চালানো অন্তর্তদন্ত রিপোর্ট গত সপ্তাহে জমা পড়ে। যাতে বলা হয়েছে, অসামরিক মানুষ ও বন্দিদেরকে হত্যা করে যুদ্ধাপরাধ চালিয়েছে অস্ট্রেলীয় এলিট ফোর্স। তাই অপরাধী ১৯ জওয়ানকে অস্ট্রেলিয়ায় ফেরত পাঠিয়ে বিচারের মুখে সোপর্দ করা এবং ক্ষতিপূরণের প্রস্তাবও দেওয়া হয়। ২০০১ সালের শেষদিকে চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধে আমেরিকা-ইউরোপ সহ ন্যাটোর শরিক দেশগুলো সবাই আফগানিস্তানে সেনা মোতায়েন করে। অস্ট্রেলিয়াও ২০০২ সালে ২৬ হাজার সেনা পাঠায়। এখনও তাদের হাজার দেড়েক সেনা রয়েছে কাবুলে। শুক্রবার অস্ট্রেলীয় সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল রিক বার বলেন, অভিযুক্ত ১৩ জওয়ানকে প্রশাসনিক পদক্ষেপের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। দু-সপ্তাহের মধ্যে তাদেরকে জবাবদিহির আপীল করতে হবে। না-হলে ছাঁটাই বা বরখাস্ত করা হবে।
আরেক শীর্ষ সেনাকর্তা অ্যাঙ্গুস ক্যাম্পবেল বলেছেন, ২০০৫-২০১৬ সালের মধ্যে ২৩টা ভিন্ন ঘটনায় মোট ৩৯জন নিরীহ আফগানকে হত্যার অভিযোগ এবং তথ্য-প্রমাণ মিলেছে। যুদ্ধের পরিধির বাইরে গিয়ে এসব হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। যা সামরিক আইনের লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হয়েছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিন্ডা রেনল্ডস বলেছেন, অপরাধ প্রমাণ হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে অভিযুক্ত জওয়ানরা। প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট অস্ট্রেলিয়ার জন্য মানহানিকর হবে। তাই অনেকের মতে, বিষয়টিকে অকারণে জটিল করে দেখাতে চাইছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। যাতে দীর্ঘকাল বিষয়টি ঝুলে থাকে। আর সেই ফাঁকে হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত সেনারা যাতে প্রকৃত অর্থে সাজা না পায়, পরোক্ষে সেই প্রয়াসই চালাচ্ছে অস্ট্রেলীয় সরকার।
জানা গিয়েছে, ৪ বছর ধরে তদন্ত চালাতে গিয়ে ৪২৩জনের সাক্ষ্য, ২০ হাজারেরও বেশি নথি এবং ২৫ হাজার ছবি ও ভিডিয়ো নিয়ে অনেক যাচাই-বাছাইয়ের পর ৫০০ পাতারও বেশি দীর্ঘ রিপোর্ট তৈরি করেছিল অস্ট্রেলীয় সামরিক বিভাগ। তারপরেও নানাভাবে বিষয়টিকে নিয়ে টালবাহানার চেষ্টা হচ্ছে। তবে শেষমেশ বড়জোর ১৩জন জওয়ানের চাকরি যেতে পারে কিংবা কিছু জরিমানা তারা দিতে পারে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য হল, মানুষ খুনে হাত পাকাতে এভাবে শিশু, জমিতে কর্মরত কৃষক থেকে শুরু করে অসহায় জেলবন্দি ৩৯ জনকে নির্বিচারে যে খুন করা হল? তার ক্ষতিপূরণ কী হবে। কে দেবে সেই ক্ষতিপূরণ। যদিও মানুষকে ইচ্ছাকৃত বা ঠাণ্ডা মাথায় খুনের কোনও ক্ষতিপূরণ হয় না। সর্বোপরি স্বজনহারা ৩৯ আফগান পরিবার কি আদৌ কোনওদিন ইনসাফ পাবে! এসব প্রশ্নই এখন সবথেকে বেশি চর্চিত হচ্ছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন