পুবের কলম প্রতিবেদকঃপ্যারাশুট কটাক্ষের জবাব প্যারাশুট প্রসঙ্গ এনেই দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু অধিকারীর সদ্য মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করাকে নিয়ে তোলপাড় চলছে রাজ্য রাজনীতিতে। এরই মধ্যে রবিবার ডায়মন্ড হারবারে করোনা পরিস্থিতিতে প্রথম জনসভা করলেন তৃণমূল যুব সভাপতি তথা ডায়মণ্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সভায় একবারও শুভেন্দু অধিকারীর নাম না নিয়েও তাঁকে 'জবাব' দিলেন অভিষেক। রবিবার সাতগাছিয়ার সভা থেকে তৃণমূল সাংসদ বললেন, 'নেতা হোক বা কর্মী, তৃণমূল কংগ্রেসে কেউ প্যারাশুটে নামেনি। লিফটে ওঠেনি। প্যারাশুটে নামলে ৩৫টা পদের অধিকারী হতাম। দক্ষিণ কলকাতায় লড়তাম, যেখানে আমি থাকি। কিন্তু তা হইনি, ২০১৪ সালে প্রার্থী হয়েছি ডায়মন্ড হারবার থেকে।'
উল্লেখ্য, শুভেন্দু ৩১ অক্টোবর নন্দীগ্রামে বলেছিলেন, ‘আমি প্যারাসুটে নামিনি এবং লিফটেও উঠিনি। জনপ্রতিনিধি হতে গেলে ধৈর্য আর সহ্য এই দুটো ক্ষমতা থাকা দরকার। আমার সহ্য করার ক্ষমতা আছে তাই সহ্য করি। কোনও সমস্যা নেই। আপনাদের সঙ্গে ছিলাম, আছি, এবং ভবিষ্যতেও থাকব।’ এর পাল্টা হিসাবে অভিষেক বলেন, ‘তৃণমূলে কেউ লিফটে ওঠেনি-প্যারাশুটে নামেনি। যদি হত তাহলে দল এত বড় হত না। তৃণমূল মানে মাটির দল। এখানে লিফটে বা প্যারাশুটে ওঠা-নামা যায় না। আর যদি তাই হয় তবে তার পতন অবশ্যম্ভাবী।’
এদিন শুভেন্দুকে জবাব দিতে সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই হাতিয়ার করেছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাতারাতি একদিনে তৈরি হয়ে যায়নি। তাই একে ওকে দিয়ে মন্তব্য করিয়ে লাভ হবে না। ৩৪ বছর অন্ধকার হয়ে থাকা পশ্চিমবঙ্গের সূর্য বলেন মমতা। মমতার সঙ্গে লড়াই করতে আসলে ঝলসে যাবেন। তৃণমূল কংগ্রেসে কেউ প্যারাশুটে নামেননি। লিফটেও ওঠেননি। কেউ কেউ অবশ্য অনেক কিছু বলে। গণতান্ত্রিক দেশে বলতেই পারেন।'
অভিষেকের কথায়, 'আপনারা কেউকেউ প্যারাশুটে নেমেছেন। তৃণমূল দলটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এটা সকলের কাছে মায়ের মতো। তৃণমূল কংগ্রেস সকলের মা। মায়ের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলে ছেড়ে কথা বলবেন? নিজের উচ্চাকাঙ্খার জন্যে অন্য দলের হয়ে তাবেদারি করলে ছেড়ে কথা বলবেন? মায়ের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা সহ্য করা যায় না। বিশ্বাসঘাতকতা করলে কড়ায়-গণ্ডায় জবাব দেওয়া হবে। যতই নাড়ো কলকাঠি, নবান্নে আবার হাওয়াই চটি।'
এদিন শুভেন্দুর অন্যতম বিরোধী বলে পরিচিত তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও অপর একটি সভায় বলেন, 'গোপনে যাঁরা চক্রান্ত করবেন, তাঁদের ছাড়বেন না। একটাই ফ্লেক্স থাকবে, যাতে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ছবি থাকবে। আমরা সবাই দিদির সৈনিক। অনেকে অনেক কৃতিত্ব দাবি করছেন, তাতে কোনও আপত্তি নেই। ভবিষ্যৎ নিশ্চই সব উত্তর দেবে। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে গদ্দারি করছে, মানুষ কিন্তু তার উত্তর দিয়ে দেবে।'
উল্লেখ্য, শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্কের দূরত্ব গত কয়েক মাস ধরেই বেড়েছে। অরাজনৈতিক মঞ্চে একেরপর এক সভা করেছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। দলীয় নেতৃত্বকে বার্তা দিয়েছেন। পড়তে হয়েছে পাল্টা আক্রমণের মুখেও। সমস্যা সমাধানে সাংসদ সৌগত রায়ের মধ্যস্থতাও কাজে আসেনি। গত শুক্রবার মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন শুভেন্দু। তবে এখনও দলে রয়েছেন। তার মধ্যেই শুভেন্দুকে নিশানা করে অভিষেকের বোমা জোড়া-ফুলের অন্দরেই কয়েক প্রস্থ চর্চা বাড়াল। এদিকে, এদিনের সভা থেকেই ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে অভিষেক জনসংযোগের পাশাপাশি ভোট প্রস্তুতি শুরু করলেন বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত। ভোটকে সামনে রেখে এরপর ধাপে ধাপে রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও অভিষেকের সভার পরিকল্পনা রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। যদিও আপাতত শুভেন্দুকে যে ছেড়ে কথা বলবেন না তিনি, তা স্পষ্ট।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন