পুবের কলম আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ কট্টর ইসলাম বিদ্বেষী শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে খুনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মোট ৬ স্কুল পড়ুয়ার নামে চার্জগঠন করল ফ্রান্সের পুলিশ। এর মধ্যে তিন ছাত্রের বয়স ১৩-১৪ বছর। চতুর্থজন এক ছাত্রী। অভিযোগে বলা হয়েছে, ওই ছাত্রীর বাবা নিহত শিক্ষকের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ৪ জনের নামে চার্জশিট দেওয়া হয়। এর আগে গতমাসে আরও দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করে চার্জগঠন করা হয়েছিল। তাদের বয়স ১৪-১৫ বছর। যদিও ওই শিক্ষককে প্রকাশ্যে শিরচ্ছেদ করেছিল যে ছেলেটি, পুলিশের গুলিতে সে ওইদিনই মারা যায়। চেচেন বংশোদ্ভূত ১৮ বছর বয়সি ওই ঘাতকের নাম আবদুল্লাখ আনজরোখ। ১৬ অক্টোবর জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটি মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সা.-কে ব্যঙ্গ করে আঁকা কার্টুন ছবি ব্ল্যাকবোর্ডে টাঙিয়ে ক্লাস নিচ্ছিলেন। এর আগেও তিনি এ রকম চরম ইসলাম অবমাননাকর কাণ্ড ঘটিয়েছেন। তাই সেদিন ক্লাসরুমের ভিতর তাঁর এহেন বিদ্বেষী কর্মকাণ্ড দেখে ওই চেচেন ছাত্রের মাথায় রক্ত উঠে যায়। স্কুল শেষ হওয়ার পর রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ছুরি হামলায় ওই শিক্ষককে শিরচ্ছেদ করে আবদুল্লাখ। সেই মর্মান্তিক ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর চম্পট দিতে গিয়ে পুলিশের জালে ধরা পড়ে যায় এবং পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ঘাতক তরুণ।
সেই হত্যাকাণ্ডের ৪০ দিন পর ৪ কিশোর ছাত্রছাত্রীর নামে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে খুনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে চার্জগঠন করল প্যারিস পুলিশ। উল্লেখ্য, শিক্ষক হত্যার জেরে ফ্রান্স সরকারের রোষানলে পড়েছেন মুসলিম সম্প্রদায়। মুসলিম মহল্লায় ঢুকে তল্লাশির নামে নিরীহ ও নিরপরাধ মুসলিমদেরকে তুলে নিয়ে গিয়ে বেদম প্রহার করেছে পুলিশ। তাদের জুলুম থেকে রেহাই পায়নি শিশু থেকে নারী, বৃদ্ধ কেউই। বেশ কিছু মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শরণার্থী শিবিরে আগুন লাগিয়ে দেওয়ায় কয়েক হাজার মুসলিম উদ্বাস্তুকে এই হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডায় খোলা আকাশের নীচে দিন গুজরান করতে হচ্ছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিক্ষক খুনের ঘটনাকে ‘ইসলামি সন্ত্রাসবাদ’ তকমা দিয়ে নতুন করে ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের দিকে এগোনোর চেষ্টা করছেন। এই মর্মে ফ্রান্সে বসবাসরত মুসলিমদের ওপর কঠোরভাবে রাষ্ট্রীয় নজরদারি চালানোর ফন্দিফিকির করছেন প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। মুসলিমদের গতিবিধির ওপর পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে গত সপ্তাহে এক চার্টার বা সনদ জারি করেছেন তিনি। মুসলিম নেতৃবৃন্দকে নিদান দিয়েছেন, দু-সপ্তাহের মধ্যে ওই সনদ মানার অঙ্গীকার করতে হবে। ওই সনদের বলেই মসজিদে ইমাম নিয়োগ এবং বহিষ্কার সবকিছুই করবে সরকার। সমস্ত মসজিদের ইমামকে ৬ মাসের মধ্যে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড এবং মুসলিম ছাত্রছাত্রীদেরকে আলাদা করে চেনার সুবিধার্থে বিশেষ আইকার্ড দেওয়া হবে। এভাবে স্পষ্ট মেরুকরণ ও বিভাজনী তত্ত্ব রয়েছে বিতর্কিত সনদটিতে।
অন্যদিকে চার্জশিটে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত জনৈক ছাত্রী ক্লাসে উপস্থিত না থাকা সত্ত্বেও নিহত শিক্ষকের নামে অপবাদ ছড়ানোয় তার বাবাকে সহায়তা করেছে। না হলে তার বাবা কীভাবে ওই শিক্ষক সম্পর্কে জানলেন। নিশ্চিত কিশোরী কন্যার মুখেই তিনি শুনেছিলেন। উল্লেখ্য, শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হিসেবে ১৪জন সন্দেহভাজনকে ইতিমধ্যেই কাঠগড়ায় তুলেছে ফ্রান্স সরকার।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন