বুধবার দুপুরে বাঁকুড়া ১ নম্বর ব্লকের সুনুকপাহাড়ি ময়দানে কানায় কানায় পূর্ণ জনসমাবেশে রাজ্যের উৎসুক মানুষদের হাজারো প্রশ্নের জবাব শুরুতেই দিয়ে দিলেন। অবজারভার প্রসঙ্গে বলেন, সারা রাজ্য আমি একমাত্র অবজারভার তৃণমূল দলের। আমি কোন নেতা নই। সারারাজ্যে কোথায় কি হচ্ছে এ টু জেড সব সময় পর্যবেক্ষণ করছি। এতদিন আমার একটু চাপ ছিল তাই কিছুটা রাশ ঢিলে করেছিলাম। বাঁকুড়া থেকে ফের শুরু করলাম।
নিজেকে অবজারভার ঘোষণা করে বললেন কে কোথায় রাতে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে, কে কোথায় কোন ধান্দায় যাচ্ছে সব নজরে আছে। দলে ১০০ জনেই খারাপ নয়, একজন দু’জন খারাপ হলে শুধরে নেব। বিজেপির নাম করে বলেন, বাংলা টাকার কাছে আত্মসমর্পণ করে না। দিল্লিতে দাঙ্গা, অসমে বাঙালি খেদাও চলছে। আমরা এই রাজ্যে আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষিত করেছি।
তৃণমূল সুপ্রিমো দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন সিপিএম, বিজেপি জোট বেঁধেছে। রাজ্যের বিপর্যয়ের সময় ওদের দেখা নেই। ওরা রাজ্যের শান্তি কেড়ে নিতে দিল্লি থেকে লোক পাঠাচ্ছে। ওরা বাংলার লোক নয়। আমি ভিনরাজ্যে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য রাজ্যের কোষাগার থেকে ৩০০ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছিলাম। আর বিজেপি লুকিয়ে লুকিয়ে কখনও পুলিশ কখনও বা প্রেস মিডিয়ার মারফত টাকা দিচ্ছে ভোট কেনার জন্য, রাজ্যে অশান্তি করার জন্য। তৃণমূল করতে হলে ত্যাগী হতে হবে, ভোগী হলে চলবে না। তিনি সিপিএম বিজেপি কে কটাক্ষ করে বলেন সিপিএম হল লোভী, বিজেপি হল ভোগী, তৃণমূল হল ত্যাগী। তিনি বলেন,সিপিএম নির্লজ্জ, ওরা বিজেপির পায়ে লুটোপুটি খাচ্ছে। কারণ সারোদা নারোদা জন্ম দিয়েছিল সিপিএম। জেলের ভয় আছে। তিনি বলেন ক্ষমতা থাকলে আমাকে গ্রেফতার করুক, জেলে থেকেই লড়াই করব। লালুকে কী ওরা আটকাতে পেরেছে। এখন বিজেপি নেতারা অস্তমিত। গো-মূত্র খেলেন তাতেও করোনা আটকাতে পারলেন না। আবার সোনা বের করতে পারলেন না। এখন ছল ধরেছে গোবর্ধন। আমি বলি আগে ঘুটে দিতে শিখুন, একটা অপদার্থ রাজনৈতিক দল। কয়লার বিক্রি করে দিচ্ছে, এমপি লেডের টাকা দিচ্ছে না, উন্নয়নের টাকা বন্ধ। আমাদের রাজ্য থেকে টাকা তুলে নিয়ে গিয়ে একটা অংশ দেয়। সেটা ফলাও করে প্রচার করছে কেন্দ্র দিচ্ছে, কেন্দ্র দিল কিন্তু কোথা থেকে টাকাটা এলো সেটা বলছে না, জমি লুটের ব্যবস্থা করেছে। ধান,চাল,আলুর দাম কেন বাড়ছে আর আপনারা আমার কাছে অভিযোগ জানাতে পারবেন না। সেই অধিকারটা কেন্দ্রীয় সরকার কেড়ে নিয়ে কালোবাজারিদের হাতে তুলে দিয়েছে। বলছে কৃষকদের টাকা দিতে চাই। ভালো কথা আমি চিঠি লিখে বলেছি টাকাটা রাজ্য সরকারকে দিন, প্রত্যেকটি চাষির অ্যাকাউন্টে দায়িত্ব নিয়ে পাঠিয়ে দেব। অথচ আমরা কৃষক বন্ধুদের বছরে ৫ হাজার টাকা দিচ্ছি, শস্য বিমার টাকা দিচ্ছি, জমির মিউটেশন তুলে দিয়েছি। তবুও ওরা আমাদের গালাগালি দিচ্ছে কাজ করছি বলে।
বিজেপি বলছে মমতা দুর্গাপুজো করতে দেয় না। ক্লাবগুলোর প্রয়োজন ছিল তাই পুজোর জন্য ৫০ হাজার টাকা করে দিয়েছি। ওদের কাছে আমাদের ধর্ম শিখতে হবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মনীষীদের নাম বলে বলেন, এত মিথ্যা কথা বলতে পারে এই মাটিতে ভাবতেই অবাক হই। বিনা পয়সায় চাল,চিকিৎসা,শিক্ষা,জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের পাশে আছে আমাদের সরকার।
তিনি বলেন মাটি সৃষ্টি প্রকল্পে রাজ্যে ২৫ হাজার বিঘা জমিতে সুফলা করে তোলা হচ্ছে। ডানকুনি থেকে রেল লাইনের ধারে ফেড করিডর করছি। এগুলোতে ২৫ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তিনটি স্তরে ৭২ লক্ষ স্কলারশিপ দিয়েছি পড়ুয়াদের। বিদেশে পড়তে গেলে কুড়ি লক্ষ টাকা ঋণের ব্যবস্থা করেছি। সাঁওতালি অ্যাকাডেমি করেছি। জয় জোহার জয়বাংলা প্রকল্পে সকল তপশিলি জাতি এবং উপজাতির মানুষরা ৬০ বছর বয়স হলে এক হাজার টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। তিনি বলেন, এক কোটি মানুষ সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। বিনা পয়সায় হার্ট অপারেশন থেকে শুরু করে পলিটেকনিক আইটিআই নতুন কলেজ হর্টিকালচার প্রকল্পে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে বাঁকুড়ায়। কৃষক বন্ধু মারা গেলে দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী বিজেপিকে তীব্র কটাক্ষ করে বলেন, দিল্লি সরকারের কাছে তিনশো পঁয়ষট্টি দিনেই এপ্রিল ফুল। আমাদের সরকার সামাজিক ও মানবিক সরকার, দানবিক নয়। আমরা দেশকে টুকরো টুকরো করতে দেব না। আমাদের মধ্যে কেউ খারাপ হলে দূর করে সরিয়ে দিই।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১১ আগে একটা ছোট্ট ধাক্কাধাক্কিকে কেন্দ্র করে অমিয় পাত্ররা ৫৩৭ জনের নামে কেস দিয়েছিল। কোতুলপুরের শিহড়ের ঘটনায় শিহরিত হতে হয়। সিপিএমের ভয় পুকুরের জলে গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে শীতের রাতে মানুষকে আত্মরক্ষা করতে দেখেছি। আহত ছেলের জন্য জল আনতে গিয়ে মা এসে দেখেন ছেলের কাটা মুণ্ডু গড়াগড়ি খাচ্ছে। ওরা সুড়ঙ্গ দিয়ে ডেড বডি পাচার করত। সেই জগাই মাধাই গদাইরা একজোট হয়ে ভোটের ময়দানে নেমেছে। তৃণমূল সুপ্রিমো দলের ছাত্র-যুব-মহিলাদের নির্দেশ দেন, আগামী ছ’মাস অতন্দ্রপ্রহরী হয়ে কাজ করুন। সেইসঙ্গে আত্মবিশ্বাসের স্বরে বলেন, ২০২১-এর ভোটে জয় হবে আমাদেরই।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন