চিটাগং,৪ ডিসেম্বরঃ জনমানবশূন্য দ্বীপ ভাসানচরে পাঠানো হল ১৬০০-রও বেশি রোহিঙ্গাকে। শুক্রবার কড়া নিরাপত্তায় চিটাগং সমুদ্র বন্দর থেকে ৭টা স্পিডবোটে করে তাদেরকে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেওয়া হল নাব্য জলাভূমিতে। সেখানে অবশ্য লক্ষাধিক রোহিঙ্গার জন্য ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে পাকা কলোনি। যদিও বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে ৩৫ কিমি. দূরে অবস্থিত ভাসানচরে অনিচ্ছুক রোহিঙ্গাদেরকে দ্বীপান্তরে পাঠানো নিয়ে মানবাধিকার এবং এনজিও সংস্থাগুলো তীব্র আপত্তি জানিয়ে আসছে। তাদের অভিযোগ হল, ভাসানচর হল বঙ্গোপসাগরের একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। মাত্র ২০ বছর আগে যা সমুদ্র থেকে জেগে উঠেছে। সেখানে কোনও যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই,পরিকাঠামো নেই। রাস্তাঘাট, বাজারঘাট,স্কুল-কলেজ,হাসপাতাল কোনওকিছু নেই। তারওপর এলাকাটি খুবই নাব্য হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যাপ্রবণ। প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে যে কোনও সময় ভাসানচরকে পুরো ডুবিয়ে বা ভাসিয়ে কিংবা উড়িয়ে দিতে পারে। তাই সেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সর্বদা আতঙ্ককে সঙ্গী করে থাকতে হবে সর্বহারা ও অসহায় রোহিঙ্গাদেরকে।
এসব কিছু জেনেবুঝেও সব আপত্তি অগ্রাহ্য করে বাংলাদেশ একরকম বাধ্য হল রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠাতে। কারণ প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীর ব্যয়ভার তারা আর বহন করতে পারছিল না। প্রায় সাড়ে তিন বছর হতে চলল রোহিঙ্গাদেরকে বিতাড়িত করেছে মায়ানমার। সেই থেকেই তারা বাংলাদেশের কক্সবাজার,কুতুপালং,উখিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে আশ্রয় নিয়ে রয়েছে। সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত সেখানে নেই। বেশিরভাগই পাহাড়ি অঞ্চলে বাঁশ-কাঠ-ছিটেবেড়া ও ত্রিপল দিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছিল। স্বভাবতই তাদের রুজি,রোজগারের তেমন কোনও পথ ছিল না। বেঁচে থাকার উপযুক্ত ন্যূনতম পরিষেবা তারা পায়নি। যাকে বলা যায় একেবারেই মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে রোহিঙ্গারা। তুরস্ক ছাড়া কোনও দেশই সেভাবে ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা দেয়নি। তবে ওআইসি-র কয়েকটি সদস্য দেশ কিছু সাহায্য দিয়েছে রোহিঙ্গাদেরকে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব তোলপাড় হলেও আন্তর্জাতিক মহল তাদেরকে নিজভূমে ফেরাতে তেমন কোনও সদর্থক ভূমিকা নেয়নি। আবার তাদের আশ্রয়দাতা বাংলাদেশ সরকারের মানবিকতার পাশেও দাঁড়ায়নি, রোহিঙ্গাদের সাহায্যের হাত কেউ সেভাবে বাড়ায়নি। একা বাংলাদেশ কত আর করবে। তারা এই বোঝা টানতে পারছিল না। তাই একান্ত নিরুপায় হয়েই তারা ভাসানচরে কিছু রোহিঙ্গাকে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। ধাপে ধাপে লাখ খানেক মানুষকে সেখানে পাঠানো হবে। তবে বাংলাদেশ সরকারের দাবি, পাহাড়ের ঢালে ঘিঞ্জি বসতিতে থাকতে অনিচ্ছুক এবং ভাসানচরে যেতে যারা ইচ্ছুক, কেবল তাদেরকেই স্থানান্তর করা হচ্ছে। জোর করে কাউকে সরানো হয়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী আবদুল মোমেন। সূত্রের খবর, মাস দুয়েক তাদেরকে রান্না করা খাবার দেওয়া হবে। এ জন্য ভাসানচরে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য সামগ্রী মজুদ করা হয়েছে। যদিও কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, তাদেরকে কোনওকিছু না জানিয়েই বা তাদের সম্মতি না নিয়েই বোটে চাপিয়ে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন