পুবের কলম প্রতিবেদকঃ দিল্লির একটি আদালত ৩৬ জন বিদেশি মুসলিমকে বেকসুর খালাস দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা দিল্লির নিজামুদ্দিনে তবলিগ জামাত মারকাজে ধর্মীয় এক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিল। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযোগ ছিল, তারা কোভিড নাইটিন গাইডলাইন ভঙ্গ করেছে ও ভিসার নিয়মাবলি অমান্য করেছে।
বেশ কিছু টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্র নিজামুদ্দিন মারকাজে মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত তবলিগ জামাতের অনুষ্ঠানটিকে কোভিড ছড়ানোর জন্য দায়ী করে এবং নিজামুদ্দিন মারকাজেকে করোনার ‘হটস্পট’ হিসাবে প্রচার করে। দিল্লি পুলিশ ৯৫৫ জন বিদেশি মুসলিমকে ভিসার শর্ত উল্লঙ্ঘন, দাওয়াতী কাজে অংশগ্রহণ এবং সরকারের কোভিড গাইডলাইন অমান্য করার দায়ে চার্জশিট প্রদান করে। তবে বিভিন্ন দেশের বেশিরভাগ তবলিগ জামাত অনুরাগী একটি আবেদন চুক্তির মাধ্যমে মুক্তি পেয়ে নিজ নিজ দেশের উদ্দেশে রওনা দেয়। যেসব দেশের তারা নাগরিক তাদের বিদেশ দফতরও ভারত সরকারের কাছে নিজ নাগরিকদের এভাবে আটক রাখার বিরুদ্ধে অসন্তোষ জ্ঞাপন করে। তবে ৪৪ জন তবলিগ অনুসারী সিদ্ধান্ত নেয়, তারা বিচারের সম্মুখীন হবে। এদের মধ্যে ৮ জনকে আদালত আগেই রেহাই দেয়। আদালত বলে, এদের বিরুদ্ধে কোভিড ছড়ানোর কোনও প্রমাণ নেই। আদালত বিদেশি আইন এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৭০ এবং ২৭১ ধারা অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত ৩৬ জনকেও আগেই মুক্তি দিয়েছিল। তবে তাদের ওপর মহামারি এবং বিপর্যয় মোকাবিলা আইন ও ভারতীয় দণ্ডধারার অন্যান্য ধারায় মামলা বহাল ছিল।
৮ জন বিদেশি নাগরিককে মুক্তি দিয়ে চিফ ম্যাট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট গুরমহিনা কউর বলেন,‘পুলিশ যে চার্জশিট ও দলিলপত্র পেশ করেছে, তাতে নিজামুদ্দিন মারকাজে অভিযুক্তদের ওই নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিতি কিংবা অংশগ্রহণের প্রমাণ নেই। এ ছাড়া এমন কোনও দলিলপত্র পেশ করা হয়নি যে, তারা তবলিগের কাজে লিপ্ত ছিল।’ পুলিশের অন্যতম অভিযোগ ছিল এরা তবলিগ বা ধর্মপ্রচারের কাজে লিপ্ত ছিল।
বিচারক কউর আরও বলেন, আদালতের কাছে মারকাজের রেজিস্ট্রার পেশ করা হয়নি। এ ছাড়া মারকাজ থেকে যেসমস্ত ব্যক্তিকে হাসপাতাল বা কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে পাঠানো হয়েছিল, তারও কোনও তালিকা নেই। যদিও এদেরকে কোভিড টেস্টের জন্য প্রেরণ করা হয়েছিল। আদালত যে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে তারজন্য প্রয়োজন প্রাইমা ফেসি বা প্রাথমিক সাক্ষ্য প্রমাণ। কিন্তু চার্জশিটে তা নেই। দিল্লি পুলিশ অবশ্য তাদের মুক্তি দেওয়ার আবেদনের বিরোধিতা করে। দিল্লি পুলিশের বক্তব্য ছিল যে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট ‘সাক্ষ্যপ্রমাণ’ রয়েছে। পুলিশ রাজ্যগুলির প্রতি স্বরাষ্ট্র দফতরের একটি সারকুলার আদালতে পেশ করেছিল, যাতে বলা হয়েছিল অভিযুক্তরা পর্যটন ভিসায় এসেছে কিন্তু তবলিগ জামাতের কাজে অংশ নিয়েছিল। এর আগে বম্বে হাইকোর্টের আওরাঙ্গাবাদ বেঞ্চের বিচারপতিরাও তবলিগ জামাতের সদস্যদের অন্তরিন করে রাখার তীব্র নিন্দা করে তাদের মুক্তি দেওয়ার আদেশ দিয়েছিল।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন