পুবের কলম, নয়াদিল্লিঃ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেূ হাসিনার মধ্যে ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে উঠে এলো নানা বিষয়। অতিমারি আবহে এই প্রথম দিল্লি-ঢাকা বৈঠক। এই আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ বাংলাদেশ। তাঁর কথায়, ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাঁর সরকার ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার দিকে মনোযোগ দিয়ে এসেছে। মোদির এই কথার প্রেক্ষিতে হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু ভারত।
দুই দেশের দুই শীর্ষনেতা যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন। প্রাক্ ১৯৬৫ রেলওয়ে লিঙ্কের শুভ সূচনাও করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এদিন প্রকাশ করা হয় স্ট্যাম্পও। তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশের সিইও ফোরাম গড়তে সাতটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন মোদি-হাসিনা। এই চুক্তিকে তাঁরা অগ্রাধিকার দিচ্ছেন এবং একে দুই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তাঁরা।
নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘মহাত্মা গান্ধি ও বঙ্গববন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপর ডিজিটাল প্রদর্শনীর উদ্বোধন করার সুযোগ পেয়েছি। এটা আমার জন্য গর্বের মুহূর্ত। আমাদের তরুণ সমাজকে তাঁরা উদ্বুদ্ধ করবেন।’ পাশাপাশি মোদি আরও বলেন যে, করোনা ভাইরাস অতিমারিকে মোকাবিলা করতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। করোনার প্রকোপ রুখতে দুই দেশ হাতে হাত মিলিয়ে লড়াই করেছে।
এই উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। হাসিনা বলেছেন, ‘ভারতের সরকার ও মানুষদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যাঁরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সর্বান্তকরণে সমর্থন করেছিলেন এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। পাশাপাশি মোদি সরকার যেভাবে অতিমারিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন হাসিনা। প্রসঙ্গত, বঙ্গববন্ধু-বাপু ডিজিটাল এক্সিবিশন দেখানো হবে দিল্লিতে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়। ২০২২ সালের গোড়ার দিকে প্রদর্শিত হবে কলকাতায়।
ভারত ও বাংলাদেশ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থাকে জোরদার করতে বহু দিন ধরে সচেষ্ট। দুই দেশের মধ্যে ১৯৬৫ সালের আগে যে রেলওয়ে যোগাযোগ ছিল তাকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা ও চালু করার বিষয়ে দিল্লি ও ঢাকার শীর্ষনেতৃত্ব বদ্ধপরিকর। এমনটাই বলছেন আধিকারিকরা। এই দিন উদ্বোধন করা হয়েছে হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রেলওয়ে লিঙ্ক। এটি ছাড়াও আরও পাঁচটি রেলপথ চালু রয়েছে। তবে তিস্তা নদীর জলবন্টন নিয়ে মোদি-হাসিনার কোনও কথা হয়নি।
তিস্তা চুক্তি অনুযায়ী, ভারত পাবে তিস্তার জলের ৪২.৫ শতাংশ ও বাংলাদেশ ৩৭.৫ শতাংশ। বাকি ২০ শতাংশ কে পাবে, তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এই চুক্তির বিরোধিতা করেছিলেন। জলপাইগুড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুর ও দার্জিলিংয়ের কৃষকদের জন্য তিস্তার জল গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া, যে হিমবাহ থেকে তিস্তার উৎপত্তি, সেই হিমবাহ ক্রমশ কৃশ হয়ে আসছে। যদিও বৃহস্পতিবার মোদি-হাসিনার ভার্চুয়াল বৈঠকে তিস্তা নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। ‘কৃতজ্ঞতা’ ও ‘গর্ব’ প্রকাশ দিয়ে শেষ হয়েছে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন