দেবশ্রী মজুমদার, ১৫ ডিসেম্বর: কারণ দর্শানোর নোটিশ বিশ্ব ভারতীর অধ্যাপক সংগঠনের সভাপতি সুদীপ্ত ভট্টাচার্যকে। পাশাপাশি, ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের কাছ থেকেও জানতে চাওয়া হয়েছে, তাঁরা কোন ভাবে ভিবিউফা অধ্যাপক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কিনা? আগামী সোমবারের মধ্যে তার উত্তর চাওয়া হয়েছে বিশ্ব ভারতীর কর্মসচিবের তরফে।
বিশ্ব বিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে, ব্যাখা চাওয়া হয়েছে, কেন তিনি সংবাদ মাধ্যমে ৯ ডিসেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্ব ভারতীর আভ্যন্তরীণ বিষয়ে মুখ খুলেছেন। সেই প্রেক্ষিতে অবাধ্যতা, শৃঙ্খলা ভঙ্গ সহ সার্ভিস রুল অমান্য করার দায়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিশ্ব ভারতী ব্যবস্থা নেবে না।
উল্লেখ্য, গত ৮ডিসেম্বর বিশ্বভারতীর ফ্যাকাল্টিদের সাথে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর করা অমর্ত্য সেন সম্পর্কে অপমানজনক বক্তব্য ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। সেই বৈঠকে উপস্থিত ভিবিউফার নেতৃত্বদের অভিযোগ, ফ্যাকাল্টিদের নিয়ে অনলাইন বৈঠকে উপাচার্য দাবি করেন, দিনকয়েক আগে অমর্ত্য সেন তাকে ফোন করেছিলেন। ‘আমি ভারতরত্ন অমর্ত্য সেন বলছি’, এইভাবে পরিচয় দিয়ে অমর্ত্য সেন তার বাড়ির সামনে থেকে হকার উচ্ছেদের বিরোধিতা করেন। ভিবিউফা’র সদস্য এক বরিষ্ঠ অধ্যাপকের দাবি, বৈঠকে উপাচার্য এও বলেছেন অমর্ত্য সেন তাকে ফোনে জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ে শান্তিনিকেতনে গেলে এই হকারদের কাছে থেকে জিনিসপত্র কেনেন। হকারদের উঠিয়ে দিলে তার অসুবিধা হবে।
স্বাভাবিকভাবেই অমর্ত্য সেন এমন কথা উপাচার্যকে ফোনে বলেছেন কারও বিশ্বাসযোগ্য হয় নি। সাথে সাথে উপাচার্যর এমন মিথ্যাচারের প্রতিবাদ জানিয়ে ভিবিউফা প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, ইউজিসি’র চেয়ারম্যানের কাছে উপাচার্যর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। সেই অভিযোগ ভিবিউফা লিখেছে, ‘উপাচার্য দাবি করেন, অমর্ত্য সেন একজন স্বার্থপর মানুষ। উপাচার্য ফোনে অমর্ত্য সেনকে বলেন, আপনি তাহলে নিজের বাড়িটা হকারদের জন্য ছেড়ে দিন।কিন্তু অমর্ত্য সেন তাতে আপত্তি করেন।’’ বিশ্বভারতীর উপাচার্যর মিথ্যাচারের কড়া জবাবও দেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। মেল মারফত অমর্ত্য সেন তাঁর বক্তব্য জানিয়েছেন বিশ্বভারতী ইউনিভার্সিটি ফ্যাকাল্টি অ্যাসোসিয়েশনকে।
অমর্ত্য সেন তাতে বলেন, ‘আমার সাথে উপাচার্যর ফোনে কোনও কথোপকথনই হয় নি। সেই সঙ্গে আরও উল্লেখ করি, আমি নিজেকে কখনও ভারতরত্ন বলে কোথাও পরিচয় করাই না। আমার মেয়ের সবজি কেনার স্বার্থে হকারদের বিরক্ত না করার কোনও কথা আমি কোনওদিন বলেছি বলে মনে পড়ে না। এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আমার শান্তিনিকেতনের বাড়ির সামনে কোনও হকারই বসে না।’
অমর্ত্য সেন তাঁর মেল-এ আরও উল্লেখ করেছেন, ‘যেভাবে বিশ্বভারতি সাধারন মানুষের জীবনে হস্তক্ষেপ করছে, তাদের যাতায়াতের পথে পাঁচিল তুলে মানুষকে বিব্রত করছে সেটাকে আমি ভাল বলে মনে করি না। উপাচার্যর অদ্ভুত অভিযোগের সাথে সম্পর্কযুক্ত না হলেও, আমি বলতে পারি আমার মা শান্তিনিকেতনের বাড়িতে বসবাসের সময় হকার উচ্ছেদের বিরুদ্ধেই ছিলেন। তবে আমাদের বাড়ির সামনে নয়, পিয়ারসন পল্লীতে। আমাদের বাড়ির সামনে কোনও হকারই নেই।’
অমর্ত্য সেনের উত্তর মেলার পর শান্তিনিকেতন জুড়ে তৈরী হওয়া বিতর্ক আরও জোরালো হয়েছে। সমালোচনার ঝড় তীব্র হয়েছে। তারপর ভিবিউফার সভাপতি সুদীপ্ত ভট্টাচার্য ও সম্পাদক সমর সাহা উপাচার্যর এহেন মিথ্যাচার, একজন নোবেলজয়ী সম্পর্কে বেমালুম অপমানজনক অভিযোগ করার বিহিত চেয়ে ইউজিসি, কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক থেকে শুরু করে আচার্য পর্যন্ত চিঠি পাঠান। তারপর ভিবিউফার নেতৃত্ব হিসেবে সুদীপ্ত ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিশ ধরায় কর্তৃপক্ষ বলে, মনে করছে বিভিন্ন মহল।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন