ওয়াশিংটন, ১৬ ডিসেম্বরঃ অতিমারি করোনাকালেও পাইকারি হারে উইঘুর মুসলিমদেরকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠাচ্ছে চিন। সেখানে গাদাগাদি করে মানবেতর জীবন অতিবাহিত হচ্ছে উইঘুরদের। এভাবে উইঘুরদের ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণ করায় চিনের কমিউনিস্ট সরকারের তীব্র নিন্দা করলেন মার্কিন বিদেশমন্ত্রী মাইক পম্পেও। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ১৯৩০-এর দশকে নাৎসি জার্মানি যেভাবে ইহুদিদের ওপর জাতিগত নিকেশ অভিযান চালায়, সেই একই কায়দায় উইঘুরদেরকে নিকেশের পথে নেমেছে চিন। পম্পেও-এর অভিযোগ, ১০ লক্ষাধিক উইঘুর মুসলিমকে বন্দিশালায় আটকে রেখে অকথ্য নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
বন্দি শিবিরে আটক উইঘুরদের সঙ্গে কেমন পাশবিক আচরণ করা হয়, সে সম্পর্কে এক মহিলা চিকিৎসক রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। তাঁর নাম সায়রাগুল সাউতবায়। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে কাজাখস্তান বংশোদ্ভুত ডা. সায়রাগুল জানিয়েছেন, ক্যাম্পগুলোকে ‘পুনঃশিক্ষাকেন্দ্র’ বা ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষাকেন্দ্র’ নামে চালানোর চেষ্টা করে চিন। যেখানে প্রতি শুক্রবার আটক মুসলিমদেরকে জোর করে শূকরের মাংস খাওয়ানো হয়। পেশায় চিকিৎসক হলেও এবং বংশ পরিচয়ের দিক থেকে উইঘুর না হলেও তাঁকে দীর্ঘদিন বন্দিশিবিরে আটকে রেখেছিল চিন। সেখানে নিজের চোখে দেখা অত্যাচারের কাহিনি মিডিয়াকে জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, সম্প্রতি কানাডার বিদেশমন্ত্রকের অধীনস্ত এক কমিটির রিপোর্ট তৈরিতে সাহায্য করেন ডা. সায়রাগুল সাউতবায়। সেখানে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তিনি বলেন, করোনার সময় প্রার্থনা ও নামাযের জন্য বিভিন্ন ধর্মের উপাসনাগার পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। ইদানিং কিছু কিছু খুললেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেখানে বেশি মানুষের জমায়েতে লাগাম পরানো হয়েছে।
অথচ চিনা ডিটেনসন ক্যাম্পগুলোতে ঠাসাঠাসি-গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে উইঘুরদেরকে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের পোশাক খুলে নগ্ন করে সারা শরীরে কীটনাশকের মতো বিষাক্ত কিছু স্প্রে করা হয়। নিরাপত্তা রক্ষীরা বলে, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এভাবেই নাকি স্যানিটাইজড করা হয়। কিন্তু অনেকের অভিযোগ, তাদের শরীরে ওই স্প্রে করার পর ভীষণ জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়। অনেকের আবার গোটা শরীরে চুলকানি বা দগদগে ঘা হয়ে গিয়েছে।
অন্যদিকে, মার্কিন বিদেশমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, উইঘুর মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে চিন। অথচ এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার। এই অধিকার সুরক্ষিত হলে মানুষের অন্যান্য অধিকার যথার্থ বিকশিত হয়। ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার বলবৎ থাকলে এবং সহিষ্ণুতা বজায় থাকলে দেশ জনকল্যাণকর হয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন