পুবের কলম প্রতিবেদককঃ আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা ভোটে স্বপ্নের ‘মিশন বাংলা’ যাতে অধরা না থাকে তার জন্য চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখতে চাইছেন না অমিত শাহ-জে পি নাড্ডারা। তাই বঙ্গ দখলে বাংলার বিজেপি নেতৃত্বের উপরে আস্থা রাখতে চাইছেন না তাঁরা। বরং ‘ত্রিপুরা’ মডেলকেই প্রয়োগ করে বহিরাগতদের নিয়ে ঝাঁপাচ্ছেন। ২৯৪ বিধানসভা আসনের জন্য ভিনরাজ্য থেকে ২৯৪ জন সাংসদবিধায়ক ও মন্ত্রীকে পাঠাচ্ছেন। আগামী জানুয়ারি মাস থেকেই দফায়-দফায় ওই বহিরাগত নেতারা রাজ্যে এসে ‘দায়িত্ব’ পালন করবেন।
শুধু বহিরাগত নেতাদের পাঠিয়ে বাংলায় ‘খবরদারি’ করেই ক্ষান্ত হচ্ছেন না বিজেপি শীর্ষনেতারা। দলের রাজ্য ও জেলানেতাদের উপরে বিশেষ নজরদারি চালানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভোটের আগে দলকে ধাক্কা দিয়ে তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন, এমন নেতা-জনপ্রতিনিধিদের তালিকা ইতিমধ্যেই তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, এক বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে ওই তালিকা তৈরি করাচ্ছে বিজেপি শীর্ষনেতৃত্ব। সেই তালিকায় রাজ্যস্তরের প্রথম সারির বেশ কিছু নেতার নামও রয়েছে। গত মাসখানেক ধরেই দলীয় কর্মসূচি থেকে সন্তর্পণে দূরে সরে থাকা নেতাদের ‘গতিবিধির’ উপরে গোপন নজরদারি করাও চলছে।
যদিও বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মানতে চাননি, দলের সুদিনে কোনও নেতাকর্মী শিবির বদল করবেন। তাঁর কথায়, ‘অন্য দল থেকে নেত-কর্মীরা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা বিজেপির হয়ে লড়াই করছেন, তাঁরা অন্য কোনও ডুবন্ত নৌকার সওয়ারি হবেন না। তবে যদি কেউ যেতে চান, তাঁকে তো আর জোর করে আটকে রাখা যাবে না।’
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৯৪ আসনের মধ্যে জয়ের জন্য যে ২০০ আসনকে টার্গেট করা হচ্ছে, সেই সব বিধানসভা আসনে ওজনদার কেন্দ্রীয় নেতামন্ত্রীসাংসদদের পাঠানো হবে। দলের অন্দরে বিধানসভা ভোটের আগে যাতে ‘আদি’ বনাম ‘নব্য’ লড়াই তুঙ্গে না ওঠে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া না দেয়,তার দিকেই বিশেষ নজর রাখবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘পালকরা’। দলের প্রার্থী বাছাইয়ের পর প্রার্থীর প্রচার, জনসভা থেকে শুরু করে ভোটপ্রচারের যাবতীয় দায়িত্ব তাঁরাই পালন করবেন। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারা সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রে কবে প্রচার করবেন,কীভাবে তাঁদের দিয়ে প্রচার করা হবে, তাও ঠিক করার দায়িত্ব থাকবে ওই ‘পালক’ নেতাদের।
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই রাজ্যকে পাঁচটি জোনে ভাগ করে পাঁচ কেন্দ্রীয় নেতাকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রহ্লাদ পটেল,গজেন্দ্র শেখাওয়াত সহ ছয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য ও মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও লোকসভা আসন ভিত্তিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সহযোগিতার জন্য এবার বিধানসভা আসন-ভিত্তিক দায়িত্বভাগ করে আরও শ’তিনেক নেতাকে আসরে নামানো হচ্ছে।
দলের শীর্ষনেতাদের এমন সিদ্ধান্তে কিছুটা হলেও ক্ষুব্ধ বঙ্গের বিজেপি নেতারা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেছেন, ‘দেখুন না অধিক সন্ন্যাসীতে না আবার গাজন নষ্ট হয়ে যায়। দিল্লিতেও তো বিধানসভা আসন-ভিত্তিক ক্ষমতাশালী নেতাদের দায়িত্ব সঁপেছিলেন অমিত শাহজেপি নাড্ডারা। রাজধানীর মানুষ তো ঝেঁটিয়ে বিদেয় করে দিয়েছেন বিজেপি প্রার্থীদের।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন