দেবশ্রী মজুমদার, রামপুরহাট : পাঁচ ঘন্টা ধরে জটিল অস্ত্রোপচারে সুস্থ ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে। এই নজির নতুন নয়। আগেও এই অপ্রতুল পরিকাঠামোর মধ্যে করোনা আবহের মধ্যে একের পর এক নিজের রেকর্ড ভেঙে চলেছে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক সিদ্ধার্থ বিশ্বাস।
হাসপাতাল সূত্র মারফত জানা গেছে, রামপুরহাট থানার কাবিলপুর গ্রামের সুমতি লেট দীর্ঘদিন ধরেই চোয়ালের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। চিকিৎসায় প্রতিকারের আশায় এক সময় বাইরে যাওয়ার ইচ্ছা হয়। রোগ বেড়েই যাচ্ছিল। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করতেও অসুবিধে হচ্ছিল তাঁর। কিন্তু দুঃস্থ এই রোগী পরিবার বুঝতে পারে বাইরে এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা করানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তখনই একই রোগে আক্রান্ত রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা এক রোগীর সংস্পর্শে আসেন তাঁরা। তাঁর কাছে খবর পেয়ে মাস খানেক আগে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে সিদ্ধার্থ বাবুর কাছে আসেন এই রোগী। পরীক্ষানিরীক্ষা করে চিকিৎসক দেখেন, তাঁর চোয়ালে ক্যান্সার ও বাঁ পাশের গলার মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যয়বহুল চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই পরিবারের। তাই নিখরচায় রামপুরহাট মেডিক্যালেই ওই রোগীর অস্ত্রপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসক।
বুধবার দুপুরে সাড়ে পাঁচঘন্টা ধরে অস্ত্রোপচার চলে। সিদ্ধার্থবাবু বলেন, এই ধরনের অপারেশন প্রাইভেটে করালে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ। পরিবারটি অত্যন্ত দুঃস্থ। এদিকে অস্ত্রোপচার না করলে রোগীনি মারা যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে মেডিক্যালেই অস্ত্রপচার করি। প্রথমে মডিফাইড র ্যাডিক্যাল নেক ডিসেকশন পদ্ধতিতে গলার ক্যান্সার আক্রান্ত অংশ মুক্ত করা হয়। ক্যান্সার অংশ কেটে বাদ দিয়ে বুকের মাংস নিয়ে পি এম পি সি ফ্ল্যাপ পদ্ধতিতে প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে চোয়াল, ঠোঁট, জিহ্বা সমেত মুখের স্বাভাবিক পুর্ণগঠন করা হয়। আপাতত রোগীকে সিসিইউ বিভাগে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে এবং তিনি ভালো আছেন।
মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি ডাঃ পলাশ দাস বলেন, ডাঃ সিদ্ধার্থ বিশ্বাস তাঁর ব্যক্তিগত দক্ষতায় হাসপাতালে মানুষের চিকিৎসার স্বার্থে অবিরাম সময় দিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে ওই রোগীনির পরিবার জানান, দিনমজুরি করে সংসার চলে। ওই চিকিৎসক দায়িত্ব নিয়ে অপারেশন না করলে হয়তো মাকে হারাতে হত। আমরা আজন্ম ঋণী তাঁর কাছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন