পুবের কলম প্রতিবেদকঃজলপাইগুড়ি চম্বলের ডাকাতের সঙ্গে তুলনা টেনে বিজেপিকে আক্রমণ করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গ সফরের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি শহরে এবিপিসি মাঠে আয়োজিত জনসভায় মমতা বলেন, ‘বিজেপি সবচেয়ে বড় ডাকাত,চম্বলের ডাকাত। হিন্দু নয়, কুৎসা ও হিংসার ধর্ম তৈরি করেছে বিজেপি। মানুষে-মানুষে ভাগাভাগি করাই ওদের কাজ।’ ভাষণে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জনজাতির মানুষের উন্নয়ন, রায় সাহেব মনীষী ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা, আব্বাসউদ্দীন সাহেব,নারায়ণী ব্যাটেলিয়ান-সহ বেশকিছু প্রকল্পের কথা উঠে আসে তাঁর বক্তব্যে। আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণার পাশাপাশি রাজ্য পুলিশে নারায়ণী ব্যাটেলিয়ন গঠনের কথা ঘোষণাও করলেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে রাজনৈতিক সভা থেকে বিক্ষুব্ধ নেতাদের কড়া বার্তা দিলেন তৃণমূল নেত্রী। বলেন,‘১০ বছর পার্টির সুবিধে নিয়ে, সরকারের খেয়ে ভোটের আগে বোঝাপড়া করে বিরোধিতা করবেন। আমি এ জিনিস বরদাশ্ত করব না।’
এ দিন বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘ওরা বলেছিল লোকসভা ভোটে জিতলে ডুয়ার্সের সাতটি চা-বাগান খুলে দেবে। কিন্তু একটা বাগানও খুলতে পারেনি।’ পাহাড় প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে গোর্খ্যাল্যান্ড করে দেওয়ার প্রতিশ্রতি দিয়েছিল। কিন্তু ক’টা গোর্খ্যাল্যান্ড করা হয়েছে আজ পর্যন্ত? পাহাড়ের মানুষ ওদের ভাওতা ধরে ফেলেছে।
তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘বিজেপির প্রতিশ্রুতি মানে তো প্রতারণা। নোটিফিকেশন জারির পরেও হাল্লাবোল, কিছুই নেই! বলেছিল বছরে ২ কোটি চাকরি দেব,দিয়েছে? বাংলায় বলছে ফর্ম দেব, ভোটের পর হাওয়া! বলেছিল অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেব, পেয়েছেন? শুধু উলটো-পালটা কথা বলার জন্য আছে।’
গত লোকসভা নির্বাচনে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে রাজ্যের শাসক দলকে। এবার আর শূন্য হাতে ফিরতে চান না মমতা। তাই এ দিন জলপাইগুড়ির সভা থেকে তাঁর কথায় উষ্মাও ধরা পড়ে। বলেন, ‘লোকসভা ভোটে এখানে একটা আসনও পেলাম না। এখানকার সব আসন বিজেপি নিয়ে চলে গেল! আর কোন কাজটা বাকি আছে,বলুন? বিধানসভা আসনে আমরা আপনাদের আশীর্বাদ চাই।’ এ দিন মঞ্চে প্রথম থেকেই কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপিকে তুলোধোনা করেছেন তৃণমূলনেত্রী। বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওরা বাংলাকে ধ্বংস করতে চায়। ওরা বাংলায় ঘৃণ্য ধর্ম, কুৎসার ধর্ম এনেছে। বিজেপির প্রতিশ্রুতি মানে তো প্রতারণা। নোটিফিকেশন জারির পরেও হাল্লাবোল, কিছুই নেই! বলেছিল বছরে ২ কোটি চাকরি দেব, দিয়েছে? বাংলায় বলছে ফর্ম দেব, ভোটের পর হাওয়া! বলেছিল অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেব,পেয়েছেন? শুধু উলটো-পালটা কথা বলার জন্য আছে।’ এনআরসি-এনপিআর নিয়ে বিজেপি ও কেন্দ্র সরকারকে একহাত নেন মমতা। বলেন, ‘আর বিজেপির এনআরসির ধাক্কা খেতে হবে না। এনপিআর খায় না মাথায় দেয়! এনআরসি ও এনপিআরের তফাত কী? তাঁর দাবি, ‘অসমে ১৯ লক্ষ বাঙালির নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। বাংলা একমাত্র রাজ্য যে কাউকে বঞ্চনা করে না। আগে যারা সরকারে ছিল কোন কাজটা করেছে! ভাষণ দিয়ে সব কাজ হয় না। আমাদের কাজে ভুল হলে সংশোধন করে নেব।’ নাম না করে আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দল মিমকে আক্রমণ করলেন মমতা। বলেন, ‘হায়দরাবাদের একটা পার্টিকে এখানে ধরে এনেছে। বিজেপি ওই হায়দরাবাদের পার্টিকে টাকা দেয়। বিজেপি হিন্দু ভোট নেবে, ওরা নেবে সংখ্যালঘু ভোট। আর আমি কি কাঁচাকলা খাব!’
সম্প্রতি, বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় দাবি করেছেন,রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার যা পরিস্থিতি তাতে এখন থেকেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে মমতা বলেন, ‘কী করবেন, রাষ্ট্রপতি শাসন? করে দেখান না! আমি আন্দোলন থেকে উঠে এসেছি,কিছু হবে না। ৩ আইপিএসকে কেন্দ্রের তলব করার ইস্যুতেও সোচ্চার হন মমতা। বলেন,‘এক্তিয়ার নেই, তাও রাজ্য পুলিশকে ডাকছে। কনভয়ে ৫০টি গাড়ির পিছনে কেন ৫০টি গাড়ি।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন জেল-ফেরত আসামিরা থাকবে? যারা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছিল কেন থাকবে? বলেন, ‘মানুষ এদের দেখলে রেগে যায়।’ তৃণমূলনেত্রীর দাবি, ‘ওরা ভয় পেয়েছে বলেই মিথ্যে কথা বলছে। ভয় পেয়েছে বলেই বোমা-বন্দুক নিয়ে মিছিল করছে। তৃণমূলই গোটা ভারতকে পথ দেখাবে। নিচুতলার কর্মীরাই তৃণমূলের সম্পদ।’
এ দিন ফের কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘কেন্দ্রের কাছে ৮৫ হাজার কোটি টাকা পাই,দেয়নি। রাজ্য থেকে রাজস্ব আদায় করে, তার ৪০ শতাংশ রাজ্য পায়। সেই টাকাটাও দেয় না,মাছের তেলে মাছ ভাজে। ভোটের আগে টাকার প্যাকেট আসবে,নিয়ে নেবেন। টাকা নিয়ে খেয়ে নেবেন, উলটে দেবেন ওদের। ওরা বলেছিল লোকসভা ভোটে জিতলে ডুয়ার্সের ৭টি চা-বাগান খুলে দেবে। কিন্তু একটা বাগানও খুলতে পারেনি। উত্তরবঙ্গের ৩৭০টি বাগানের চা-শ্রমিককে পাকা বাড়ি দেওয়া হয়েছে। বন্ধ চা-বাগানের শ্রমিকদের ভাতা, বিনামূল্যে রেশন দিচ্ছে রাজ্য।’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাকে গুজরাত বানাতে দেব না। বাংলার মেরুদণ্ড ভাঙতে দেব না। কবিগুরুর জনগনমণ পালটে দেখুন না কী হয়! বাংলায় বহিরাগত গুন্ডাদের ঢুকিয়েছে। আমার প্রত্যাঘাত গুন্ডা এনেও সামলাতে পারবে না।’ বলেন, ‘ভোট এলেই গোর্খাল্যান্ডের কথা বলে বিজেপি। পাহাড়ে স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান আমরাই করব। দার্জিলিং,তরাই-ডুয়ার্স নিজেদের মতো ভালো থাকবে। কোচবিহারে পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস হচ্ছে।’ এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ, বেঙ্গল সাফারি তৈরি হয়েছে। হলদিবাড়ি থেকে মেখলিগঞ্জ সেতু তৈরি হয়েছে। যা ছিল করে দিয়েছি, আর কিছু বাকি নেই। বিজেপি পরিযায়ীদের তাড়িয়ে দিয়েছে। ৪০ লক্ষ বেকারের সংখ্যা বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। হেঁটে ফিরেছেন পরিযায়ীরা, ট্রেনের ভাড়া দেয়নি। আমরা ৩০০ ট্রেন ভাড়া করে পরিযায়ীদের ফিরিয়েছি। বাংলায় ৪০ শতাংশ দারিদ্র কমেছে। তিনি যোগ করেন, ‘মূলস্রোতে ফিরেছে কেএলও জঙ্গিরা। যাঁরা পরিষেবা পাননি, দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে যান। করোনায় থমকে বিশ্ব, এগোচ্ছে বাংলা। আমরা চাই সব মানুষই সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পান। একদিনে সব কাজ সম্ভব নয়, বাকি থাকলে করে দেব।’
জলপাইগুড়িতে জনসভা সেরে কোচবিহারে পৌঁছে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মহারাজা জিতেন্দ্রনারায়ণ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের (এমজেএন) নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী এখান থেকেই আরও বেশ কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। তিনি নারায়ণী ব্যাটেলিয়ানের হেড কোয়ার্টারের শুভ শিলান্যাসের পাশাপাশি জয়গাঁও অগ্নি নির্বাপণ কেন্দ্র এবং ফুলবাড়ি অগ্নি নির্বাপণ কেন্দ্রের শুভ উদ্বোধন করেন। ফুলবাড়ি দমকল কেন্দ্রে পৌঁছে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব জানান, ফুলবাড়ি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার টি পার্কের সামনে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই দমকল কেন্দ্র। আপাতত দুটি দমকলের গাড়ি ও একটি মোটরবাইক পরিষেবা দিবে। তবে পরবর্তীতে প্রয়োজনমতো পরিষেবা বাড়ানো হবে। বুধবার কোচবিহারের রাসমেলায় কর্মিসভায় অংশ নেবেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা আরও জানান, আলিপুরদুয়ারের এবং জলপাইগুড়ির সব শরণার্থী কলোনিকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। যদিও রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, বহু ক্ষেত্রে যেমন সরকারি খাস জমি শরণার্থীদের দেওয়া হয়েছে। একইভাবে বহু মুসলিমের জমিতেও শরণার্থীরা জবরদখল করে বসে থাকলে পরে সেগুলিকেও শরণার্থীদের দিয়ে দেওয়া হয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন