শ্রীনগর: হুইলচেয়ার ছাড়া চলতে পারে না তাবিয়া ইকবাল। বাড়ি জম্মু কাশ্মীরের অনন্তনাগে। জন্ম থেকেই তাবিয়া প্রতিবন্ধী। অনেকে বলেছিলেন– ‘মেয়ে তো! যখন চলতে পারে না স্কুলে পাঠানোর দরকার কী? ঘরেই থাকুক।’ তাবিয়া শোনেনি। বাবা-মায়ের কাছে বায়না করেছিল– আর সকলের মতোই সে লেখাপড়া করবে। মেয়ের কথা শুনেছিলেন বাবা মুহাম্মদ ইকবাল। এক বেসরকারি প্রতিবন্ধী স্কুলে মেয়েকে ভর্তি করেছিলেন। রোজ হুইলচেয়ারে চেপে স্কুলে যেত তাবিয়া। কারণ তাবিয়ার আরও সমস্যা ছিল। সে মূকও। ঠোঁটের ওঠানামা বুঝে যেভাবে মূক শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া শেখে সেভাবেই তাবিয়া লেখাপড়া শিখেছে। লেখাপড়ায় ওর আগ্রহ দেখে স্কুলের শিক্ষিকারা অধ্যক্ষের নির্দেশে বাড়িতে চলে আসতেন– তাবিয়াকে বিনা পয়সায় কোচিং দিতেন। সেই তাবিয়া এবার জম্মু-কাশ্মীরে দশম শ্রেণির পরীক্ষায় ৯০.৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে। পরীক্ষায় ৫০০ নম্বরের মধ্যে তাবিয়া পেয়েছে ৪৫২। তাবিয়ার সাফল্যে উচ্ছ্বসিত অনন্তনাগে ওর মহল্লা। মুহাম্মদ ইকবাল ভাবতেই পারেননি– মেয়ে এত বেশি সাফল্য পাবে। ইকবাল সদ্য সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। তিনি বললেন– ‘মেয়ের চিকিৎসা করাতে ওকে নিয়ে কাশ্মীর এবং অন্য রাজ্যেও হাসপাতালে গিয়েছি। কোনও লাভ হয়নি।’
জম্মু ও কাশ্মীরে এবার মোট ৭৫–১৩২ জন দশম শ্রেণির পরীক্ষা দিয়েছিল। ৩৮–৩৪০ জন ছাত্র– ৩৬–৭৯২ জন ছাত্রী। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ ছাত্রই পেয়েছে ৭৪ শতাংশের কাছাকাছি নম্বর। আর মেয়েরা পেয়েছে ৭৬ শতাংশের কাছাকাছি নম্বর। তাবিয়া সকলকে ছাপিয়ে গিয়েছে। লকডাউনে স্কুল বন্ধ ছিল। ক্লাস হয়েছে অনলাইনে। উপত্যকায় তো ৪জি ইন্টারনেট সংযোগ নেই। সেই পুরনো ২জি-ই ভরসা। তাতে বিস্তর অসুবিধা হয়। সেইসব সমস্যা সহ্য করেই কাশ্মীরের পডYয়ারা লকডাউনে পড়াশোনা করেছে। এভাবে পড়াশোনা করেও মেধার জোরে তাবিয়া সাফল্য পেয়ে বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করেছে।
.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন