এ এইচ ইমরান: ১৯৭১ সালে জন্ম বাংলাদেশের। একদা এই বাংলাদেশ অবিভক্ত বাংলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। আমাদের সঙ্গে ভাষা– ঐতিহ্য ও ইতিহাসের খানিকটা মিল থাকলেও বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র।
কিন্তু অনেকেই মনে করছেন– বাঙালির ভাষা– সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সব কিছুই বোধহয় বাংলাদেশেরই প্রাপ্য। আমরা পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা এক হাতে লন্ঠন– আর অন্যহাতে পেনসিল নিয়ে বসে আছি! কারণ তাদের সম্ভবত ধারণা– রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-বেগম রোকেয়া থেকে শুরু করে ইলিশ মাছ সবই বোধহয় বাংলাদেশের ‘সম্পত্তি'। কী জানি কেন ভারতের চিহ্নিত এই গোষ্ঠীটি সব কিছুই বাংলাদেশকে বিলিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর।
এপার বাংলার কোনও বাঙালি যদি ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি গাইতে চায়, তবে এরাঁ চিৎকার করে ওঠে‘এই ব্যাঁটা নির্ঘাত বাংলাদেশি’! ‘মুসলমান কিংবা অনুপ্রবেশকারী অথবা তৃণমূল কংগ্রেসি কিনা– খুঁজে দেখো। কারণ সোনার বাংলা তো বাংলাদেশের সম্পত্তি।’কিন্তু কেন বাঙালির সব উত্তরাধিকারকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দিতে হবে– তার কোনও ব্যাখ্যা ওই ‘বিশেষ গোষ্ঠীটি'র হাতে নেই। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ‘জয় বাংলা' ধ্বনি দিতে অভ্যস্ত। কিন্তু এই গেরুয়া গোষ্ঠীটির বক্তব্য হচ্ছে, ‘জয় বাংলা' নাকি ভারতবিরোধী শ্লোগান! কারণ– পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র বাংলাদেশের মানুষরা তো ‘জয় বাংলা’ বলে। এ এক অদ্ভূত যুক্তি। যেহেতু বাংলাদেশের লোকেরা ইলিশ এবং বাগদা চিংড়ি খায়, সেহেতু আমরা পশ্চিমবঙ্গবাসীরা ইলিশ এবং বাগদা চিংড়ি খেতে পারব না।
বাংলাদেশিরা রবীন্দ্রসংগীত ও নজরুলগীতি গায়– তাই কলকাতাকেন্দ্রিক পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের এই দুই কবির লেখা গান গাওয়া বা কবিতা আবৃত্তি নাকি চলবে না! ভাবতেই হৃদয় হা-হা-কার করে ওঠে। আমরা কি সবকিছুই বাংলাদেশের হাতে সমর্পণ করে এখানে শুধু কালীদাস বা ভবভুতি এবং মনু সংহিতা নিয়েই পরে থাকব। এই বাংলার মানুষদের উপর এ ধরনের জুলুম না করলেই কি নয়!
প্রশ্নটি বিশেষভাবে উঠেছে– বাংলাকে গৌরবান্বিত করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানটি নিয়ে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায়ই ‘জয় বাংলা’– ‘জয় হিন্দ’ শ্লোগান দিয়ে থাকেন। বাঙালির অন্তরাত্মা থেকে ওঠা এই শ্লোগান। কিন্তু গেরুয়া শিবির থেকে বলা হচ্ছে– মমতার ‘জয় বাংলা’ বলার উদ্দেশ্য নাকি তিনি এই বাংলাকে ‘বাংলাদেশ’-এর হাতে তুলে দিতে চান। কারণ– বাংলাদেশিরাও এই শ্লোগানটি দিয়ে থাকে। বাংলাদেশিরা ‘জয় বাংলাদেশ’ বললেই হয়তো ভালো হত। কিন্তু তারা সমানভাবে বাঙালির উত্তরাধিকারকেও বহন করতে চান। সেই সূত্রেই তারা হয়তো ‘জয় বাংলা' শ্লোগানটি দিয়ে থাকেন। আসলে যেন-তেন-প্রকারেণ মমতাকে আক্রমণ করাই লক্ষ্য গেরুয়া শিবিরের। কিন্তু তা করতে গিয়ে তারা যে বাংলা ও বাঙালিকেই অপমান করছেন– সেটা বলাবাহুল্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাষা দিবসে তাই বুক ঠুকে বলেছেন– ‘আমরা একশোবার ‘জয় বাংলা’ বলব। প্রয়োজনে জেল থেকেও বলব ‘জয় বাংলা'। বাঙালি হারতে শেখেনি।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন