পুবের কলম প্রতিবেদক: ওয়েস্ট বেঙ্গল রেকগনাইজড আন-এডেড মাদ্রাসা টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের বেশকিছু নেতা ও কর্মীরা বেতন পরিকাঠামো ও পড়ুয়াদের বিনামূল্যে পুস্তক, পোশাক প্রভৃতির দাবিতে ৪৭ দিন ধরে আন্দোলন করছিলেন। শনিবার প্রাক্তন সাংসদ ও পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরানের উপস্থিতিতে তাঁরা এই অবস্থান আন্দোলন তুলে নিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন সিরাতের আবু সিদ্দিক খান, প্রোগ্রেসিভ ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের সিয়ামত আলি, নাট্য ব্যক্তিত্ব কৌশিক চৌধুরি।
তার আগে অবশ্য তাঁদের দাবি সম্পর্কে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাভেদ মিয়াদাদ– সম্পাদক পলাশ রম প্রমুখ মন্ত্রী জনাব ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গেও কথা বলেন।
স্বীকৃতপ্রাপ্ত আন এডেড মাদ্রাসার শিক্ষকদের বেতন প্রদান ও পড়ুয়াদের বই, পোশাক ইত্যাদি প্রদান সম্পর্কে সরকার যে অর্ডার (জি ও) বের করেছে তার কপি অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
অবস্থান বিক্ষোভ তুলে নেওয়ার আগে নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার তাঁদের দাবি মেনে নেওয়াতে তাঁরা খুশি। তাঁরা এও বলেন– তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধী নন। বরং সরকারের সঙ্গে মিলিতভাবে উন্নয়ন ও বিকাশের কাজ করতে আগ্রহী। নেতৃবৃন্দ মু্খ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদও জানান।
আহমদ হাসান ইমরান অবস্থান বিক্ষোভ শেষ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আপনাদের ৪৭ দিনের যে আন্দোলন তা সফল হয়েছে। আর এ জন্য মু্খ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকৃতই ধন্যবাদের যোগ্য।
অনশন মঞ্চে শিক্ষকদের সামনে আহমদ হাসান ইমরান আন-এডেড মাদ্রাসার গুরুত্ব উল্লেখ করে বলেন– এ রাজ্যের পিছিয়ে পড়া এলাকায় সাক্ষরতা ও শিক্ষার প্রসারে মাদ্রাসা এবং আন এডেড মাদ্রাসাগুলির ব্যাপক অবদান রয়েছে। তাঁরা স্কুলছুট ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছেন। তিনি বলেন, ভারতবর্ষে আধুনিক শিক্ষা শুরু হয় একটি মাদ্রাসার মাধ্যমে। আর সেই মাদ্রাসাটি হচ্ছে ১৭৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত আলিয়া মাদ্রাসা। আজ তা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। প্রাক্তন মু্খ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কথা স্মরণ করিয়ে বলেন, এ রাজ্যের প্রাক্তন মু্যূমন্ত্রী মাদ্রাসাগুলিকে সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর বলেছিলেন। এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে প্রাক্তন মু্খ্যমন্ত্রী বলা হয়েছিল, মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছে এমন একজন সন্ত্রাসবাদীকে ধরে আনুন। প্রাক্তন মু্খ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে একটি সম্প্রদায়কে কালিমালিপ্ত করা হয়েছে।
রাজ্যের মু্খ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নে সব সময় আন্তরিক। মু্খ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, বেশকিছু বেসরকারি মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দেব। যার দ্বারা কেন্দ্রীয় সহায়তা পেতে পারে। তবে বেতন দেওয়া সম্ভব নয়। পিছিয়ে পড়া এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়েছে এই মাদ্রাসাগুলি। তাই এই সমস্ত মাদ্রাসাকে সহায়তা করতে হবে বলে জানিয়েছিলেন মু্খ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবিও শুনেছেন। তাই মু্খ্যমন্ত্রী এই স্বীকৃত আন এডেড মাদ্রাসার শিক্ষকদের জন্য সাম্মানিকের ব্যবস্থা করেছেন।
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে আহমদ হাসান ইমরানের পরামর্শ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পড়ানোর দায়িত্বের পাশাপাশি ভেদাভেদ না করে গ্রামের মানুষদের শিক্ষায় অবদান রাূতে হবে। হিন্দু-মুসলিম যাতে মিলেমিশে থাকতে পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে শিক্ষকদের। তিনি বলেন, অসমে মাদ্রাসা তুলে দেওয়া হয়েছে, উত্তরপ্রদেশে শিক্ষকদের তিন বছর বেতন দেওয়া হচ্ছে না। তবে এ রাজ্যের সরকার শিক্ষকদের প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক।
ইমরান বলেন, এই ধরণের সরকার যাতে বাংলায় না আসে তার জন্য আমাদের সকলকে সচেষ্ট থাকতে হবে।
প্রোগ্রেসিভ ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের সভাপতি সিয়ামত আলি বলেন– দেরিতে হলেও আন-এডেড মাদ্রাসার শিক্ষকদের দাবিপূরণ হয়েছে। শিক্ষকরা যাতে কোনওভাবে প্ররোচনায় পা না দেন– সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন