মেয়ের খুনিরা ছাড়া পেয়ে গেল বললেন, ইশরাতের মা

পুবের কলম, মুম্বই:  ভুয়ো এনকাউন্টারে নিহত মুম্বইযের কলেজ ছাত্রী ইসরাত জাহানের মা শামিম কওসর বৃহস্পতিবার ক্ষোভ উগরে দিলেন সিবিআই আদালতের উপর। শামিমের সাফ কথা, ‘মেয়ে বিচার পেল না। একতরফা বিচার হল। খুনিরা ছাড়া পেয়ে গেল। এটা নতুন কিছু নয়। এটাই হয়। সমাজের মাথা ওরা। ওদের হাতেই আইন। ওদের হাতেই বিচার।' শামিম বললেন, ‘গত ১৭ বছর ধরে এই মামলাটিকে নষ্ট করা হচ্ছিল। আমার মেয়েটা বিচার পেল না। এটাই আমার আক্ষেপ।’

মুম্বইয়ের উপকণ্ঠে মুমব্রায় এক চিলতে খুপরিতে ছিল ইশরাতদের আস্তানা। সেই ঘরেই বসে কথা বললেন শামিম কওসর। যেদিন তিন পুলিশ অফিসারকে রেহাই দিয়ে ইশরাত জাহান হত্যা মামলার কফিনে শেষ পেরেক পুঁতলেন সিবিআই বিচারক– সেদিন শামিমের খুপরিতে পুলিশের লোক এসেছিল। শামিমকে ডেকে পুলিশ অফিসার বলেছিলেন– ‘আজ রায় বের হচ্ছে। তাই বাড়ির সমানে আপনাদের নিরাপত্তায় পুলিশ দেওয়া হচ্ছে।’ শামিম বলেছিলেন– ‘দরকার নেই– মেয়েকে তো মেরেছে। আমাদেরও মারলে বেঁচে যাই।’ শামিম এর প্রতিবেশীরা বললেন– ‘একসঙ্গেই তো পাশাপাশি থাকতাম আমরা। জ্বলজ্যান্ত মেয়েটাকে খুন করা হল। আদালতে কেউ আমাদেরû মেয়ের কথা বলল না! এখন সে ছবি মাত্র। তবে আমাদের হৃদয়ে বেঁচে রয়েছে।' আবদুল আহাদও ইশরাতের প্রতিবেশী। তিনি বললেন, ‘শিক্ষিকারা বলতেন– ইশরাতের মতো মেয়ে হয় না। দেখবেন ও খুব নাম করবে। স্কুলে পড়ার সময়েও দিদিমণিরা একই কথা বলতেন। সকলে মেয়েটাকে ভালোবাসত। কতই বা বয়স হয়েছিল? মাত্র ১৯। সে নাকি জঙ্গি? দেহের পাশে পাওয়া গেল একে-৪৭! তেমন মেয়ে হলে আমরা বুঝতে পারতাম না? কখনও ও জঙ্গি হতে পারে না।’

শামিমও ঘাড় নাড়েন। দুচোখ সজল হয়ে ওঠে। শামিম বললেন– ‘গোড়া থেকেই বিচার হল একপেশে। যখন বিশেষ তদন্ত দল রিপোর্ট দিল যে, ইশরাতকে পরিকল্পনা করে মারা হয়েছে– তখন ভেবেছিলাম– মামলা ঠিক দিকে এগোবে। কিন্তু পরে দেখলাম– ক্ষমতাশালীরা থাকলে সব ধামাচাপা পড়ে যায়। গোড়ায় বলল– আমার মেয়ে নাকি জঙ্গি! পরে বলল– এনকাউন্টারও ভুয়ো নয় ঠিকই হয়েছিল। তাহলে বিশেষ তদন্ত দল গড়ার দরকার কী ছিল? তাদের রিপোর্ট কি ভুল?’ শামিম কাঁদতে কাঁদতে বললেন– ‘ভেবেছিলাম ছাড়ব না, লড়াই করে যাব। পারলাম না। বারবার আহমদাবাদ যাওয়ার খরচ আছে– তারপর আমার বয়স হয়েছে। আর পারি না। তাই শেষপর্যন্ত কোর্টে যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিলাম। হঠাৎই চোখেমুখে প্রত্যয় জ্বলজ্বল করে শামিমের। তিনি বলেন– ‘আমি ছাড়ব না। উকিলের সঙ্গে কথা বলছি। আবার কোর্টে যাব।’