পুবের কলম প্রতিবেদক: শুভেন্দু অধিকারির হৃদয় যে এত পাকিস্তান প্রেম জমে রয়েছে তা কিন্তু আগে কেউ আন্দাজ করতে পারেনি। এমনকি শুভেন্দু অধিকারির পিতা শিশির অধিকারিও বোধহয় কোনওদিন ভাবেন নি যে, তাঁর অবিবাহিত পুত্রের অন্তরে অন্তরে ছেয়ে রয়েছে পাকিস্তান।
যাইহোক কথা হচ্ছিল শুভেন্দু অধিকারির পাকিস্তান প্রেম নিয়ে। সবসময় তাঁর মুখে এখন পাকিস্তান আর পাকিস্তান। স্বপ্নেও সম্ভবত শুভেন্দুবাবু পাকিস্তানের জিগির ছাড়তে পারছেন না। অমিত শাহ-এর মতো দোর্দন্ডপ্রতাপ গৃহমন্ত্রী মসনদ আলো করে থাকা সত্ত্বেও শুভেন্দু পাকিস্তান ও পাকিস্তানীদের নিয়ে এসেছেন খোদ তাঁর কেন্দ্র নন্দীগ্রামে! তবে প্রায় নন্দীগ্রাম থেকে প্রায় ২৫০০-৩০০০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে পাকিস্তান। সেখান থেকে অতন্দ্রপ্রহরী বিএসএফ-এর কড়া নজর এড়িয়ে নন্দীগ্রামে আসা সহজ কথা নয়। তাহলে কি করে এই পাকিস্তানীরা নন্দীগ্রামে বেশ কিছু ‘মিনি পাকিস্তান’ গড়ে তুলল? শুভেন্দুবাবু নিজে এই গোপন তথ্য বাজারে ছেড়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হয়তো পাকিস্তানীরা সমুদ্র পথে করাচি থেকে নন্দীগ্রামে হাজির হয়েছেন। কারণ, নন্দীগ্রামের অদূরেই রয়েছে বঙ্গোপসাগর। তাহলে সেক্ষেত্রে পাকিস্তানীদের উপস্থিতি মেনে নেওয়া যায় অন্তত তর্কের খাতিরে। কিন্তু প্রশ্ন, নন্দীগ্রাম সহ দিঘা, হলদিয়া এবং দুই মেদিনীপুর সবসময় ছিল অধিকারিদের গড়। শুভেন্দু নিজেও ছিলেন বাংলার এক প্রতাপশালী মন্ত্রী। কাজেই প্রশ্ন উঠেছে– এই ভোটের মুখে তিনি নন্দীগ্রামে ‘পাকিস্তানি’দের নিয়ে ‘মিনি পাকিস্তান’ গড়ার সম্ভাবনা তুলে ধরেছেন। আর গলা ফাটিয়ে তা বলেও চলেছেন। এনিয়ে তদন্ত হলে অবশ্যই প্রশ্ন উঠবে কি কারণে শুভেন্দুবাবু আগে এই পাকিস্তানিদের কথা বলেননি। রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন এবং আগে থেকেই তাঁর গোপন বন্ধু অমিত শাহজিকে কেন জানাননি? শুভেন্দু তো দাবি করেন, নন্দীগ্রাম ও নন্দীগ্রামের অধিবাসীদের তিনি চেনেন হাতের তালুর মতো। তাহলে কি এতদিন তিনি ওই সম্ভাব্য ‘মিনি পাকিস্তান’গুলির ‘পাকিস্তানি’দের দ্বারাই লোকসভা ও বিধানসভায় নির্বাচিত হয়ে এসেছেন?
কিন্তু এতদিন কেন তিনি চুপ করে ছিলেন? এই গুরুতর প্রশ্নটি কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। সওয়াল উঠছে– পাকিস্তানি নাগরিকদের সব লক্ষণ তিনি তো ঘনিষ্ঠভাবেই জানেন। এরা পাকিস্তান জিতলে মাংস খায়, পটকা ফাটায়, আন্দোৎসব করে। তৃণমূলকে ভোট দেয় বিজেপিকে খুব একটা দেয় না ইত্যাদি কথা সব লক্ষণ এবং চিহ্ন তিনি বলে দিচ্ছেন। আবারো সেই পুরনো প্রশ্ন, বিগত প্রায় ১০ বছর এমএলএ ও মন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও কেন শুভেন্দু পাকিস্তানিদের এই দাপটকে নন্দীগ্রামে মেনে নিলেন? একদিন এই প্রশ্নের জবাব হয়তো তিনি দেবেন। অবশ্য ইদানিং যেসমস্ত মুসলিম নেতাদের নাম তিনি পাকিস্তানি বা গুণ্ডা হিসেবে উচ্চারণ করছেন তাদেরই তো সবসময় তাঁর আশেপাশে ঘুরতে দেখা যেত। তাঁদের নিয়ে তিনি কত কম্ম করেছেন, তার ইয়ত্তা নেই। শুভেন্দুবাবুর তীক্ষ্ণ নজর, সেই পাকিস্তানিদের চিনল বটে কিন্তু একটু বিলম্বে।
আরও একটি প্রশ্ন উঠেছে মোদি সরকারের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং স্বয়ং মোদি বাংলাদেশে যাচ্ছেন এবং আসছেন। তাঁরা কখনই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের কথা হাসিনাকে বলছেন না। তাই দেখা যাচ্ছে, শুভেন্দুবাবুও মুসলিম বাংলাদেশিদের কথা বলছেন না। তিনি টেনে আনছেন প্রায় ৩০০০ কিলোমিটার দূরের পাকিস্তানিদের। আর এইসব বলে তিনি শুধু সাম্প্রদায়িক প্রচার নয়, একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর কাজে লিপ্ত রয়েছেন। ভারতীয় সংবিধান ও আইন কোনও সম্প্রদায়কে টার্গেট করে এধরণের প্রচারে অনুমতি দেয় না। বরং প্রার্থী পদ খারিজ করে। কিন্তু ইদানিং আইন ও সংবিধানের কথা তোলা বৃথা। এখন সব চলতা হ্যায়। এইসব নিয়ে আগামীতে আলোচনা হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন