এক গাছে ৩৫০ প্রজাতির আম: ‘ম্যাঙ্গো ম্যান’ কালিমুল্লা খানের আশ্চর্য জীবন

- আপডেট : ৯ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
- / 94
পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক:স্কুলজীবনে ব্যর্থ হয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন কালিমুল্লা খান। সপ্তম শ্রেণিতে ফেল করার পর জীবন তাঁকে টেনে নিয়ে যায় উত্তরপ্রদেশের মলিহাবাদের পারিবারিক আমবাগানে। সেইখানেই জন্ম নেয় এক অসম্ভব স্বপ্ন—একটি গাছেই যদি শতশত জাতের আম ফলানো যেত?
আজ তিনি ভারতের ‘ম্যাঙ্গো ম্যান’ নামে পরিচিত, ৮৪ বছর বয়সেও যাঁর চোখে-মুখে একই রকম দীপ্তি। তাঁর তৈরি একটি গাছে আজ ৩৫০-র বেশি জাতের আম ফলে—আলফানসো, ল্যাংড়া, কেসর, দশেহরি, এমনকি নিজস্ব হাইব্রিড ‘দশেহরি কালিম’। আর গাছে আছে ‘সচিন তেন্ডুলকর’ আম, ‘নরেন্দ্র মোদি’, এমনকি ‘ঐশ্বর্য রাই’ নামের আমও। প্রতিটি আম নিজস্ব রঙ, স্বাদ আর ঘ্রাণ নিয়ে যেন গল্প বলে।
গ্রাফটিং পদ্ধতির এই জাদু তিনি শিখেছেন মাটি থেকে, গাছের থেকে। ১৯৮৭ সালে শুরু হয় এই পরীক্ষা—বংশ পরম্পরায় পাওয়া ১২৫ বছরের পুরোনো এক আমগাছকে বেছে নিয়ে শুরু করেন নানা জাতের শাখা জোড়া লাগানো। সেই গাছটিই আজ তাঁর সবচেয়ে বড় কীর্তি—এক জীবন্ত জিনতত্ত্বের সংগ্রহশালা।
শুধু তিনি একা নন, এই যাত্রায় তাঁর সঙ্গী ছেলে নাজিমুল্লা খান। প্রায় তিন দশক ধরে বাবা-ছেলে মিলেই গড়ে তুলেছেন এই বাগানকে। নাজিমুল্লা বলেন, “আম গাছ পালা শুধু কাজ নয়, এটা ভালোবাসা। একটা নতুন আমের জাত তৈরি হতে এক দশক লেগে যায়।”
তাঁদের এই বাগানে আসে দেশ-বিদেশের গবেষক ও কৃষকরা—ইরান, দুবাই থেকে । তাঁরা শেখেন কীভাবে এত জাতের আম একসঙ্গে ফলানো যায়, কীভাবে গাছের শিকড়ের সাথে প্রেম করা যায়!
কালিমুল্লা খান বলেন, “আমি বিজ্ঞানী নই, আমি প্রকৃতির ছাত্র। গাছেরাই আমাকে শিখিয়েছে। আম শুধু ফল নয়, এটা আমার আত্মার অংশ। মানুষ আর আমের সম্পর্ক হাজার বছরের — ভালোবাসা, সংস্কৃতি, আর ঐতিহ্যে বাঁধা। আমি গাছের মাঝেই জীবন কাটিয়েছি। মরণের পরও চাই ওদের পাশেই ঘুমোতে।””
কালিমুল্লা খান শুধু গাছ ফলাননি, একটানা ভালোবাসা দিয়ে গড়ে তুলেছেন এক ঐতিহ্য — যা প্রমাণ করে, শিক্ষা শুধু বইয়ে নয়, প্রকৃতিও এক মহান শিক্ষক। আজ তিনি শুধু একজন উদ্ভাবক নন, এক অনুপ্রেরণা। প্রমাণ করে দিয়েছেন—স্বপ্ন দেখার জন্য বড় ডিগ্রি দরকার পড়ে না, দরকার শুধু সময়, আর অগাধ ভালোবাসার ।