ক্যানসারের চিকিৎসায় ‘দালাল-চক্রে’র খপ্পরে পরিযায়ী শ্রমিক, পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলল স্বাস্থ্য কমিশন

- আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, মঙ্গলবার
- / 21
পুবের কলম প্রতিবেদক: এক পরিযায়ী শ্রমিকের অভিযোগের ভিত্তিতে মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিশ সুপারকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ‘দালাল-চক্র’ ভাঙার জন্য বলল রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন। ওই জেলার এক কোয়াক ডাক্তারের মাধ্যমে ওই পরিযায়ী শ্রমিকের স্বামীকে কলকাতার বেসরকারি এক নার্সিংহোমে চিকিৎসা করাতে নিয়ে আসার ঘটনায় এই ‘দালাল-চক্রে’র বিষয়টি স্বাস্থ্য কমিশনের নজরে এসেছে।
মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা পলি বিবির স্বামী মিঠুন মণ্ডলের ক্যানসার ধরা পড়েছিল। চিকিৎসার জন্য তাঁরা স্থানীয় এক কোয়াক ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন। অত্যন্ত গরিব তাঁরা। রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন তথা, ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন-এর চেয়ারম্যান, বিচারপতি (অবসরপ্রাপ্ত) অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় এমনই জানিয়েছেন, ওই কোয়াক ডাক্তার বলেন সার্জারি করতে হবে, এর জন্য চার লাখ টাকা লাগবে। কোনও রকমে দুই লাখ টাকা জোগাড় করা হয়। রোগীকে নিয়ে তখন কলকাতায় এক চিকিৎসকের কাছে আসেন ওই কোয়াক ডাক্তার। তিনিও বলেন অপারেশন করতে হবে। এর পর ব্রডস্ট্রিটের বেসরকারি একটি নার্সিংহোমে পাঠানো হয় রোগীকে। সেখানে ভর্তির সময় ওই কোয়াক ডাক্তারের মাধ্যমে দুই লাখ টাকা জমা করা হয় রোগীর বাড়ির লোকের তরফে। এই নার্সিংহোমে অপারেশন হয়। কিন্তু অপারেশন টেবিলেই রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে এই তাঁর মৃত্যু হয়।
কমিশনের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, এই নার্সিংহোমের বক্তব্য, তাদের বিল হয়েছে ৯০ হাজার টাকা। তারা ৭০ হাজার টাকা পেয়েছে। ওই টাকায় মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে, কারণ রোগীর পরিবারের তরফে আর টাকা দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। কমিশনের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, দেখা গিয়েছে, ওই নার্সিংহোমের বিলে ডাক্তারের জন্য কোনও চার্জ লেখা নেই। এই বিষয়ে ওই চিকিৎসক বলেছেন, তাঁর কাছে কত রোগী আসেন, কে রেফার করেছিলেন, এ সব তাঁর মনে নেই। ওই রোগীর মৃত্যু হয়। রোগীর বাড়ির লোক কান্নাকাটি করছিলেন। তাই তিনি কোনও টাকা নেননি। কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘হাসপাতালে জমা দেওয়া ওই দুই লাখ টাকার মধ্যে এক লাখ তিরিশ হাজার টাকার কোনও হিসাব নেই।’ তিনি জানান, এই অভিযোগের শুনানির দিন কমিশন জানতে পারে, এই অভিযোগের সঙ্গে যে ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছিল, সেটা স্থানীয় একজন পঞ্চায়েত সদস্যের। অভিযোগকারী পলি বিবি ভিন রাজ্যে গিয়েছেন উপার্জনের জন্য। এখানে রয়েছে তাঁর কিশোর-ছেলে।
স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান জানান, ফোনে পঞ্চায়েত সদস্য হিসাবে দাবি করেছেন যে ব্যক্তি, তাঁর উদ্যোগে কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছেন অভিযোগকারী পলি বিবি। ওই ব্যক্তি স্বাস্থ্য কমিশনে জানিয়েছেন, স্থানীয় গ্রামেই থাকেন ওই কোয়াক ডাক্তার। কলকাতার ওই চিকিৎসকের সঙ্গে ওই কোয়াক ডাক্তারের ‘ওঠা-বসা’ রয়েছে। দুই লাখ টাকা জমা দেওয়া হয় হাসপাতালে। ওই চিকিৎসককেও টাকা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই নার্সিংহোমের বক্তব্য কোনও দালালকে তারা চেনে না। তাদের কাছে ওই চিকিৎসক রোগীকে পাঠান, তারা ওই রোগীকে ভর্তি করে নেন। ২০-র বদলে ৪০ হাজার টাকা ছাড় দেওয়ার কথা বলেছে এই নার্সিংহোম। দালাল-চক্র ভাঙার জন্য যাতে পুলিশকে বলা হয়, সেই কথাও বলেছে তারা।’
মৃত রোগীর স্ত্রী কাজ করতে গিয়েছেন ভিন রাজ্যে। মুর্শিদাবাদের গ্রামে থাকে তাঁদের কিশোর বয়সের ছেলে। তার জন্য ওই ৪০ হাজার টাকায় যাতে এনএসসি করিয়ে দেওয়া যায়, সেই জন্য স্থানীয় বিডিওকে অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য কমিশন। বিডিও জানিয়েছে এনএসসি করিয়ে দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই ঘটনার তদন্ত করে এই দালাল-চক্র ভাঙার জন্য মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপারকে আমরা বলেছি।’