২২ অক্টোবর ২০২৫, বুধবার, ৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভোটের আবহে সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন মোদির

আবুল খায়ের
  • আপডেট : ১৭ মে ২০২৪, শুক্রবার
  • / 25

পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ এতদিন বিরোধী দলের নেতারা যে কথা বলতেন এবার মোদির গলায় শোনা গেল সেই সুর। দেশ জুড়ে চলছে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন। এই আবহে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের এক সাক্ষাৎকারে নরেন্দ্র মোদি জানালেন, বিগত দশ বছরে তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বকালে তিনি কেন কোনও প্রেস কনফারেন্স করেন নি। সেই সাক্ষাৎকারে মোদি বলেন, বর্তমানে মিডিয়া নিরেপেক্ষ নয়। তাই তিনি সাংবাদিক বৈঠক করেন না, বেশি সাক্ষাৎকারও দেন না।

টানা তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে নেমেছেন নরেন্দ্র মোদি। গত মঙ্গলবার মহাসমারোহে বারাণসী থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তিনি। বারাণসী কেন্দ্র থেকে গত দু’বার লোকসভা নির্বাচনে জিতেছেন তিনি। জয়ের হ্যাটট্রিকের লক্ষ্যে ফের ময়দানে নেমে পড়েছেন। গত দু’বারের প্রথা মেনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে বারাণসীর কাল ভৈরব মন্দিরে গিয়ে পুজো দেন প্রধানমন্ত্রী। কাল ভৈরবের বিগ্রহের সামনে দাঁড়িয়ে আরতিও করেন তিনি। মন্দিরে মোদির সঙ্গে হাজির ছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে মোদি ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। তখনও তাঁকে দেখা যায়নি কোনও সাংবাদিক সম্মেলনে যোগ দিতে। যখনই সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে তিনি কিছু বলতে চেয়েছেন আলাদা ভিডিওতে বার্তা দিয়েছেন। তবে উনিশের (২০১৯) লোকসভা নির্বাচনের আগে অভিনেতা অক্ষয় কুমারকে একটি অরাজনৈতিক সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন মোদি। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের বারান্দায় বসে ‘খিলাড়ি’কে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে তিনি কতক্ষণ ঘুমান- এই জাতীয় প্রশ্নের উত্তর জানা গিয়েছিল।

তবে চব্বিশের(২০২৪) নির্বাচনের আগে সর্বভারতীয় বৈদ্যুতিন এই সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। আমি গরিব মানুষদের বাড়ি যেতে চাই। আমি বিজ্ঞানভবনে গিয়েও ফিতে কেটে ছবি তুলতে পারি। কিন্তু আমি তা করি না। আমি ঝাড়খণ্ডের একটি ছোট্ট গ্রামে চলে যায়। ছোট প্রকল্পের জন্য কাজ করি।”

একইসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি এক নতুন কর্মসংস্কৃতি এনেছি। সংবাদমাধ্যমের তা পছন্দ হলে বলবে, না হলে বলবে না। সংবাদমাধ্যম এখন আর কোনও আলাদা সত্ত্বা নয়। তাদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নাতীত নয়। আগে জনগণের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র উপায় ছিল সংবাদমাধ্যম কিন্তু এখন সোশাল মিডিয়ার দৌলতে সেখানেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়।” পাশপাশি মোদির স্পষ্ট জবাব, “আমি সংসদে সমস্ত কিছু জানাতে বাধ্য এবং সেখানেই আমি সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি।”

সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে শুধু দেশের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তাই নয়, আন্তর্জাতিকস্তরেও সমালোচিত হয়েছে ‘মোদি জামানা’। বর্তমানে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেস্কে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৫৯-এ। এই সময়কালেই ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জগতে সংযোজিত হয়েছে নতুন শব্দ ‘গোদি মিডিয়া’। যারা সরকারি দল এবং সরকারের সমর্থক। শুধু তাই নয় বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র নেতারা প্রেস কনফারেন্স করে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন কোন কোন বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমের প্যানেল ডিসকাশনে তারা অংশগ্রহণ করবে না।

জাতীয় আন্তর্জাতিক স্তরে যখন দেশের এক অংশের সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তখন নীরব থেকেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু  ভোটের আগে হঠাৎ কী এমন হল সেই প্রধানমন্ত্রীই সংবাদ মাধ্যমের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

 

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ভোটের আবহে সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন মোদির

আপডেট : ১৭ মে ২০২৪, শুক্রবার

পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ এতদিন বিরোধী দলের নেতারা যে কথা বলতেন এবার মোদির গলায় শোনা গেল সেই সুর। দেশ জুড়ে চলছে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন। এই আবহে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের এক সাক্ষাৎকারে নরেন্দ্র মোদি জানালেন, বিগত দশ বছরে তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বকালে তিনি কেন কোনও প্রেস কনফারেন্স করেন নি। সেই সাক্ষাৎকারে মোদি বলেন, বর্তমানে মিডিয়া নিরেপেক্ষ নয়। তাই তিনি সাংবাদিক বৈঠক করেন না, বেশি সাক্ষাৎকারও দেন না।

টানা তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে নেমেছেন নরেন্দ্র মোদি। গত মঙ্গলবার মহাসমারোহে বারাণসী থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তিনি। বারাণসী কেন্দ্র থেকে গত দু’বার লোকসভা নির্বাচনে জিতেছেন তিনি। জয়ের হ্যাটট্রিকের লক্ষ্যে ফের ময়দানে নেমে পড়েছেন। গত দু’বারের প্রথা মেনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে বারাণসীর কাল ভৈরব মন্দিরে গিয়ে পুজো দেন প্রধানমন্ত্রী। কাল ভৈরবের বিগ্রহের সামনে দাঁড়িয়ে আরতিও করেন তিনি। মন্দিরে মোদির সঙ্গে হাজির ছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে মোদি ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। তখনও তাঁকে দেখা যায়নি কোনও সাংবাদিক সম্মেলনে যোগ দিতে। যখনই সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে তিনি কিছু বলতে চেয়েছেন আলাদা ভিডিওতে বার্তা দিয়েছেন। তবে উনিশের (২০১৯) লোকসভা নির্বাচনের আগে অভিনেতা অক্ষয় কুমারকে একটি অরাজনৈতিক সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন মোদি। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের বারান্দায় বসে ‘খিলাড়ি’কে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে তিনি কতক্ষণ ঘুমান- এই জাতীয় প্রশ্নের উত্তর জানা গিয়েছিল।

তবে চব্বিশের(২০২৪) নির্বাচনের আগে সর্বভারতীয় বৈদ্যুতিন এই সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। আমি গরিব মানুষদের বাড়ি যেতে চাই। আমি বিজ্ঞানভবনে গিয়েও ফিতে কেটে ছবি তুলতে পারি। কিন্তু আমি তা করি না। আমি ঝাড়খণ্ডের একটি ছোট্ট গ্রামে চলে যায়। ছোট প্রকল্পের জন্য কাজ করি।”

একইসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি এক নতুন কর্মসংস্কৃতি এনেছি। সংবাদমাধ্যমের তা পছন্দ হলে বলবে, না হলে বলবে না। সংবাদমাধ্যম এখন আর কোনও আলাদা সত্ত্বা নয়। তাদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নাতীত নয়। আগে জনগণের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র উপায় ছিল সংবাদমাধ্যম কিন্তু এখন সোশাল মিডিয়ার দৌলতে সেখানেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়।” পাশপাশি মোদির স্পষ্ট জবাব, “আমি সংসদে সমস্ত কিছু জানাতে বাধ্য এবং সেখানেই আমি সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি।”

সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে শুধু দেশের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তাই নয়, আন্তর্জাতিকস্তরেও সমালোচিত হয়েছে ‘মোদি জামানা’। বর্তমানে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেস্কে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৫৯-এ। এই সময়কালেই ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জগতে সংযোজিত হয়েছে নতুন শব্দ ‘গোদি মিডিয়া’। যারা সরকারি দল এবং সরকারের সমর্থক। শুধু তাই নয় বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র নেতারা প্রেস কনফারেন্স করে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন কোন কোন বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমের প্যানেল ডিসকাশনে তারা অংশগ্রহণ করবে না।

জাতীয় আন্তর্জাতিক স্তরে যখন দেশের এক অংশের সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তখন নীরব থেকেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু  ভোটের আগে হঠাৎ কী এমন হল সেই প্রধানমন্ত্রীই সংবাদ মাধ্যমের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।