২২ অক্টোবর ২০২৫, বুধবার, ৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে ইরানের প্রেসিডেন্টের বিমান, খোঁজ নেই ইব্রাহিম রাইসির

আবুল খায়ের
  • আপডেট : ১৯ মে ২০২৪, রবিবার
  • / 34

পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ দুর্ঘটনায় পড়ল ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার। রবিবার (১৯ মে), ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল জানিয়েছে, এদিন তিনটি হেলিকপ্টারের একটি কনভয় নিয়ে যাচ্ছিলেন ইরানি প্রেসিডেন্ট। ইরানের প্রতিবেশি দেশ, আজারবাইজানে এই তিনটি কপ্টারের মধ্যে একটি দুর্ঘটনার মুখে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট কেমন আছেন, তাঁর কোনও চোট লেগেছে কিনা- এই ঘটনা সম্পর্কে আর কোনও বিশদ জানায়নি ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি। ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলি একে দুর্ঘটনা বলতে নারাজ। দাবি করা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট রাইসিকে নিয়ে হেলিকপ্টারটি জোলফার কাছে এক জায়গায় ‘হার্ড ল্যান্ডিং’ করেছে।

ইরানের সংবাদ সংস্থা, আইআরএনএ জানিয়েছে, এদিন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট, ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন রাইসি। ইরান-আজারবাইজানের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত একটি বাঁধের উদ্বোধন করেন তাঁরা। এরপর ফেরার পথে, দুর্ঘটনার মুখে পড়ে কপ্টারটি। খারাপ আবহাওয়ার কারণে হঠাৎই হেলিকপ্টারটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু সেটি ভেঙে পড়েছে কিনা, সে বিষয়ে এখনও কোনও নিশ্চিত খবর আসেনি। আশঙ্কা বাড়িয়ে আইআরএনএ ও ইরানের একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এখনও অবধি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা যায়নি।

সংবাদসংস্থা রয়টার্স বলছে, একটি নয়, প্রকৃতপক্ষে তিনটি হেলিকপ্টারের কনভয়ে পূর্ব আজারবাইজান থেকে ফিরছিলেন রাইসি। আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের সঙ্গে সীমান্তবর্তী এই এলাকা এমনিতে অত্যন্ত রুক্ষ ও পাহাড়ি। তার ওপর কয়েকদিন ধরেই আবহাওয়া খারাপ ছিল। নিকটবর্তী শহর পূর্ব আজারবাইজানের রাজধানী, ইরানের অন্যতম সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তবরেজ। ফেরার পথেই পাহাড়ি এলাকা দিয়ে ওড়ার সময় ঘন কুয়াশা ও বৃষ্টির মাঝে নিয়ন্ত্রণ হারান একটি হেলিকপ্টারের চালক। কিন্তু সেটি আদৌ ভেঙে পড়েছে কিনা, সেই নিয়ে বিস্তারিত তথ্য এখনও অজানা। রয়টার্সের সূত্র জানিয়েছে, সম্ভবত ওই হেলিকপ্টারেই ছিলেন প্রেসিডেন্ট রাইসি এবং বিদেশমন্ত্রী আবদুল্লাহিয়ান। কিন্তু হেলিকপ্টারটি ভেঙে পড়লেও ঠিক কোথায় সেটি ভেঙেছে এবং রাইসি-সহ বাকিরা নিরাপদে রক্ষা পেয়েছেন কিনা, এখনও সেসব তথ্য জানা যায়নি।

ইরানের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী আহমেদ ওয়াহিদি স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেলকে বলেছেন, হেলিকপ্টারটি নিচে পড়েছে, এই খবর তাঁর কাছে আছে। কিন্তু তার বেশি প্রায় কিছুই জানা নেই। ইতিমধ্যেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকারী দলকে পাঠানো হয়েছে ঘটনাস্থলে। কিন্তু দলের মুখপাত্র বাবাক ইয়েক্তাপারস্ত জানিয়েছেন, তাঁদের উদ্ধারকারী হেলিকপ্টারটি ঘন কুয়াশার কারণে অকুস্থলে পৌঁছতেই পারেনি। অপর একটি সূত্রের দাবি, রাইসি হেলিকপ্টারে ছিলেন না, তিনি নাকি সড়কপথে ফিরছিলেন।

৬৩ বছর বয়সী ইব্রাহিম রাইসি শনিবার আজারবাইজান সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি আজারবাইজানি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যৌথভাবে একটি বাঁধ উদ্বোধন করেন। এমনিতে পড়শি আজারবাইজানের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল নয় ইরানের। আজারবাইজান ইজরায়েলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রেখে চলে। সেটাও ইরানের ঘোর না-পসন্দ। তার পরেই উত্তর ইরানে সফর সেরে রাজধানী তেহরানে ফিরছিলেন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তার মাঝেই ছন্দপতন। প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে পূর্ব আজারবাইজানের পাহাড়ি এলাকায় দুর্ঘটনায় পড়েছে তাঁর কনভয়ের একটি হেলিকপ্টার। একাধিক পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমে খবর, ইরানি বায়ুসেনার হেলিকপ্টার প্রায় সবই বহু পুরনো। লাগাতার পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞার জেরে অত্যাধুনিক যন্ত্রাংশও আমদানি করতে পারে না ইরান। আপাতত ইরানের একাধিক শহরে শুরু হয়েছে প্রার্থনা। সকলেই চাইছেন, সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন প্রেসিডেন্ট।

 

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে ইরানের প্রেসিডেন্টের বিমান, খোঁজ নেই ইব্রাহিম রাইসির

আপডেট : ১৯ মে ২০২৪, রবিবার

পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ দুর্ঘটনায় পড়ল ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার। রবিবার (১৯ মে), ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল জানিয়েছে, এদিন তিনটি হেলিকপ্টারের একটি কনভয় নিয়ে যাচ্ছিলেন ইরানি প্রেসিডেন্ট। ইরানের প্রতিবেশি দেশ, আজারবাইজানে এই তিনটি কপ্টারের মধ্যে একটি দুর্ঘটনার মুখে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট কেমন আছেন, তাঁর কোনও চোট লেগেছে কিনা- এই ঘটনা সম্পর্কে আর কোনও বিশদ জানায়নি ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি। ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলি একে দুর্ঘটনা বলতে নারাজ। দাবি করা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট রাইসিকে নিয়ে হেলিকপ্টারটি জোলফার কাছে এক জায়গায় ‘হার্ড ল্যান্ডিং’ করেছে।

ইরানের সংবাদ সংস্থা, আইআরএনএ জানিয়েছে, এদিন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট, ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন রাইসি। ইরান-আজারবাইজানের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত একটি বাঁধের উদ্বোধন করেন তাঁরা। এরপর ফেরার পথে, দুর্ঘটনার মুখে পড়ে কপ্টারটি। খারাপ আবহাওয়ার কারণে হঠাৎই হেলিকপ্টারটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু সেটি ভেঙে পড়েছে কিনা, সে বিষয়ে এখনও কোনও নিশ্চিত খবর আসেনি। আশঙ্কা বাড়িয়ে আইআরএনএ ও ইরানের একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এখনও অবধি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা যায়নি।

সংবাদসংস্থা রয়টার্স বলছে, একটি নয়, প্রকৃতপক্ষে তিনটি হেলিকপ্টারের কনভয়ে পূর্ব আজারবাইজান থেকে ফিরছিলেন রাইসি। আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের সঙ্গে সীমান্তবর্তী এই এলাকা এমনিতে অত্যন্ত রুক্ষ ও পাহাড়ি। তার ওপর কয়েকদিন ধরেই আবহাওয়া খারাপ ছিল। নিকটবর্তী শহর পূর্ব আজারবাইজানের রাজধানী, ইরানের অন্যতম সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তবরেজ। ফেরার পথেই পাহাড়ি এলাকা দিয়ে ওড়ার সময় ঘন কুয়াশা ও বৃষ্টির মাঝে নিয়ন্ত্রণ হারান একটি হেলিকপ্টারের চালক। কিন্তু সেটি আদৌ ভেঙে পড়েছে কিনা, সেই নিয়ে বিস্তারিত তথ্য এখনও অজানা। রয়টার্সের সূত্র জানিয়েছে, সম্ভবত ওই হেলিকপ্টারেই ছিলেন প্রেসিডেন্ট রাইসি এবং বিদেশমন্ত্রী আবদুল্লাহিয়ান। কিন্তু হেলিকপ্টারটি ভেঙে পড়লেও ঠিক কোথায় সেটি ভেঙেছে এবং রাইসি-সহ বাকিরা নিরাপদে রক্ষা পেয়েছেন কিনা, এখনও সেসব তথ্য জানা যায়নি।

ইরানের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী আহমেদ ওয়াহিদি স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেলকে বলেছেন, হেলিকপ্টারটি নিচে পড়েছে, এই খবর তাঁর কাছে আছে। কিন্তু তার বেশি প্রায় কিছুই জানা নেই। ইতিমধ্যেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকারী দলকে পাঠানো হয়েছে ঘটনাস্থলে। কিন্তু দলের মুখপাত্র বাবাক ইয়েক্তাপারস্ত জানিয়েছেন, তাঁদের উদ্ধারকারী হেলিকপ্টারটি ঘন কুয়াশার কারণে অকুস্থলে পৌঁছতেই পারেনি। অপর একটি সূত্রের দাবি, রাইসি হেলিকপ্টারে ছিলেন না, তিনি নাকি সড়কপথে ফিরছিলেন।

৬৩ বছর বয়সী ইব্রাহিম রাইসি শনিবার আজারবাইজান সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি আজারবাইজানি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যৌথভাবে একটি বাঁধ উদ্বোধন করেন। এমনিতে পড়শি আজারবাইজানের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল নয় ইরানের। আজারবাইজান ইজরায়েলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রেখে চলে। সেটাও ইরানের ঘোর না-পসন্দ। তার পরেই উত্তর ইরানে সফর সেরে রাজধানী তেহরানে ফিরছিলেন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তার মাঝেই ছন্দপতন। প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে পূর্ব আজারবাইজানের পাহাড়ি এলাকায় দুর্ঘটনায় পড়েছে তাঁর কনভয়ের একটি হেলিকপ্টার। একাধিক পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমে খবর, ইরানি বায়ুসেনার হেলিকপ্টার প্রায় সবই বহু পুরনো। লাগাতার পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞার জেরে অত্যাধুনিক যন্ত্রাংশও আমদানি করতে পারে না ইরান। আপাতত ইরানের একাধিক শহরে শুরু হয়েছে প্রার্থনা। সকলেই চাইছেন, সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন প্রেসিডেন্ট।