২০ অগাস্ট ২০২৫, বুধবার, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খড়গপুর আইআইটিতে ফের মেধাবী ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার, ৪ মাসে ৩ ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে চাঞ্চল্য

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ৪ মে ২০২৫, রবিবার
  • / 148

পুবের কলম প্রতিবেদক, খড়গপুর: ফের চাঞ্চল্য খড়গপুর আইআইটিতে। এটা নিয়ে খড়গপুর আইআইটিতে ৪ মাসের মধ্যে ৩ জন মেধাবী পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যু। আত্মহত্যা নাকি খুন তা এখনও স্পষ্ট নয়, ঘটনায় শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়েছে। রবিবার ভোরে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মোহম্মদ আসিফ কামার (২১)-এর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত ছাত্র বিহারের শিওহর জেলার গারাহিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি আইআইটি খড়গপুরের মদন মোহন মালব্য হলের এসডিএস ব্লকের ১৩৫ নম্বর রুমে থাকতেন।

সূত্রের খবর, শনিবার রাত থেকে আসিফের রুম বন্ধ ছিল। সহপাঠীরা বার বার ডাকাডাকি করলেও কোনও সাড়া না পাওয়ায় খবর দেওয়া হয় আইআইটি কর্তৃপক্ষ ও পুলিশকে। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায় আসিফকে। সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

আইআইটি সূত্রে খবর, আসিফ ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ব্যাগপত্র গুছিয়েও রেখেছিলেন। এরপরেও আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত কেন, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা রহস্য। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, দিল্লির এক তরুণীর সঙ্গে ভিডিয়ো কলে কথা বলতে বলতে আত্মহত্যা করেন আসিফ। সেই তরুণী নাকি আইআইটি কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান।

আরও পড়ুন: আইআইটি খড়গপুরে আত্মহত্যা রুখতে উদ্যোগ: সরানো হচ্ছে ফ্যান

এরপরই সহপাঠী এবং নিরাপত্তাকর্মীরা চেষ্টা করেন দরজা খোলার, কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে যায়। জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি। সেই সূত্র ধরে ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন: আইআইটিতে এত আত্মহত্যা কেন? সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে কর্তৃপক্ষ

খড়গপুর আইআইটি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার জানিয়েছেন, ‘আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি। সেই সূত্র ধরেই তদন্ত চলছে। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।’ এদিকে, খবর পেয়ে আসিফের পরিবারের সদস্যরা রবিবার দুপুরে খড়গপুরে পৌঁছন। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিজনরা। আসিফ যে আত্মঘাতী হতে পারে, মানতে পারছে তাঁরা।

আরও পড়ুন: অ্যান্টি র‍্যাগিং নিয়মাবলি পালন না করা তালিকায় শীর্ষস্থানীয়  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও

এই ঘটনার পর আবারও প্রশ্ন উঠছে আইআইটি খড়গপুরের নিরাপত্তা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ব্যবস্থা নিয়ে। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি এক ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল ক্যাম্পাস থেকেই। এরপর এপ্রিল মাসেও ঘটেছে আরেক ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু। এই নিয়ে চার মাসে তিন জন ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে আইআইটি খড়গপুরে।

এই মৃত্যুর ঘটনার জেরে ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান আইআইটি খড়গপুরে একের পর এক ছাত্র মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে মানসিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পড়াশোনার চাপে ও মানসিক অবসাদে ভুগে বহু ছাত্র এমন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তাই এখনই আইআইটির মতো প্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলিং ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর জোর দেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন অনেকে। প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের তরফে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেদিকেই এখন নজর সকলের।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

খড়গপুর আইআইটিতে ফের মেধাবী ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার, ৪ মাসে ৩ ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে চাঞ্চল্য

আপডেট : ৪ মে ২০২৫, রবিবার

পুবের কলম প্রতিবেদক, খড়গপুর: ফের চাঞ্চল্য খড়গপুর আইআইটিতে। এটা নিয়ে খড়গপুর আইআইটিতে ৪ মাসের মধ্যে ৩ জন মেধাবী পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যু। আত্মহত্যা নাকি খুন তা এখনও স্পষ্ট নয়, ঘটনায় শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়েছে। রবিবার ভোরে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মোহম্মদ আসিফ কামার (২১)-এর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত ছাত্র বিহারের শিওহর জেলার গারাহিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি আইআইটি খড়গপুরের মদন মোহন মালব্য হলের এসডিএস ব্লকের ১৩৫ নম্বর রুমে থাকতেন।

সূত্রের খবর, শনিবার রাত থেকে আসিফের রুম বন্ধ ছিল। সহপাঠীরা বার বার ডাকাডাকি করলেও কোনও সাড়া না পাওয়ায় খবর দেওয়া হয় আইআইটি কর্তৃপক্ষ ও পুলিশকে। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায় আসিফকে। সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

আইআইটি সূত্রে খবর, আসিফ ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ব্যাগপত্র গুছিয়েও রেখেছিলেন। এরপরেও আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত কেন, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা রহস্য। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, দিল্লির এক তরুণীর সঙ্গে ভিডিয়ো কলে কথা বলতে বলতে আত্মহত্যা করেন আসিফ। সেই তরুণী নাকি আইআইটি কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান।

আরও পড়ুন: আইআইটি খড়গপুরে আত্মহত্যা রুখতে উদ্যোগ: সরানো হচ্ছে ফ্যান

এরপরই সহপাঠী এবং নিরাপত্তাকর্মীরা চেষ্টা করেন দরজা খোলার, কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে যায়। জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি। সেই সূত্র ধরে ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন: আইআইটিতে এত আত্মহত্যা কেন? সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে কর্তৃপক্ষ

খড়গপুর আইআইটি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার জানিয়েছেন, ‘আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি। সেই সূত্র ধরেই তদন্ত চলছে। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।’ এদিকে, খবর পেয়ে আসিফের পরিবারের সদস্যরা রবিবার দুপুরে খড়গপুরে পৌঁছন। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিজনরা। আসিফ যে আত্মঘাতী হতে পারে, মানতে পারছে তাঁরা।

আরও পড়ুন: অ্যান্টি র‍্যাগিং নিয়মাবলি পালন না করা তালিকায় শীর্ষস্থানীয়  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও

এই ঘটনার পর আবারও প্রশ্ন উঠছে আইআইটি খড়গপুরের নিরাপত্তা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ব্যবস্থা নিয়ে। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি এক ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল ক্যাম্পাস থেকেই। এরপর এপ্রিল মাসেও ঘটেছে আরেক ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু। এই নিয়ে চার মাসে তিন জন ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে আইআইটি খড়গপুরে।

এই মৃত্যুর ঘটনার জেরে ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান আইআইটি খড়গপুরে একের পর এক ছাত্র মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে মানসিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পড়াশোনার চাপে ও মানসিক অবসাদে ভুগে বহু ছাত্র এমন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তাই এখনই আইআইটির মতো প্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলিং ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর জোর দেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন অনেকে। প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের তরফে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেদিকেই এখন নজর সকলের।