০১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিকাশ ভবনে পুলিশ ধৈর্য ও সংযমের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়েছে, সাংবাদিক সম্মেলনে জানাল এডিজি জাভেদ শামিম

চামেলি দাস
  • আপডেট : ১৬ মে ২০২৫, শুক্রবার
  • / 324

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: চাকরি ফেরত চেয়ে বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবন ঘেরাওয়ের ডাক দেয় ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’। যা ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সে দিন দুপুর থেকেই উত্তপ্ত হতে থাকে পরিস্থিতি। সন্ধের পর কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বিকাশ ভবন চত্বর। এই ঘটনায় একদিকে বিক্ষোভকারীদের আহত হওয়ার খবর যেমন সামনে এসেছে ঠিক তেমনি আক্রান্ত হয়েছেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরাও।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করেন রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইন শৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম এবং এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার। মিডিয়াতে প্রচার পেতেই বিকাশ ভবনে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন চাকরিহারা শিক্ষকরা। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হলে মিডিয়াতে সেভাবে প্রচার হবে না। তাই তারা হয়তো হিংসার পথ বেছে নিতে বাধ্য হন। এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে বিকাশ ভবনে বৃহস্পতিবার পুলিশের লাঠিচার্জ ও ধুন্ধুমারকাণ্ড প্রসঙ্গে এমনই ব্যাখ্যা দিলেন রাজ্য পুলিশের এডিজি আইন শৃঙ্খলা জাভেদ শামিম। একজন সিনিয়র অফিসার-সহ ১৯ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন এই সংঘর্ষে। তিনি বলেন, বিকাশ ভবনে আটকে থাকা অফিসার ও কর্মচারীদের বাইরে বের করতে যতটুকু বল প্রয়োগ প্রয়োজন তা করেছে পুলিশ। তিনি আরও বলেন, ‘‘আন্দোলন নিয়ে পুলিশের কিছু বলার নেই, আমরা চাকরিহারাদের বেদনা বুঝি। গতকালের পুলিশ অ্যাকশন, শুধুমাত্র আটকে পড়া কর্মচারীদের বাইরে বার করার জন্য করা হয়েছে। অফিসের গেট ভেঙে, অফিসের চত্বর দখল করা যায় না। শিক্ষকরা সমাজের স্তম্ভ, যা আন্দোলন চলছে, সেখানে সহযোগিতা করার হলে ভবিষ্যতে করব।’’

আরও পড়ুন: গুজব ছড়ানো নিয়ে হুঁশিয়ারি ADG আইনশৃঙ্খলার, দোষীদের পাতাল থেকে বের করে শাস্তির নিদান

অপরদিকে রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার বলেন, পুলিশ ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছে। পুলিশ সংযত ছিল। গণতান্ত্রিক উপায়ে যেমন চাকরিহারাদের আন্দোলনের অধিকার আছে, তেমনই অফিস ছুটির পর বিকাশ ভবনের কর্মীদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার অধিকার আছে। আর সেই আটকে পড়া মানুষদের অফিস থেকে বের করতে গিয়েই যে পরিস্থিতি তৈরি হয়, তার মোকাবিলা করতে গিয়েই পুলিশকে ন্যূনতম বলপ্রয়োগ করতে হয়।

আরও পড়ুন: প্রজাতন্ত্র দিবসে রাষ্ট্রপতি পদকে সম্মানিত এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম

তিনি আরও বলেন, ‘‘চাকরিহারা শিক্ষকরা গত ১০ দিন ধরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান চালাচ্ছিলেন। কিন্তু গতকাল বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে বিকাশভবনের ভিতরে ঢোকেন। তখনও পুলিশ কিছু করেনি, ধৈর্য ও সংযমের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়েছে। পুলিশ অসহায় ছিল না। পুলিশ ৭ ঘন্টা ধরে ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছে। সংযত থেকেছে। কিন্তু সেদিন অফিস ছুটির পরও ওই চত্বরে অনেক অফিস আছে, সেই সব অফিসের কর্মচারীরা অফিস থেকে বেরোতে পারছিলেন না। প্যানিক কল যায় পুলিশের কাছে। কেউ কেউ অসুস্থ বোধ করছিলেন। আটকে পড়েছিলেন সন্তানসম্ভবা এক কর্মীও। পুলিশের তরফে আবেদন করা হয়। কিন্তু  ততবার আন্দোলনকারীরা সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন’’। তিনি আরও বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নামে ৫০০ লোককে কোথাও সারারাত আটকে রাখা যায় না।

আরও পড়ুন: হাওড়ায় পরিস্থিতি অনেক নিয়ন্ত্রণে, উস্কানিমূলক ভিডিও পেলেই কড়া ব্যবস্থা: এডিজি আইন-শৃঙ্খলা জাভেদ শামিম

সুপ্রতিম সরকার বলেন, ‘‘যখন কর্মচারীদের বাইরে বেরনোর রাস্তা করে দেওয়া হচ্ছিল, তখন আন্দোলনকারীরা পুলিশের উপর চড়াও হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ,বোতল ছোঁড়া হয়। আটকে পড়া কর্মীদের, কারও মা অসুস্থ, কারও বাড়িতে বাচ্চা আছে, কাউকে অনেক দূরে ফিরতে হয়, তাঁদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা  আটকে রাখা হয়। তখন সেই আন্দোলন গণতান্ত্রিক থাকে না- মন্তব্য পুলিশের। লাঠিচার্জের আগে যাবতীয় প্রোটোকল মানা হয়েছে, পুলিশ বারবার মাইকে অনুরোধ করেছে।

পুলিশের দাবি,‘‘বিকাশ ভবনের আটকে থাকা কর্মচারীদেরও তো একটা অধিকার আছে। তাঁরা তো কোনও অন্যায় কাজ করেননি, তাঁরা কাজ করতে এসেছিলেন’’। একইসঙ্গে যারা যারা পুলিশকে আক্রমণ করেছে সিসিটিভি ফুটেজ, ভিডিয়ো ফুটেজ দেখে তাদের চিহ্নিত করে যারা এর নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা পুলিশ নেবে বলে জানিয়ে দিলেন রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ)। উল্লেখ্য, বিকাশ ভবনে  প্রায় ৫৫টি দফতরের অফিস রয়েছে। যেখানে ৫০০-৬০০ কর্মী কাজ করেন।

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বিকাশ ভবনে পুলিশ ধৈর্য ও সংযমের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়েছে, সাংবাদিক সম্মেলনে জানাল এডিজি জাভেদ শামিম

আপডেট : ১৬ মে ২০২৫, শুক্রবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: চাকরি ফেরত চেয়ে বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবন ঘেরাওয়ের ডাক দেয় ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’। যা ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সে দিন দুপুর থেকেই উত্তপ্ত হতে থাকে পরিস্থিতি। সন্ধের পর কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বিকাশ ভবন চত্বর। এই ঘটনায় একদিকে বিক্ষোভকারীদের আহত হওয়ার খবর যেমন সামনে এসেছে ঠিক তেমনি আক্রান্ত হয়েছেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরাও।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করেন রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইন শৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম এবং এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার। মিডিয়াতে প্রচার পেতেই বিকাশ ভবনে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন চাকরিহারা শিক্ষকরা। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হলে মিডিয়াতে সেভাবে প্রচার হবে না। তাই তারা হয়তো হিংসার পথ বেছে নিতে বাধ্য হন। এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে বিকাশ ভবনে বৃহস্পতিবার পুলিশের লাঠিচার্জ ও ধুন্ধুমারকাণ্ড প্রসঙ্গে এমনই ব্যাখ্যা দিলেন রাজ্য পুলিশের এডিজি আইন শৃঙ্খলা জাভেদ শামিম। একজন সিনিয়র অফিসার-সহ ১৯ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন এই সংঘর্ষে। তিনি বলেন, বিকাশ ভবনে আটকে থাকা অফিসার ও কর্মচারীদের বাইরে বের করতে যতটুকু বল প্রয়োগ প্রয়োজন তা করেছে পুলিশ। তিনি আরও বলেন, ‘‘আন্দোলন নিয়ে পুলিশের কিছু বলার নেই, আমরা চাকরিহারাদের বেদনা বুঝি। গতকালের পুলিশ অ্যাকশন, শুধুমাত্র আটকে পড়া কর্মচারীদের বাইরে বার করার জন্য করা হয়েছে। অফিসের গেট ভেঙে, অফিসের চত্বর দখল করা যায় না। শিক্ষকরা সমাজের স্তম্ভ, যা আন্দোলন চলছে, সেখানে সহযোগিতা করার হলে ভবিষ্যতে করব।’’

আরও পড়ুন: গুজব ছড়ানো নিয়ে হুঁশিয়ারি ADG আইনশৃঙ্খলার, দোষীদের পাতাল থেকে বের করে শাস্তির নিদান

অপরদিকে রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার বলেন, পুলিশ ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছে। পুলিশ সংযত ছিল। গণতান্ত্রিক উপায়ে যেমন চাকরিহারাদের আন্দোলনের অধিকার আছে, তেমনই অফিস ছুটির পর বিকাশ ভবনের কর্মীদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার অধিকার আছে। আর সেই আটকে পড়া মানুষদের অফিস থেকে বের করতে গিয়েই যে পরিস্থিতি তৈরি হয়, তার মোকাবিলা করতে গিয়েই পুলিশকে ন্যূনতম বলপ্রয়োগ করতে হয়।

আরও পড়ুন: প্রজাতন্ত্র দিবসে রাষ্ট্রপতি পদকে সম্মানিত এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম

তিনি আরও বলেন, ‘‘চাকরিহারা শিক্ষকরা গত ১০ দিন ধরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান চালাচ্ছিলেন। কিন্তু গতকাল বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে বিকাশভবনের ভিতরে ঢোকেন। তখনও পুলিশ কিছু করেনি, ধৈর্য ও সংযমের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়েছে। পুলিশ অসহায় ছিল না। পুলিশ ৭ ঘন্টা ধরে ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছে। সংযত থেকেছে। কিন্তু সেদিন অফিস ছুটির পরও ওই চত্বরে অনেক অফিস আছে, সেই সব অফিসের কর্মচারীরা অফিস থেকে বেরোতে পারছিলেন না। প্যানিক কল যায় পুলিশের কাছে। কেউ কেউ অসুস্থ বোধ করছিলেন। আটকে পড়েছিলেন সন্তানসম্ভবা এক কর্মীও। পুলিশের তরফে আবেদন করা হয়। কিন্তু  ততবার আন্দোলনকারীরা সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন’’। তিনি আরও বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নামে ৫০০ লোককে কোথাও সারারাত আটকে রাখা যায় না।

আরও পড়ুন: হাওড়ায় পরিস্থিতি অনেক নিয়ন্ত্রণে, উস্কানিমূলক ভিডিও পেলেই কড়া ব্যবস্থা: এডিজি আইন-শৃঙ্খলা জাভেদ শামিম

সুপ্রতিম সরকার বলেন, ‘‘যখন কর্মচারীদের বাইরে বেরনোর রাস্তা করে দেওয়া হচ্ছিল, তখন আন্দোলনকারীরা পুলিশের উপর চড়াও হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ,বোতল ছোঁড়া হয়। আটকে পড়া কর্মীদের, কারও মা অসুস্থ, কারও বাড়িতে বাচ্চা আছে, কাউকে অনেক দূরে ফিরতে হয়, তাঁদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা  আটকে রাখা হয়। তখন সেই আন্দোলন গণতান্ত্রিক থাকে না- মন্তব্য পুলিশের। লাঠিচার্জের আগে যাবতীয় প্রোটোকল মানা হয়েছে, পুলিশ বারবার মাইকে অনুরোধ করেছে।

পুলিশের দাবি,‘‘বিকাশ ভবনের আটকে থাকা কর্মচারীদেরও তো একটা অধিকার আছে। তাঁরা তো কোনও অন্যায় কাজ করেননি, তাঁরা কাজ করতে এসেছিলেন’’। একইসঙ্গে যারা যারা পুলিশকে আক্রমণ করেছে সিসিটিভি ফুটেজ, ভিডিয়ো ফুটেজ দেখে তাদের চিহ্নিত করে যারা এর নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা পুলিশ নেবে বলে জানিয়ে দিলেন রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ)। উল্লেখ্য, বিকাশ ভবনে  প্রায় ৫৫টি দফতরের অফিস রয়েছে। যেখানে ৫০০-৬০০ কর্মী কাজ করেন।