১৩ দিনের মাথায় ফের প্রকাশ্যে এক নারকীয় হত্যাকাণ্ড
প্রকাশ্যে নারকীয় হত্যাকাণ্ড, দলিত ব্যক্তিকে জীবন্ত পুড়িয়ে খুন গুজরাতে

- আপডেট : ৩০ মে ২০২৫, শুক্রবার
- / 89
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: বিজেপি শাসিত রাজ্যে ফের প্রকাশ্যে বর্বরতা। এবার দলিত ব্যক্তিকে জীবন্ত পুড়িয়ে খুন করা হল গুজরাতে। নিহতের নাম হরজিভাই দেবভাই সোলাঙ্কি (৭০)। ঘটনাটি ঘটেছে গুজরাটের পাটান জেলার সাঁওতালপুর তালুকের জাখোটা গ্রামে।
এদিন জাখোটা গ্রামের এক নির্জন এলাকা থেকে দলিত ব্যক্তির অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। এলাকায় দলিত সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যে একের পর এক দলিত নির্যাতন ও ক্রমবর্ধমান বর্বরতা নিয়ে ফের প্রশ্নের মুখে পড়েছে প্যাটেল সরকার। কোথায় দলিত নিরাপত্তা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, পেপলার নিকটবর্তী জাখোটা গ্রামে প্রথম পোড়া দেহটি দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। দেহটিকে মহিলাদের পোশাক দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছিল। এমনকি তার পায়ে নূপুর পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই নৃশংস খুনের ঘটনা চাউর হতেই গ্রামে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। গ্রামের একাংশ বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। এক পুলিশ কর্তা বলেন, “আমরা খুনের মোটিভ খতিয়ে দেখছি। এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা না হলেও বেশ কয়েকজন গ্রামবাসীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”
হরজিভাই সোলাঙ্কি পেশায় খেতমজুর ছিলেন। এলাকায় সহজ সরল ও সত্যবাদী ব্যক্তিকে হিসেবে পরিচিত। তাঁকে নৃশংসভাবে খুন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না গ্রামবাসী থেকে পরিবার। মৃতের ছেলে দিলীপ সোলাঙ্কি বলেন, “আমার বাবা কখনও কাউকে আঘাত করেননি। এমনকি কখনো কাউকে উচ্চস্বরে কথাও বলেননি। আমি জানি না কেন বাবাকে এইভাবে খুন করা হল। আমরা বাবার খুনের প্রতিশোধ নয়, ন্যায়বিচার চাই।” জাখোটা গ্রামের এক প্রবীণ ব্যক্তির কথায়, “উনি সব সময় অন্যকে সাহায্য করতেন। এমন মৃত্যু তার প্রাপ্য ছিল না। আমরা সবাই এখন আতঙ্কে আছি।”
জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় আইন শৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় এলাকায় পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। আশপাশের গ্রামগুলির স্পর্শকাতর জায়গাগুলিতেও পুলিশ প্রিকেট বাড়ানো হয়েছে। দলিত অধিকার সংগঠন, মানবাধিকার কর্মী এবং সামাজিক সংগঠনগুলি এই ঘটনার নিন্দা করে ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় দলিত সমাজকর্মী রমেশ পারমার বলেন, “এটি কেবল একটি হত্যাকাণ্ড নয়। এটি আমাদের সম্প্রদায়কে অপমান ও চুপ করিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে একটি ঘৃণ্য অপরাধ। এই ধরনের নিষ্ঠুরতা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, বর্ণভিত্তিক বৈষম্য কেবল জীবন্ত নয়, বর্তমান সরকারি মদদে এই বর্বরতা ভয়াবহ আঁকার ধারন করছে।” গুজরাতে দলিতরা প্রত্যেকদিনই হিংসা, সামাজিক বয়কট ও অপমানের শিকার হচ্ছেন বলেও সরব হয়েছেন সমাজকর্মীরা।
দলিত নেতা তথা ভাদগামের কংগ্রেস বিধায়ক জিগনেশ মেভানি রাজ্য সরকারকে আক্রমণ শানিয়ে বলেছেন, “গুজরাতে এত উন্নয়ন যোগ্যে পরও রাজ্যটি দলিতদের জন্য নরকে পরিণত হচ্ছে।” এমন নারকীয় হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল থেকে বিজেপির শীর্ষ নেতারা।
এবিষয়ে দলিত নেতা বিজেপি সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, “দলিত হত্যা, ধর্ষণ, অপমান নিয়ে বিজেপি সরকার নীরব। কবে তারা জেগে উঠবে? যখন পুরো সম্প্রদায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে? দলিতদের সুরক্ষায দিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থতা রাজ্য সরকার।” এদিকে রাজ্যে লাগাতার দলিত নির্যাতন ও খুন নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে (এনএইচআরসি)তদন্ত করতে গুজরাটে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে বেশ কয়েকটি দলিত অধিকার সংগঠন। পাশাপাশি বিচার বিভাগীয় তদন্তের আর্জি জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছেও স্মারকলিপি পাঠিয়েছেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, ১৬ মে এক উচ্চবর্ণের কিশোরকে ‘বেটা’ বলে সম্বোধন করায় এক দলিত যুবককে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। নীলেশ রাঠোর নামের ওই যুবককে ঘিরে ধরে নৃশংসভাবে নির্যাতন চালানো হয়। তারপর পিটিয়ে খুন করা হয়। এই নৃশংস ঘটনার ১৩ দিনের মাথায় ফের প্রকাশ্যে আসল আরও এক নারকীয় হত্যাকাণ্ড। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, ডবল ইঞ্জিনের রাজ্যে কোথায় দলিত নিরাপত্তা? কোথায় দলিত সুরক্ষা?