ফালাকাটায় হাতির হানায় একই পরিবারের তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু

- আপডেট : ৩১ মে ২০২৫, শনিবার
- / 118
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটা ব্লকের কুঞ্জনগর এলাকায় বুনো হাতির আক্রমণ। হাতির আক্রমণে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৩৫ দিনের এক শিশুও রয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন শিশুটির বাবা ও দিদিমা।
সূত্র অনুযায়ী, গভীর রাতে গাছের ডাল ভাঙার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় মনোজিৎ দাসের। আতঙ্কিত হয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে হাতির অবস্থান বোঝার চেষ্টা করছিলেন তিনি। ঠিক তখনই একটি বুনো হাতি অতর্কিতে তার সামনে এসে পড়ে এবং তীব্র আঘাত হানে তার শরীরের নিম্নাংশে। মনোজিৎ দাস (৩২) ঘটনাস্থলেই গুরুতর আহত হন।
ছেলের আর্তনাদে সাড়া দিয়ে ছুটে আসেন মনোজিতের মা, ৬৫ বছর বয়সী মাখনরানি দাস। কোলে ছিল সদ্যোজাত নাতনি মনীষা। বারান্দা থেকে বের হতেই ওই হাতিটি তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই মারা যান বৃদ্ধা মাখনরানি দাস। গুরুতর জখম হয় নবজাতক মনীষা।
স্থানীয়দের সহযোগিতায় বনদফতরে গাড়িতে করে মনোজিৎ ও মনীষাকে ফালাকাটা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে চিকিৎসকরা দু’জনকেই মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনার পর থেকেই গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে তীব্র আতঙ্ক। রাতভর ঘুমোতে পারেননি এলাকাবাসী। ভোর ৪টা থেকে শোকাহত পরিবারের বাড়িতে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। সকাল গড়াতে গড়াতে সেই সংখ্যা পৌঁছে যায় হাজারের ঘরে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছোন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় দাস এবং আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ মানিক রায়। পুলিশ রাতেই বাড়ি থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় মাখনরানি দাসের দেহ।
তবে সকাল ৯টা পর্যন্ত বনদফতর বা প্রশাসনের কোনও প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে না পৌঁছোনোয় ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয়রা। তারা ২০০ মিটারের মধ্যে দু’টি জায়গায় পথ অবরোধে সামিল হন। বনদফতরের টহলদারির গাফিলতির অভিযোগও তোলেন তারা।
ঘটনা সম্পর্কে আলিপুরদুয়ারের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার নবজিৎ দে জানান, “সরকারি নিয়ম অনুযায়ী মৃতদের পরিবারকে আজ অথবা আগামিকালের মধ্যে ১৫ লক্ষ টাকার আর্থিক সাহায্যের চেক তুলে দেওয়া হবে। সঙ্গে সরকারি চাকরি ও অন্যান্য প্রযোজ্য সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হবে। বনদপ্তর এই দুঃসময়ে পরিবারটির পাশে আছে।”
অবশেষে, সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে শুরু হওয়া পথ অবরোধ চলে টানা তিন ঘণ্টা। বিকেল ৩টার দিকে ফালাকাটার বিডিও অনীক রায় এবং ফালাকাটা থানার আইসি অভিষেক ভট্টাচার্যের হস্তক্ষেপে অবরোধ প্রত্যাহার করেন এলাকাবাসী। এই মর্মান্তিক ঘটনার পর কুঞ্জনগরসহ আশপাশের গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।