এলন মাস্কের স্টারলিংককে ভারতে ব্যবসার অনুমতি কেন্দ্রের
- আপডেট : ৬ জুন ২০২৫, শুক্রবার
- / 41
পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ ভারতে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা চালুর জন্য প্রয়োজনীয় স্যাটকম লাইসেন্স পেল ইলন মাস্কের সংস্থা স্টারলিঙ্ক। টেলিকম মন্ত্রকের তরফে গ্লোবাল মোবাইল পার্সোনাল কমিউনিকেশন বাই স্যাটেলাইট পারমিট দেওয়া হয়েছে স্টারলিঙ্ককে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য। এর আগে এয়ারটেলের ইউটেলস্যাট ওয়ানওয়েব এবং জিও স্যাটেলাইট কমিউনিকেশনস এই ধরনের পারমিট পেয়েছে। মাস্কের সংস্থা স্টারলিঙ্ক, তৃতীয় সংস্থা হিসাবে এই পারমিট পেল।
স্টারলিঙ্ক হল স্পেস এক্স-এর একটি উদ্যোগ, যা পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে থাকা হাজার হাজার স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দ্রুতগতির ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান করে। প্রচলিত স্যাটেলাইট পরিষেবার তুলনায় এর সুবিধা হল কম লেটেন্সি এবং স্থিতিশীল সংযোগ, যা স্ট্রিমিং, গেমিং এবং ভিডিও কলের মতো কাজে অসাধারণ সুবিধা দেবে। ভারতের প্রত্যন্ত ও গ্রামীণ এলাকায়, যেখানে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা পৌঁছায় না, সেখানে স্টারলিঙ্ক একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
কেন্দ্রীয় টেলিযোগাযোগমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া জানিয়েছেন, স্টারলিঙ্ক শিগগিরই ভারতীয় জাতীয় মহাকাশ প্রচার ও অনুমোদন কেন্দ্র থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে। এরপর সরকার স্পেকট্রাম বরাদ্দ করবে এবং তারপর থেকে স্টারলিঙ্কের পরিষেবা দ্রুত গতিতে পুরোদমে চালু হবে। সূত্রের খবর, আগামী ১২ মাসের মধ্যে প্রথম ধাপে শহরাঞ্চলে ৬০০-৭০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সহ ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার গ্রাহকের জন্য পরিষেবা শুরু হতে পারে।
স্টারলিঙ্ক ভারতে প্রতিযোগিতামূলক দামে পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, স্টারলিঙ্কের আনলিমিটেড ডেটা প্ল্যান মাসে মাত্র ৮৪০ টাকা থেকে শুরু হতে পারে, যা লঞ্চ অফার হিসেবে দেওয়া হবে। তবে, শহরাঞ্চলের গ্রাহকদের জন্য টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া প্রতি মাসে ৫০০ টাকা অতিরিক্ত চার্জের প্রস্তাব দিয়েছে, যা মোট দাম কিছুটা বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়া, স্টারলিঙ্কের হার্ডওয়্যার কিট (যেমন, স্যাটেলাইট ডিশ) কেনার জন্য এককালীন খরচ হতে পারে।
স্টারলিঙ্ক ভারতে রিলায়েন্স জিও, ভারতী এয়ারটেল সাপোর্টেড ইউটেলস্যাট ওয়ানওয়েব এবং গ্লোবালস্টারের মতো সংস্থার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে। ইতিমধ্যে জিও এবং এয়ারটেলের সঙ্গে স্টারলিঙ্কের অংশীদারিত্ব চুক্তি হয়েছে, যার ফলে তাদের বিস্তৃত ডিলার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে স্টারলিঙ্কের পরিষেবা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই অংশীদারিত্ব বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
যদিও স্টারলিঙ্কের সম্ভাবনা বিপুল, তবু কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। জিও এবং এয়ারটেলের মতো টেলিকম জায়ান্টরা স্যাটেলাইট স্পেকট্রামের কম দাম নিয়ে আপত্তি তুলেছে। তারা মনে করে, টেলিকম সংস্থাগুলোর তুলনায় স্যাটেলাইট প্রদানকারীদের জন্য কম খরচে স্পেকট্রাম দেওয়া হলে তাদের ব্যবসার উপর প্রভাব পড়তে পারে।
এই পরিষেবা ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ করে, যেসব এলাকায় তার বা টাওয়ার বসানো কঠিন, সেখানে স্টারলিঙ্কের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সাশ্রয়ী এবং নির্ভরযোগ্য সমাধান হতে পারে। সংস্থাটির লক্ষ্য ভারতে ১ কোটি গ্রাহক অর্জন করা, যা দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারের ধরনকে বদলে দিতে পারে।
মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্স-এর সঙ্গে ইতিমধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে রিলায়েন্স জিও ও এয়ারটেল। চুক্তি অনুযায়ী স্টারলিঙ্কের ইন্টারনেট সার্ভিসের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি জিও ও এয়ারটেলের রিটেল স্টোরেই পাওয়া যাবে। এমনকি স্টারলিঙ্কের ইন্টারনেট সংযোগও দেবে দুই সংস্থা। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গ্রাহকদের ধরে রাখতেই অতীতের তিক্ততা ভুলে মাস্কের সংস্থার সঙ্গে গাঁটছাড়া বেঁধেছে মুকেশ আম্বানির সংস্থা। মাস্কের সংস্থা স্টারলিঙ্কের সঙ্গে গাঁটছাড়া বাঁধা নিয়ে ভারতী এয়ারটেলের যুক্তি ছিল, গ্রামীণ এলাকার স্কুল, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দিতেই এমন পদক্ষেপ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্টারলিঙ্কের সঙ্গে চুক্তির জেরে রিলায়েন্স জিও এবং এয়ারটেলের পরিষেবা আরও উন্নত হবে। মাস্কের সংস্থার স্যাটেলাইট সংযোগ দুই সংস্থার বর্তমান নেটওয়ার্ককে আরও শক্তিশালী করবে।