ইসরাইলি হামলায় তেহরানে আহত কাশ্মীরি ২ পড়ুয়া, চরম উৎকণ্ঠায় পরিবার

- আপডেট : ১৭ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার
- / 54
শ্রীনগর, ১৬ জুন: ইরান-ইসরাইল সংঘাতের আবহে তেহরানে আটকে পড়েছে বহু ভারতীয় পড়ুয়া। তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। বহু পড়ুয়ার পরিবার কেন্দ্রের কাছে তাঁদের সন্তানদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার আর্জি জানিয়েছেন। এরমধ্যেই ইরান-ইসরাইল সংঘাতে সোমবার দুই ভারতীয় পড়ুয়া আহত হওয়ার খবর মিলেছে। জানা গিয়েছে, রবিবার (১৫ জুন) তেহরান ইউনিভার্সিটি অব মেডিকেল সায়েন্সেসের হুজ্জাতদোস্ত ছাত্রাবাসে ছিলেন দুই কাশ্মীরি শিক্ষার্থী। ইসরাইলি বিমান হামলায় ওই দুই শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে খবর। সন্তানদের আহত হওয়ার খবর পেয়ে চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে ছাত্রের পরিবার।
শ্রীনগরের আরেক পড়ুয়া ২১ বছর বয়সী ফৈজান আলি। বর্তমানে ইরানের কেরমান ইউনিভার্সিটি অফ মেডিক্যালে পাঠরত সে। ওই পড়ুয়াও উদ্বিগ্ন হয়ে বলেছে, সামনেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা ছিল। কিন্তু পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এখন অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। আলির কথায়, “আমাদের বলা হয়েছে যে আমরা চাইলে বাড়ি ফিরে যেতে পারি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কাশ্মীরের ১২০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে আমরা যেখানে রয়েছি, সেই জায়গাটি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। তেহরান পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে।”
সংঘাতের আবহে তেহরানের পরিস্থিতির বর্ণনা করে মেডিক্যালের পড়ুয়া জানায়, “বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও পরদিন সকাল থেকে পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নেয়। চারদিকে আতঙ্কের ছবি। আমরা গুলির শব্দ শুনেছি। দেশজুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ। যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা রাজধানী তেহরানে থাকে তারা সত্যিই আতঙ্কিত। ইসরাইল তেহরানকে লক্ষ্য করে সবচেয়ে বেশি গোলাবর্ষণ চালিয়েছে। ফলে ওই এলাকায় থাকা শিক্ষার্থীদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়াও একটি চ্যালেঞ্জ। তবে তাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে শুনেছি। আমাদেরও সোমবার সন্ধ্যায় বা মঙ্গলবার সকালের মধ্যে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে বলে শুনেছি।”
এদিকে সোমবার (১৬ জুন) জম্মু ও কাশ্মীর স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (জেকেএসএ) এক বিবৃতি প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে কাশ্মীরি শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে সরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে। জেকেএসএ বলেছে, “আমরা খবর পেয়েছি বহু শিক্ষার্থী ইরানের বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়াশোনা করেন। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সামরিক স্থাপনা এবং কৌশলগত স্থানগুলির কাছাকাছি অবস্থিত। যা সংঘাতের আবহে বিপজ্জনক। তারা ক্রমাগত বিমান হামলা, সাইরেন এবং চারপাশে সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধির খবর দিচ্ছে। গতকাল রাত থেকে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হতে থাকে। কিছু শিক্ষার্থী এমন শহরেও অবস্থান করছে, যেখানে সরাসরি ইসরাইলি বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে। এতে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত এবং সম্পূর্ণ অসহায় বোধ করছে।”
সূত্রের খবর, সংঘাতের আবহে ইরানে আটকে পড়া ভারতীয় শিক্ষার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের। দেড় হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী সেখানে আটকা রয়েছে বলে খবর। এবিষয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বলে তাঁর উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার কয়েক ঘণ্টা পরই বিদেশমন্ত্রকের তরফে বিবৃতি জারি করা হয়েছে। সোমবার ভারতের বিদেশমন্ত্রক এক বিবৃতিতে বলেছে, নয়াদিল্লি উভয় দেশের নাগরিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এদিন বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “তেহরানের ভারতীয় দূতাবাস ক্রমাগত সুরক্ষা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে এবং ইরানে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে দূতাবাসের সুবিধার্থে শিক্ষার্থীদের ইরানের অভ্যন্তরে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। অন্যান্য সম্ভাব্য বিকল্পগুলিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।