ট্রাম্প বনাম মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্ট: ইরানে হামলা ‘সম্পূর্ণ সফল’ না কি মাত্র ৬ মাস পিছিয়ে পড়া?

- আপডেট : ২৮ জুন ২০২৫, শনিবার
- / 247
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জোর দিয়েছেন যে, ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর ওপর চালানো মার্কিন হামলা “সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছে” তেহরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ক্ষমতা। তবে, মার্কিন সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (DIA)-র একটি গোপন প্রাথমিক রিপোর্ট সেই দাবি পুরোপুরি খারিজ করে দিয়েছে।
জুন ২১ তারিখ, ইসরাইলের সঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফোর্ডো, নাতাঞ্জ এবং ইসফাহানে অবস্থিত তিনটি পরমাণু কেন্দ্রে মিসাইল ও ‘বান্কার-বাস্টার’ বোমা নিক্ষেপ করে। হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, “ইরানের মূল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।”
তবে DIA-এর রিপোর্ট বলছে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি এই হামলায় মাত্র ছয় মাস পিছিয়ে পড়েছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ইরান আগেই তার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলেছিল— যা তেহরানও দাবি করেছে।
হোয়াইট হাউস এই রিপোর্টকে “ভুল” ও “গোপন তথ্য ফাঁস” বলে নস্যাৎ করেছে। প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এক বিবৃতিতে বলেন, “এই গোপন রিপোর্টের ফাঁস হওয়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও সাহসী বৈমানিকদের হেয় করার অপচেষ্টা। যারা ১৪টি ৩০,০০০-পাউন্ড বোমা নিখুঁতভাবে নিক্ষেপ করেছে, তারা জানে এর মানেই সম্পূর্ণ ধ্বংস।”
ডাচ রাজধানী দ্য হেগ-এ ন্যাটো সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “আমাদের হামলা খুব দ্রুত ঘটেছে, ফলে ইরানের কিছু সরানোর সুযোগই ছিল না। ওই সব জায়গা খুব গভীরে এবং বিপজ্জনক— সরানো সহজ নয়।”
হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে বুধবার প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, “Iran’s Nuclear Facilities Have Been Obliterated – and Suggestions Otherwise are Fake News.”
ইসরাইলের পরমাণু কমিশন বলেছে, ফোর্ডোর কেন্দ্রীয় পরিকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। CIA-এর ডিরেক্টর জন র্যাটক্লিফ বলেছেন, “আমাদের বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে ইরানের পরমাণু সক্ষমতা দীর্ঘমেয়াদে বিপর্যস্ত হয়েছে।” DNI প্রধান তুলসি গাবার্ড বলেছেন, “এই অভিযান সফল। একাধিক মূল স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে, যা পুনর্নির্মাণে কয়েক বছর লেগে যাবে।”
২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে গোয়েন্দা বিভাগ নিশ্চিত হলেও ট্রাম্প তা মানেননি। “হয়তো চীন করেছে, কিংবা কেউ বিছানায় বসে।” ২০১৮ সালে হেলসিংকি বৈঠকে পুতিনের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, “আমি আমার গোয়েন্দা সংস্থাকে বিশ্বাস করি, তবে পুতিনের কথা খুবই জোরালো।”
২০১৯ সালে গোয়েন্দা বিভাগ জানায়, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে না এবং উত্তর কোরিয়া তাদের অস্ত্র ত্যাগ করবে না। ট্রাম্প পাল্টা বলেন, “তাদের উচিত স্কুলে ফিরে যাওয়া।”
২০১৮ সালে ট্রাম্প সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার করেন, দাবি করেন ISIS পরাজিত। অথচ গোয়েন্দা সংস্থা তখনও তাদের সক্রিয় হুমকি হিসেবে দেখছিল।
ট্রাম্প Tren de Aragua গ্যাংকে “আগ্রাসী বাহিনী” বলে ঘোষণা করে ডিপোর্টেশনের নির্দেশ দেন। কিন্তু National Intelligence Council জানায়, গ্যাংটির মাদুরো সরকারের সঙ্গে কোন যোগ নেই।
মার্চে DNI গাবার্ড কংগ্রেসে বলেন, “ইরান এখনো পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে না।” কিন্তু জুনে, G7 সম্মেলন ছেড়ে বেরিয়ে এসে ট্রাম্প বলেন, “আমার মনে হয় ইরান খুব কাছাকাছি চলে এসেছে।“
ট্রাম্পের গোয়েন্দা বিভাগ নিয়ে অনাস্থার শিকড় ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত তদন্তকে “উইচ-হান্ট” আখ্যা দেওয়া থেকেই। ২০১৮ সালে বলেন, “আমি ক্লিনটনকে সহজেই হারিয়েছি। এটা ছিল পরিষ্কার একটি ক্যাম্পেইন।”