০১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নেবে ‘জীবন্ত জেলি’!

চামেলি দাস
  • আপডেট : ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার
  • / 40

সুইৎজারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা বানিয়েছেন সবুজ রঙের থকথকে ‘জীবন্ত জেলি’! বস্তুটি দেখতে যেমন অভিনব, কাজেও তেমনি অসাধারণ। গবেষকদের দাবি;এটি বছরে অন্তত ১৮ কিলোগ্রাম কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারে। তুলনা করলে বোঝা যায়, একটি প্রাপ্তবয়স্ক পাইন গাছ যেখানে বছরে ২০ থেকে ৪০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত কার্বন শোষণ করতে পারে, এই ছোট্ট জেলি একাই সেই পরিমাণের কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারে।

‘নেচার কমিউনিকেশন’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এই ‘জীবন্ত জেলি’র কথা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, বিজ্ঞানীরা অণুজীব দিয়ে এমন একটি জেলি তৈরি করেছেন, যার ভেতরে প্রাণ আছে। জেলির মূল উপাদান হল এক ধরনের আদিম নীল-সবুজ শৈবাল;সায়ানোব্যাক্টেরিয়া, যারা সালোকসংশ্লেষ করতে পারে। জল, আলো ও বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে তারা অক্সিজেন তৈরি করতে পারে, গাছের মতোই।

তবে এই অণুজীবগুলোকে ধরেবেঁধে রাখতে প্রয়োজন হয়েছিল একটি নির্দিষ্ট কাঠামো। সেখানেই বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করেছেন হাইড্রোজেল নামক জেলির মতো পদার্থ। এই হাইড্রোজেলের মধ্যে সায়ানোব্যাক্টেরিয়াগুলিকে ঢুকিয়ে ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারের সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ আকৃতির জেলি। বাইরে থেকে দেখে সাধারণ জেলির মতো, কিন্তু ভেতরে তার প্রাণবন্ত কাণ্ডারি;সায়ানোব্যাক্টেরিয়া;নিয়ত কাজ করে চলেছে।

জেলিটি যে জায়গায় থাকবে, সেখানকার বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস শুষে নেবে। ঘরের ভেতরে রাখলেও বাতাস থাকবে অনেকটাই বিশুদ্ধ। আর রাস্তাঘাট, কারখানা এলাকা বা যানবাহনে ঠাসা শহরের মোড়ে মোড়ে ছড়িয়ে দিলে? গবেষকদের আশা, ধীরে ধীরে দূষণের মাত্রা নেমে আসবে চোখে পড়ার মতো।

এই আবিষ্কারের একটি বড় দিক হল কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানো। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে রান্না, গাড়ি চালানো, বিদ্যুৎ ব্যবহার, শিল্প-কারখানার কাজ;সবকিছুতেই যেভাবে গ্রিনহাউস গ্যাস, বিশেষত কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হচ্ছে, তাতে প্রতিটি মানুষেরই একটা ‘কার্বন ছাপ’ থেকে যাচ্ছে পরিবেশে। সেই ছাপ মুছে ফেলতে সাহায্য করতে পারে এই জীবন্ত জেলি।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নেবে ‘জীবন্ত জেলি’!

আপডেট : ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার

সুইৎজারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা বানিয়েছেন সবুজ রঙের থকথকে ‘জীবন্ত জেলি’! বস্তুটি দেখতে যেমন অভিনব, কাজেও তেমনি অসাধারণ। গবেষকদের দাবি;এটি বছরে অন্তত ১৮ কিলোগ্রাম কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারে। তুলনা করলে বোঝা যায়, একটি প্রাপ্তবয়স্ক পাইন গাছ যেখানে বছরে ২০ থেকে ৪০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত কার্বন শোষণ করতে পারে, এই ছোট্ট জেলি একাই সেই পরিমাণের কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারে।

‘নেচার কমিউনিকেশন’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এই ‘জীবন্ত জেলি’র কথা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, বিজ্ঞানীরা অণুজীব দিয়ে এমন একটি জেলি তৈরি করেছেন, যার ভেতরে প্রাণ আছে। জেলির মূল উপাদান হল এক ধরনের আদিম নীল-সবুজ শৈবাল;সায়ানোব্যাক্টেরিয়া, যারা সালোকসংশ্লেষ করতে পারে। জল, আলো ও বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে তারা অক্সিজেন তৈরি করতে পারে, গাছের মতোই।

তবে এই অণুজীবগুলোকে ধরেবেঁধে রাখতে প্রয়োজন হয়েছিল একটি নির্দিষ্ট কাঠামো। সেখানেই বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করেছেন হাইড্রোজেল নামক জেলির মতো পদার্থ। এই হাইড্রোজেলের মধ্যে সায়ানোব্যাক্টেরিয়াগুলিকে ঢুকিয়ে ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারের সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ আকৃতির জেলি। বাইরে থেকে দেখে সাধারণ জেলির মতো, কিন্তু ভেতরে তার প্রাণবন্ত কাণ্ডারি;সায়ানোব্যাক্টেরিয়া;নিয়ত কাজ করে চলেছে।

জেলিটি যে জায়গায় থাকবে, সেখানকার বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস শুষে নেবে। ঘরের ভেতরে রাখলেও বাতাস থাকবে অনেকটাই বিশুদ্ধ। আর রাস্তাঘাট, কারখানা এলাকা বা যানবাহনে ঠাসা শহরের মোড়ে মোড়ে ছড়িয়ে দিলে? গবেষকদের আশা, ধীরে ধীরে দূষণের মাত্রা নেমে আসবে চোখে পড়ার মতো।

এই আবিষ্কারের একটি বড় দিক হল কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানো। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে রান্না, গাড়ি চালানো, বিদ্যুৎ ব্যবহার, শিল্প-কারখানার কাজ;সবকিছুতেই যেভাবে গ্রিনহাউস গ্যাস, বিশেষত কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হচ্ছে, তাতে প্রতিটি মানুষেরই একটা ‘কার্বন ছাপ’ থেকে যাচ্ছে পরিবেশে। সেই ছাপ মুছে ফেলতে সাহায্য করতে পারে এই জীবন্ত জেলি।