বিধানসভা ভোটের আগে সরকারি খরচে লাগাম, প্রকল্প অনুমোদনে নতুন ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করল নবান্ন

- আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার
- / 251
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই ব্যয় সংকোচের পথে হাঁটছে রাজ্য সরকার। রাজকোষের উপর চাপ সামাল দিতে এবার সরকারি প্রকল্পে অর্থ অনুমোদনের ঊর্ধ্বসীমা কাটছাঁট করল নবান্ন। সোমবার (৮ জুলাই) এক নতুন নির্দেশিকা জারি করে রাজ্য সরকার জানিয়ে দিল— কোন দফতর সর্বাধিক কত টাকা পর্যন্ত প্রকল্প অনুমোদন দিতে পারবে। এই নির্দেশিকা ২০২৩ সালের পূর্ববর্তী নির্দেশ সংশোধন করে জারি হয়েছে অর্থসচিব প্রভাত কুমার মিশ্রের স্বাক্ষর সহ।
নবান্নের নতুন নির্দেশ অনুযায়ী, পূর্ত, সেচ, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ, পুর ও নগরোন্নয়ন— এই গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলির জন্য সর্বাধিক অনুমোদনের পরিমাণ ৫ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৩ কোটি টাকা করা হয়েছে। নতুন প্রকল্প হোক বা চলমান প্রকল্পের পরবর্তী ধাপ— সব ক্ষেত্রেই এই ৩ কোটি টাকার ঊর্ধ্বসীমা প্রযোজ্য হবে।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন, সুন্দরবন উন্নয়ন এবং পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের খরচ অনুমোদনের সীমা কমিয়ে করা হয়েছে ১ কোটি টাকা, যা আগে ছিল ৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এখানেও ২ কোটি টাকার বড়সড় কাটছাঁট হয়েছে।
আবাসন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (MSME), এবং তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বসীমা ধার্য হয়েছে ৭৫ লক্ষ টাকা। অন্যদিকে, বাদবাকি দফতরগুলোর ক্ষেত্রে প্রকল্প অনুমোদনের সর্বোচ্চ সীমা ৫০ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রতিটি প্রকল্পেই সংশ্লিষ্ট দফতরের উপদেষ্টার সম্মতি এবং সিলমোহর আবশ্যক করা হয়েছে।
নবান্ন সূত্রের খবর, বেশ কিছু দফতর অপ্রয়োজনীয় খরচ করছে এবং কাজের রিভিউ বা মূল্যায়নও সঠিক ভাবে হচ্ছে না। এই অবস্থায় রাজ্য কোষাগারে আর্থিক চাপ বাড়ছে। কেন্দ্রের একাধিক প্রকল্প— যেমন ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা, সড়ক যোজনা— তে অর্থ বন্ধ হওয়ায় সেই খরচ রাজ্য সরকারকেই বহন করতে হচ্ছে।
তার উপর রয়েছে রাজ্যের নিজস্ব জনকল্যাণমূলক প্রকল্প যেমন— লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী— যেগুলির জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় হয় রাজ্যের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিভিন্ন মঞ্চ থেকে বারবার এই আর্থিক চাপের কথা উল্লেখ করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে আয়োজিত পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে আয়োজিত সেই বৈঠকে রাজ্যের প্রাপ্য অর্থ এবং কেন্দ্রীয় প্রকল্পে সমন্বয়ের বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরতে পারেন তিনি।
এই আর্থিক কড়াকড়ির সিদ্ধান্ত শুধু প্রশাসনিক দিক থেকেই নয়, রাজনৈতিকভাবে ভোটের আগে সরকারের ব্যয় পরিচালনার কৌশল হিসাবেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।