মুসলিয়ার যোগ নিয়েও উঠছে প্রশ্ন
সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমশ জটিল হচ্ছে নিমিশা মামলা, সংযমের আর্জি মায়ের

- আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার
- / 51
পুবের কলম, তিরুবনন্তপুরম: ফাঁসির পক্ষে আওয়াজ উঠবে তাও আবার ভারতের কেরল থেকে এটা ছিল সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত ঘটনা। বিশেষ করে নিমিশার পরিবার আত্মীয় পরিজন ও তাঁকে বাঁচানোর জন্য যারা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তাদের কাছে। ইয়েমেনে নিহতের এক ভাই-এর আরবি ভাষায় নিমিশাকে ক্ষমা নয় এমন ফেসবুক মন্তব্য কেরলে ঝড়ের গতিতে ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকে আরবি ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ও মালায়লাম অনুবাদও দিয়ে দেয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। নৃশংস হত্যার বদলা হত্যা বলেই মন্তব্য করেই ইয়েমেনের নাগরিক।
সেই সঙ্গে মিডিয়া ভুল তথ্য প্রচার করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এরপর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁসির পক্ষে মন্তব্যও করতে থাকেন অনেকে। অনেকে ধর্মীয় নেতা মুসলিয়ারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কেরলে আবুবকর মুসলিয়ারের সমালোচক গোষ্ঠী বলে পরিচিত সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধর্মীয় নেতার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
অনেকে ইংরেজির সঙ্গে আরবিতে লিখে ফাঁসির পক্ষেই মত দিয়েছেন। নিহতের ভাইকে রক্তপণ নিতে মানাও করছেন অনেকে। কেরলের এক ইউটিউবার নিহতের ভাইয়ের বক্তব্য বেশি প্রচার করেন। তিনি আবার এক সময় মুসলিম লিগের যুব সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সেজন্য মুসলিয়ারের বেরেলভি সমর্থকরাও প্রশ্ন তুলছেন। চলছে জবাব ও পাল্টা জবাব।
ইয়েমেনে ও ভারতে সেভ নিমিশা এ্যাকশান কমিটিতে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের মধ্যে অনেকে ধর্মীয় নেতা মুসলিয়ারের দৌত্য পছন্দ করেন না বলে জানিয়েছেন। অনেকে আবার মন্তব্য করছেন নিমিশার যদি সত্যই মুক্তি হয় তাহলে সব ক্রেডিট চলে যাবে এই ধর্মীয় গোষ্ঠীর দিকে। ভারতে আবুবকর মুসলিয়ার এবং ইয়েমেনের সর্বজন শ্রদ্ধেয় সুফি শাইখ হাবিব উমারের দিকে। হাবিব উমারকে ইয়েমেনে দেশের প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর মতো গুরুত্ব দেওয়া হয় আর নিহতের পরিবার এই সুফি সাধকের অন্ধভক্ত বলেও জানা যাচ্ছে।
রক্তপণ নিয়ে মধ্যস্থতাকারীরা জানাচ্ছেন নিহতের এক ভাই বেঁকে বসলেও তারা এখনও চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু মিডিয়াতে বিরূপ মন্তব্য দেখার পর এই পরিবারের সদস্যরা বিগড়ে যেতে পারেন। নিমিশার মা এই মুহূর্তে ইয়েমেনে রয়েছেন একজনের আশ্রয়ে। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার সকলের কাছে আবেদন জানিয়েছেন সংযম বজায় রাখতে। তিনি জানিয়েছেন এমন মন্তব্য যেন না করা হয় যাতে আলোচনার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় একেবারে। অনেক চেষ্টার পর আলোচনার সুযোগ পাওয়া গিয়েছে। নিমিশার মা বলেছেন নিহত তালাল তার পুত্রের মতো। তার মৃত্যুতে তিনিও আহত হয়েছেন। তাদের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি রয়েছে।
মিডিয়ায় আরও একটি খবর গুরুত্ব পাচ্ছে যে কেরলের এক ব্যবসায়ী নিমিশার জন্য মুক্তিপণের অর্থ আরও বেশি দিতে রাজি আছেন তাঁর শর্ত যদি মুসলিয়ারকে এই দৌত্য থেকে দূরে রাখা হয়। উপসাগরীয় অঞ্চলে থাকা কেরলের মানুষদের কয়েকটি সংগঠনও সামনে এসেছে যদি তাদের কোনও সাহায্য প্রয়োজন হয়। ইয়েমেনের মুফতি হাবিব উমর বিন হাফিজ যিনি তারিমের দারুল মুস্তাফার প্রতিষ্ঠাতা তিনি আবার মুসলিয়ারের প্রতি দারুণ ভাবে শ্রদ্ধাভাজন। মুসলিয়ারের কথাতেই তিনি উদ্যোগী হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কেরলের মিডিয়াকে।
এখন যদি তাদের এই মানবিক প্রচেষ্টার সমালোচনা হয় তারা পিছিয়ে গেলে বানচাল হয়ে যেতে পারে নিমিশার মার্জনার উদ্যোগ। তারা বলছেন এটা কোনও শরীয়াহ বিরোধী কাজ নয়। রক্তপণ নিয়ে মার্জনার কথা বলা আছে ইয়েমেনের আইনেও। তাই সব পক্ষকে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকেও মধ্যস্থতাকারীদের বলা হয়েছে নীরবতা পালন করতে। কেননা ভারত সরকার মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়ে দিয়েছে এই মুহূর্তে সরকারিভাবে তাদের কিছুই করার নেই একমাত্র বোঝাপড়ার মাধ্যমেই বাঁচানো যেতে পারে নিমিশার প্রাণ।