০১ অক্টোবর ২০২৫, বুধবার, ১৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পরিবর্তনের পর শান্তিপ্রিয় এলাকা শাসন, দুঃস্থ ছাত্রী তানিয়ার এমএ ভর্তিতে সহায়তা শাসন থানার আইসির

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২ অগাস্ট ২০২৫, শনিবার
  • / 102

রফিকুল হাসান, শাসন: একদা উত্তর ২৪ পরগনার জেলার ‘মজিদ মাস্টারের শাসন’ এলাকা ছিল সন্ত্রাস কবলিত। রাজনৈতিক হানাহানিতে রাজ্য ছাড়িয়ে দেশের রাজনীতিতে জায়গা করে নিয়েছিল শাসন। সেসময় গুলি বোমার লড়াই ছিল যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। ২০১১ সালে পরিবর্তনের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে এলাকার আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে ২০১৩ সালে বারাসাত থানা ভেঙে শাসন থানা প্রতিষ্ঠা হয়।

তারপর বেশ কয়েক বছর, বিধ্যাধরী নদী দিয়ে বয়ে গিয়েছে জোয়ার ভাটা। গুলি, বোমা নয় শাসন এলাকার নতুন প্রজন্ম হাতে তুলে নিয়েছে বই, খাতা, কলম। তাঁদেরই একজন খড়িবাড়ির মুদিয়া গ্রামের তানিয়া পারভিন। কলকাতার লেকটাউন গার্লস কলেজ থেকে এবছর বিএ তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছে। আর কিছুদিনের মধ্যেই বিএ সিক্স সেমিস্টারের রেজাল্ট প্রকাশ হলেই এমএ ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে।

আরও পড়ুন: ভিন্ন রাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের উপর নির্যাতন, মৃত্যু, বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া, পথে তৃণমূল কংগ্রেস

কিন্তু তানিয়ার বাবা পীর মহম্মদ দিনমজুরি করে এবং মা লায়লা বিবি স্থানীয় স্কুলে মিড ডে মিলের রান্নার কর্মী। তাদের মেয়ে তানিয়ার স্বপ্ন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ করবে। কিন্তু দিনমজুর বাবার পক্ষে মেয়ের উচ্চশিক্ষার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এদিকে লোনের ঝামেলায় স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা নিতেও নারাজ তানিয়ার বাবা পির মহম্মদ।

আরও পড়ুন: ঘোজাডাঙ্গা সীমান্তে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকার সোনা উদ্ধার

আর এই খবর পৌঁছতেই এমএ ভর্তি হওয়ার জন্য শনিবার তানিয়ার বাড়িতে গিয়ে আর্থিক সহায়তা প্রদান করলেন শাসন থানার আইসি আসিফ সানি। এদিন তিনি তানিয়ার বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবার সঙ্গে দেখা করেন এবং মেয়ের পড়াশুনার খবর নিয়ে অল্প বয়সে বিয়ে না দিয়ে উচ্চ শিক্ষায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

আরও পড়ুন: রাস্তাঘাট, ড্রেন ও লাইটের সমস্যার কথা আমাদের পাড়া আমাদের সমাধানে

পাশাপাশি তানিয়ার হাতে এমএ ভর্তির জন্য আর্থিক সহায়তা তুলে দিয়ে উচ্চশিক্ষায় এগিয়ে যেতে উৎসাহ প্রদান করেন। তিনি আরো জানান উচ্চশিক্ষার জন্য যদি কখনো সহযোগিতার প্রয়োজন হয় তারজন্য তাঁকে জানাতে বলেছে। এছাড়া রাজ্য সরকার এর কন্যাশ্রী ও বিভিন্ন স্কলারশিপের যে সুবিধা আছে তার সুযোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন আইসি।

শাসন থানার বড় বাবু বর্ষার জল ডিঙিয়ে নিজে বাড়ি এসে মেয়ের উচ্চশিক্ষার জন্য খরচ দিয়ে যাবে তা ভাবতেই পারে নি বলে অকপটে স্বীকার করেন তানিয়ার বাবা পীর মহম্মদ ও মা লায়লা বিবি। তাঁরা জানান থানার বড়বাবুর এই সাহায্য আমাদের জন্য খুব কাজে লাগবে। ভালো লাগছে। মেয়ে পড়াশুনা করে এগিয়ে যাক। ওর ইচ্ছে ‘দিদিমনি’ (শিক্ষিকা) হবে।

 

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

পরিবর্তনের পর শান্তিপ্রিয় এলাকা শাসন, দুঃস্থ ছাত্রী তানিয়ার এমএ ভর্তিতে সহায়তা শাসন থানার আইসির

আপডেট : ২ অগাস্ট ২০২৫, শনিবার

রফিকুল হাসান, শাসন: একদা উত্তর ২৪ পরগনার জেলার ‘মজিদ মাস্টারের শাসন’ এলাকা ছিল সন্ত্রাস কবলিত। রাজনৈতিক হানাহানিতে রাজ্য ছাড়িয়ে দেশের রাজনীতিতে জায়গা করে নিয়েছিল শাসন। সেসময় গুলি বোমার লড়াই ছিল যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। ২০১১ সালে পরিবর্তনের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে এলাকার আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে ২০১৩ সালে বারাসাত থানা ভেঙে শাসন থানা প্রতিষ্ঠা হয়।

তারপর বেশ কয়েক বছর, বিধ্যাধরী নদী দিয়ে বয়ে গিয়েছে জোয়ার ভাটা। গুলি, বোমা নয় শাসন এলাকার নতুন প্রজন্ম হাতে তুলে নিয়েছে বই, খাতা, কলম। তাঁদেরই একজন খড়িবাড়ির মুদিয়া গ্রামের তানিয়া পারভিন। কলকাতার লেকটাউন গার্লস কলেজ থেকে এবছর বিএ তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছে। আর কিছুদিনের মধ্যেই বিএ সিক্স সেমিস্টারের রেজাল্ট প্রকাশ হলেই এমএ ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে।

আরও পড়ুন: ভিন্ন রাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের উপর নির্যাতন, মৃত্যু, বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া, পথে তৃণমূল কংগ্রেস

কিন্তু তানিয়ার বাবা পীর মহম্মদ দিনমজুরি করে এবং মা লায়লা বিবি স্থানীয় স্কুলে মিড ডে মিলের রান্নার কর্মী। তাদের মেয়ে তানিয়ার স্বপ্ন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ করবে। কিন্তু দিনমজুর বাবার পক্ষে মেয়ের উচ্চশিক্ষার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এদিকে লোনের ঝামেলায় স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা নিতেও নারাজ তানিয়ার বাবা পির মহম্মদ।

আরও পড়ুন: ঘোজাডাঙ্গা সীমান্তে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকার সোনা উদ্ধার

আর এই খবর পৌঁছতেই এমএ ভর্তি হওয়ার জন্য শনিবার তানিয়ার বাড়িতে গিয়ে আর্থিক সহায়তা প্রদান করলেন শাসন থানার আইসি আসিফ সানি। এদিন তিনি তানিয়ার বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবার সঙ্গে দেখা করেন এবং মেয়ের পড়াশুনার খবর নিয়ে অল্প বয়সে বিয়ে না দিয়ে উচ্চ শিক্ষায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

আরও পড়ুন: রাস্তাঘাট, ড্রেন ও লাইটের সমস্যার কথা আমাদের পাড়া আমাদের সমাধানে

পাশাপাশি তানিয়ার হাতে এমএ ভর্তির জন্য আর্থিক সহায়তা তুলে দিয়ে উচ্চশিক্ষায় এগিয়ে যেতে উৎসাহ প্রদান করেন। তিনি আরো জানান উচ্চশিক্ষার জন্য যদি কখনো সহযোগিতার প্রয়োজন হয় তারজন্য তাঁকে জানাতে বলেছে। এছাড়া রাজ্য সরকার এর কন্যাশ্রী ও বিভিন্ন স্কলারশিপের যে সুবিধা আছে তার সুযোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন আইসি।

শাসন থানার বড় বাবু বর্ষার জল ডিঙিয়ে নিজে বাড়ি এসে মেয়ের উচ্চশিক্ষার জন্য খরচ দিয়ে যাবে তা ভাবতেই পারে নি বলে অকপটে স্বীকার করেন তানিয়ার বাবা পীর মহম্মদ ও মা লায়লা বিবি। তাঁরা জানান থানার বড়বাবুর এই সাহায্য আমাদের জন্য খুব কাজে লাগবে। ভালো লাগছে। মেয়ে পড়াশুনা করে এগিয়ে যাক। ওর ইচ্ছে ‘দিদিমনি’ (শিক্ষিকা) হবে।