১৪ অগাস্ট ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কেন্দ্র সরকারের বঞ্চনার কারণেই রুগ্ন দশা তিলপাড়া জলাধার ও সেতুর : মানস

মারুফা খাতুন
  • আপডেট : ১৩ অগাস্ট ২০২৫, বুধবার
  • / 31

কৌশিক সালুই, সিউড়ি : এবার তিলপাড়া জলাধার এবং সেতুর রুগ্ন দশা নিয়ে সরাসরি বিজেপি শাসিত কেন্দ্র সরকারের বাংলার প্রতি বঞ্চনা এবং বিমাতৃসুলভ আচরণের দিকে আঙুল তুললেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভূঁইয়া। মঙ্গলবার সেচমন্ত্রী জলাধারের মেরামতির কাজ পর্যবেক্ষণ করেন। পাশাপাশি রাজ্যের সমস্ত জলাধার এবং সংলগ্ন ব্রিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

রাজ্যের সেচ দফতরের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া গত সোমবার সন্ধ্যায় বীরভূম সফরে আসেন। রাতে তিলপাড়া জলাধার ও সেতুর রুগ্ন দশা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন। মঙ্গলবার তিনি তিলপাড়ার মেরামতির কাজ পর্যবেক্ষণ করেন। সঙ্গে ছিলেন জেলাশাসক বিধান রায়সহ রাজ্য প্রশাসন ও সেচ দফতরের আধিকারিকেরা। সেচমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, ‘২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে সেচ দফতরের পক্ষ থেকে এই জলাধার ও সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।

আরও পড়ুন: রাজ্যের সেচমন্ত্রীর হাত ধরে জয়নগরের ধোসা থেকে কুলতলির কেল্লা পর্যন্ত বেহাল রাস্তার উদ্বোধন

ডাউন স্ট্রিমের ওয়াটার ডিভাইডার দেওয়ালে প্রথম সূক্ষ্ম ফাটলের বিষয়টি নজরে আসে। রাজ্য সরকার প্রকল্পটি নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করে কেন্দ্র সরকারের কাছে আবেদন জানায়। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও সেই আবেদন মঞ্জুর করেনি কেন্দ্র সরকার। কেন্দ্র সরকার অনুমতি দিলে এই প্রকল্পের জন্য বিশ্ব ব্যাংক থেকে ৭০ শতাংশ বিশেষ ঋণ পাওয়া যেত, বাকি ৩০ শতাংশ রাজ্য সরকারকে বহন করতে হতো।

বাধ্য হয়েই রাজ্য সরকার নিজ তহবিল থেকে এই রুগ্ন জলাধার সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নেয়। কাজও শুরু হয়। বীরভূম এবং প্রতিবেশী ঝাড়খন্ড রাজ্যে অতিবৃষ্টিতে যে সামান্য মেরামতির কাজ হয়েছিল তা জলে ধুয়ে যায়। এখানে আগের সংস্কারের কাজে বিজেপি যে দুর্নীতির অভিযোগ করেছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কোনও ঠিকাদারকে অগ্রিম টাকা দেওয়া হয় না। কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর দেওয়া হয়। এখানে রাজনীতি করা হচ্ছে। বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার ১০০ দিনের কাজের টাকা, আবাস যোজনা টাকা, পানীয় জলের টাকা সবকিছুরই বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের সাধ্যমত সমস্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য মাত্র ৪৩২ কোটি টাকা কেন্দ্র সরকার বরাদ্দ করেছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য।

ঝাড়খন্ড ও বিহার থেকে মালদা ও মুর্শিদাবাদ জেলায় যে সমস্ত নদীগুলি আসছে তা থেকে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। ওই দুটি জেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য তিন রাজ্য মিলে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তার জন্য রাজ্য সরকার ১৫০০ কোটি টাকা প্রকল্প অনুমোদন করেছে। ইতিমধ্যেই ওই প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক বরাদ্দ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যে জলাধার এবং সেতু যেখানে একসঙ্গে আছে সেগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে, তার প্রস্তুতি চলছে। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে।

বিগত বছরে যেখানে ৬০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল সেখানে এখনও পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে গিয়েছে, এখনও কয়েক মাস বাকি আছে। এই অতিবৃষ্টি পরিস্থিতির ফলেই তিলপাড়া জলাধার ও সেতুর মেরামতির কাজ শেষ হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে যায়। সেচ দফতরের নিজস্ব সংস্থা চলতি মেরামতির কাজে উদ্যোগ নিয়েছে। রুরকি আইআইটির নদীবাঁধ বিশেষজ্ঞ জুলফিকার আহমেদের পরামর্শ মতো সেই কাজ করা হচ্ছে এবং কেন্দ্র সরকারের নদীবাঁধ বিশেষজ্ঞরা সেই কাজ সঠিক পদ্ধতি মেনেই হচ্ছে বলে এখানে এসে পরিদর্শন করে জানিয়ে দিয়েছেন।

তিলপাড়া জলাধারের জল থেকে পাঁচ লক্ষ ষাট হাজার হেক্টর জমিতে রবি মরসুমের ফসল এবং বোরো ধান চাষের জন্য জল পাওয়া যায়। বীরভূমের একটা বিস্তীর্ণ অংশ এবং প্রতিবেশী পূর্ব বর্ধমান এবং মুর্শিদাবাদ জেলার কিছু অংশ এর ফলে উপকৃত হয়ে থাকে। তাই দ্রুত সংস্কার করে যাতে এই বাঁধের জলের উপর নির্ভরশীল চাষ কোনওভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার সবরকম প্রচেষ্টা করা হচ্ছে।

বিজেপি শাসিত কেন্দ্র সরকার যদি বাংলার প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ না করতো তাহলে এই জলাধারের বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। রাজ্যের উন্নয়নের প্রতি ক্ষেত্রেই কেন্দ্র সরকারের বঞ্চনা অব্যাহত। রাজ্য সরকার যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে তিলপাড়া জলাধারের বিষয়টি দেখছে। রুগ্ন এই জলাধার ও সেতুটি যাতে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে তার জন্য সমস্ত রকম কাজকর্ম করা হচ্ছে এখানে।’

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

কেন্দ্র সরকারের বঞ্চনার কারণেই রুগ্ন দশা তিলপাড়া জলাধার ও সেতুর : মানস

আপডেট : ১৩ অগাস্ট ২০২৫, বুধবার

কৌশিক সালুই, সিউড়ি : এবার তিলপাড়া জলাধার এবং সেতুর রুগ্ন দশা নিয়ে সরাসরি বিজেপি শাসিত কেন্দ্র সরকারের বাংলার প্রতি বঞ্চনা এবং বিমাতৃসুলভ আচরণের দিকে আঙুল তুললেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভূঁইয়া। মঙ্গলবার সেচমন্ত্রী জলাধারের মেরামতির কাজ পর্যবেক্ষণ করেন। পাশাপাশি রাজ্যের সমস্ত জলাধার এবং সংলগ্ন ব্রিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

রাজ্যের সেচ দফতরের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া গত সোমবার সন্ধ্যায় বীরভূম সফরে আসেন। রাতে তিলপাড়া জলাধার ও সেতুর রুগ্ন দশা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন। মঙ্গলবার তিনি তিলপাড়ার মেরামতির কাজ পর্যবেক্ষণ করেন। সঙ্গে ছিলেন জেলাশাসক বিধান রায়সহ রাজ্য প্রশাসন ও সেচ দফতরের আধিকারিকেরা। সেচমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, ‘২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে সেচ দফতরের পক্ষ থেকে এই জলাধার ও সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।

আরও পড়ুন: রাজ্যের সেচমন্ত্রীর হাত ধরে জয়নগরের ধোসা থেকে কুলতলির কেল্লা পর্যন্ত বেহাল রাস্তার উদ্বোধন

ডাউন স্ট্রিমের ওয়াটার ডিভাইডার দেওয়ালে প্রথম সূক্ষ্ম ফাটলের বিষয়টি নজরে আসে। রাজ্য সরকার প্রকল্পটি নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করে কেন্দ্র সরকারের কাছে আবেদন জানায়। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও সেই আবেদন মঞ্জুর করেনি কেন্দ্র সরকার। কেন্দ্র সরকার অনুমতি দিলে এই প্রকল্পের জন্য বিশ্ব ব্যাংক থেকে ৭০ শতাংশ বিশেষ ঋণ পাওয়া যেত, বাকি ৩০ শতাংশ রাজ্য সরকারকে বহন করতে হতো।

বাধ্য হয়েই রাজ্য সরকার নিজ তহবিল থেকে এই রুগ্ন জলাধার সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নেয়। কাজও শুরু হয়। বীরভূম এবং প্রতিবেশী ঝাড়খন্ড রাজ্যে অতিবৃষ্টিতে যে সামান্য মেরামতির কাজ হয়েছিল তা জলে ধুয়ে যায়। এখানে আগের সংস্কারের কাজে বিজেপি যে দুর্নীতির অভিযোগ করেছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কোনও ঠিকাদারকে অগ্রিম টাকা দেওয়া হয় না। কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর দেওয়া হয়। এখানে রাজনীতি করা হচ্ছে। বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার ১০০ দিনের কাজের টাকা, আবাস যোজনা টাকা, পানীয় জলের টাকা সবকিছুরই বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের সাধ্যমত সমস্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য মাত্র ৪৩২ কোটি টাকা কেন্দ্র সরকার বরাদ্দ করেছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য।

ঝাড়খন্ড ও বিহার থেকে মালদা ও মুর্শিদাবাদ জেলায় যে সমস্ত নদীগুলি আসছে তা থেকে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। ওই দুটি জেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য তিন রাজ্য মিলে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তার জন্য রাজ্য সরকার ১৫০০ কোটি টাকা প্রকল্প অনুমোদন করেছে। ইতিমধ্যেই ওই প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক বরাদ্দ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যে জলাধার এবং সেতু যেখানে একসঙ্গে আছে সেগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে, তার প্রস্তুতি চলছে। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে।

বিগত বছরে যেখানে ৬০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল সেখানে এখনও পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে গিয়েছে, এখনও কয়েক মাস বাকি আছে। এই অতিবৃষ্টি পরিস্থিতির ফলেই তিলপাড়া জলাধার ও সেতুর মেরামতির কাজ শেষ হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে যায়। সেচ দফতরের নিজস্ব সংস্থা চলতি মেরামতির কাজে উদ্যোগ নিয়েছে। রুরকি আইআইটির নদীবাঁধ বিশেষজ্ঞ জুলফিকার আহমেদের পরামর্শ মতো সেই কাজ করা হচ্ছে এবং কেন্দ্র সরকারের নদীবাঁধ বিশেষজ্ঞরা সেই কাজ সঠিক পদ্ধতি মেনেই হচ্ছে বলে এখানে এসে পরিদর্শন করে জানিয়ে দিয়েছেন।

তিলপাড়া জলাধারের জল থেকে পাঁচ লক্ষ ষাট হাজার হেক্টর জমিতে রবি মরসুমের ফসল এবং বোরো ধান চাষের জন্য জল পাওয়া যায়। বীরভূমের একটা বিস্তীর্ণ অংশ এবং প্রতিবেশী পূর্ব বর্ধমান এবং মুর্শিদাবাদ জেলার কিছু অংশ এর ফলে উপকৃত হয়ে থাকে। তাই দ্রুত সংস্কার করে যাতে এই বাঁধের জলের উপর নির্ভরশীল চাষ কোনওভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার সবরকম প্রচেষ্টা করা হচ্ছে।

বিজেপি শাসিত কেন্দ্র সরকার যদি বাংলার প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ না করতো তাহলে এই জলাধারের বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। রাজ্যের উন্নয়নের প্রতি ক্ষেত্রেই কেন্দ্র সরকারের বঞ্চনা অব্যাহত। রাজ্য সরকার যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে তিলপাড়া জলাধারের বিষয়টি দেখছে। রুগ্ন এই জলাধার ও সেতুটি যাতে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে তার জন্য সমস্ত রকম কাজকর্ম করা হচ্ছে এখানে।’