লড়াই এবার বাঙালির সঙ্গে বিজেপির, সভা করে বলল জাতীয় বাংলা সম্মেলন

- আপডেট : ২০ অগাস্ট ২০২৫, বুধবার
- / 25
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : বর্তমান ভারতবর্ষে আরএসএস এবং বিজেপি বাংলায় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা পাওয়ার দৌড়ে অরাজকতা সৃষ্টি করে চলেছে প্রতিনিয়ত। বিভিন্ন নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের সঙ্গে সম্মুখ সমরে না পেরে উঠে বিভিন্ন চক্রান্ত করতে শুরু করে বিজেপি। ভিনরাজ্যে, বিশেষ করে বিজেপি শাসিত অঞ্চলগুলিতে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর শুরু করে অকথ্য অত্যাচার।
কখনও ক্যানিংয়ের বাসিন্দা সাবির মল্লিককে গো-রক্ষাকারীরা পিটিয়ে হত্যা করে, বাঙালি শিশু, মহিলাকে মারধর করা হয় বাংলাদেশি সন্দেহে, এমনকি ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করে সেখানে আটকে পর্যন্ত রাখা হয় বাংলার মানুষদের, তো কখনও মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকাতে পুলিশ পরিযায়ী বাঙালি শ্রমিকদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করে। তাদের স্পর্ধা এতটাই বেড়েছে যে পেলোডারে করে মানুষকে সীমান্ত পার করতেও তাদের বুক কাঁপছে না।
এতেও যখন কোনও সুবিধা করতে পারল না আরএসএস এবং বিজেপি, তখন পশ্চিমবঙ্গের মালদা-মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে দেয়, নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে ‘এসআইআর’ নামক নতুন কমিটি গঠন করে শুরু করে ভোটার লিস্ট থেকে ভোটারদের উৎখাত করার মতো ঘৃণ্য কাজ। বিহারে এই উৎখাত কার্য চালানোর পর পশ্চিমবঙ্গতেও যে তারা এই কাজ চালু করবে তা জানা কথা ছিল।
এত কিছুর পরেও তারা চুপ করে বসে নেই। বাংলা এবং বাঙালি বিদ্বেষের সীমা এত দূর পর্যন্ত তারা নিয়ে গিয়েছে, যে বিজেপির আইটি সেলের জাতীয় আহ্বায়ক অমিত মালব্য কী সুন্দর ঘোষণা করে দিলেন যে, বাংলা ভাষা বলে কোনও ভাষারই নাকি অস্তিত্ব নেই। অন্য দিকে বিজেপির হয়ে ‘প্রোপাগাণ্ডা’ সিনেমা তৈরির অন্যতম মাথা বিবেক অগ্নিহোত্রী ‘বেঙ্গল ফাইলস’ নামক ইতিহাস বিকৃত সিনেমা তৈরি করে বাংলা ও বাঙালি বিদ্বেষের আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার কাজটি করে চলেছেন। আরও অবাক হয়ে যেতে হয়, সম্প্রতি মহারাষ্ট্রে বীরভূমের এক পরিযায়ী শ্রমিক রাহুল সিংয়ের দুটি কান কেটে ফেলার ঘটনা শুনলে।
এই সমস্ত ঘটনার কথা মাথায় রেখেই ‘বাঙালি বিদ্বেষী’ বিজেপি এবং আরএসএসের বিরুদ্ধে বুধবার, ২০ আগস্ট, জাতীয় বাংলা সম্মেলনের আহ্বানে চারটি স্থানে পথসভার আয়োজন করা হয়। ব্রিটিশদের দালাল আরএসএস এবং বিজেপি বাঙালিকে রাষ্ট্রহীন করার যেসব ঘৃণ্য চক্রান্ত শুরু করেছে তার বিরুদ্ধেই গড়িয়াহাট, রাসবিহারী, হাজরা এবং নেতাজী ভবন মেট্রোর সামনে পথসভা করে গর্জে ওঠে জাতীয় বাংলা সম্মেলনের তরুণ-তরুণী সদস্যরা।
এই সভাগুলিতে নিজেদের বক্তব্য রাখেন জাতীয় বাংলা সম্মেলনের তরুণ সভাপতি সিদ্ধব্রত দাস, সমাজকর্মী সুশান রায়, বাসুদেব ঘটক, পার্থসারথি গুহরা। পথসভা শুরু হয় গড়িয়াহাট মোড় থেকে এবং শেষ হয় নেতাজী ভবন মেট্রোর সামনে পথসভা করে৷ এই দিন গড়িয়াহাট মোড়ে ‘বাঙালি অস্মিতা’র কথা স্মরণ করিয়ে দেন পার্থসারথি গুহ। রাসবিহারী মোড়ের পথসভায় যুক্ত হন এবং বক্তব্য রাখেন কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক ভট্টাচার্য।
বক্তব্য রাখেন তরুণ ছাত্র রৌণক রায়। বিভিন্ন পথসভায় গান শোনান যশস্বী শিক্ষক ও বিশিষ্ট শিল্পী অসীম গিরি, সংগীত শিল্পী নাজমুল হক, অমিত কালী। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বাংলা সম্মেলনের সৈকত পাল, রাজদ্বীপ দাস, হিমাদ্রি বটব্যাল, বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুমন ভট্টাচার্য প্রমুখরা।
পথসভা থেকে সাধারণ জনমানসের কাছে জাতীয় বাংলা সম্মেলনের সদস্যরা একটাই আবেদন করেন, ব্রিটিশের দালাল বিজেপির বাংলা ও বাঙালি বিদ্বেষের সমস্ত প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করতে পারে একমাত্র বাঙালিরাই। কারণ, বিদ্রোহী বাঙালিরাই বিজেপির সঙ্গে লড়াই করে নিজেদের অধিকার বজায় রাখতে পারবে এবং বিজেপিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারবে সমগ্র বাংলা থেকে।