নেতানিয়াহু ও নিজেকে ‘ওয়ার হিরো’ খেতাব দিলেন ট্রাম্প

- আপডেট : ২১ অগাস্ট ২০২৫, বৃহস্পতিবার
- / 251
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গাজায় (Gaza) যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। তা সত্ত্বেও তাকে ‘ওয়ার হিরো’ খেতাব দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)।
মঙ্গলবার রক্ষণশীল রেডিও সঞ্চালক মার্ক লেভিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প নেতানিয়াহু সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি একজন ভালো মানুষ। তিনি সেখানে লড়ছেনখ তিনি একজন যুদ্ধবীর, কারণ আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। তিনি যুদ্ধবীর। আমি মনে করি আমিও তাই’।
ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধাপরাধের জন্য নেতানিয়াহুকে (Benjamin Netanyahu) দায়ী করার প্রচেষ্টাকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘তারা আসলে তাকে কারাগারে ঢোকানোর চেষ্টা করছে’। তবে ট্রাম্প এখানে আইসিসি পরোয়ানার কথা বলেছেন নাকি নেতানিয়াহুর দেশীয় দুর্নীতি মামলার কথা বলেছেন, তা পরিষ্কার নয়। ট্রাম্প গত জুনেই অবশ্য প্রকাশ্যে নেতানিয়াহুর দুর্নীতি মামলা বাতিলের দাবি জানিয়েছিলেন। ২০২০ সাল থেকে বিচারের মুখোমুখি নেতানিয়াহু ইসরাইলের ইতিহাসে প্রথম নেতা, যিনি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ফৌজদারি অপরাধে বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন।
এদিকে আইসিসি গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছরের নভেম্বরে নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। অন্যদিকে, গাজায় নির্মম আগ্রাসন চালানোর কারণে ইসরাইল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যা মামলার মুখোমুখি। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরাইলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে গাজায় এখন পর্যন্ত ৬২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এই সামরিক অভিযানে পুরো গাজা বিধ্বস্ত হয়ে দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে।
সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আরও দাবি করেন, অতীতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে আলোচনায় ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্ত করতে তিনি ‘কঠোর পরিশ্রম’ করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি, ‘আমি-ই সব জিম্মিকে ফিরিয়ে এনেছিখ আমি অসংখ্য চিঠি পেয়েছি অভিভাবকদের কাছ থেকে, শিশুদের কাছ থেকে এবং উদ্ধার পাওয়া মানুষদের কাছ থেকে। এদের কেউই ফেরত আসতে পারত না, যদি আমি তাদের ফিরিয়ে না আনতাম’।
এছাড়াও তিনি জুন মাসে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বিমান হামলার কথাও গর্বের সঙ্গে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ওই বিমানগুলো পাঠিয়েছিলামখ কাজ সেরে পাইলটরা এলো। আমি তাদের পুরস্কৃত করেছি। পুরো অভিযানের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে ওভাল অফিসে ডেকেছিলাম। এটি ছিল সম্পূর্ণ নিখুঁতখ একেবারে সম্পূর্ণ ধ্বংস’।
সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প ডেমোক্রেটদেরও আক্রমণ করেন এবং সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমারকে ফিলিস্তিনপন্থি বলে অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘এটা অবিশ্বাস্য যে ডেমোক্রেটরাখ বিশেষ করে শুমার এখন ফিলিস্তিনি। আমরা তাকে নিউ ইয়র্কের ফিলিস্তিনি সিনেটর বলি’।
অনেকে বলছেন যুদ্ধনায়ক মানে তো নিজের দেশকে বাঁচাতে যুদ্ধ করা, নিরীহ মানুষের ওপর নির্বিচারে বোমাবর্ষণ নয়। ফলে ট্রাম্পের তওয়ার হিরো দ মন্তব্য শুনে অনেক বিশ্লেষকই মনে করছেন;এটা আসলে নেতানিয়াহুর যুদ্ধনীতির প্রতি বিদ্রূপ। কারণ, ইসরাইলের এই যুদ্ধ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এখন আগ্রাসন হিসেবেই বেশি পরিচিত।
ইসরাইলের ভেতরেও নেতানিয়াহু এখন ব্যাপক সমালোচনার মুখে। সাম্প্রতিক যুদ্ধেই দেখা গেছে, হামাসের মতো সংগঠন টানা কয়েকদিন ধরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যা প্রতিরোধে ‘আয়রন ডোম’-এর ব্যর্থতা সামনে এসেছে। একদিকে হাজারো ফিলিস্তিনি প্রাণ দিচ্ছে, অন্যদিকে ইসরাইলি সাধারণ মানুষও ক্রমশ আতঙ্কগ্রস্ত। এর জন্য বিরোধীরা সরাসরি নেতানিয়াহুর নেতৃত্বকেই দায়ী করছে। এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের ব্যঙ্গাত্মক প্রশংসা যেন নেতানিয়াহুর দুর্বলতাকেই আরও প্রকাশ করে দিল।
ট্রাম্প নিজে কখনো যুদ্ধক্ষেত্রে যাননি। বরং যুবক বয়সে সামরিক ডিউটি এড়াতে ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট ব্যবহার করেছিলেন বলে অভিযোগ আছে। অথচ তিনি নিজেকেও ‘ওয়ার হিরো’ বলে দাবি করেন। এখানে আসলে তিনি নেতানিয়াহুকে এক আসনে বসিয়ে নিজেকে সেই আসনের সমান দেখাচ্ছেন। এর মানে দাঁড়াচ্ছে;তযদি নেতানিয়াহু যুদ্ধনায়ক হন, তবে আমিও।
এটি নিছক প্রশংসা নয়, বরং ইঙ্গিত করছে নেতানিয়াহুর নেতৃত্ব অতটা মূল্যবান নয়। অনেকে মনে করছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য তাই কেবল হাস্যরসাত্মক কটাক্ষ নয়, বরং গভীর রাজনৈতিক বার্তা। তিনি বোঝাতে চাইলেন, নেতানিয়াহুর নেতৃত্ব অতটা গৌরবময় নয় যতটা প্রচার করা হয়। ফিলিস্তিনে যে রক্তপাত চলছে, সেটি যুদ্ধ নয়, বরং আগ্রাসন। আর এমন আগ্রাসনের নেতা কখনোই আসল যুদ্ধনায়ক হতে পারেন না। তাই তুলনা টানলেন নিজের সঙ্গে।