গাজা যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাব

- আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার
- / 301
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সর্বশেষ এক ২০ দফা পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন জাজা সংঘাত শোষণ ও পুনর্গঠনের রূপরেখা হিসাবে — যা ইসরায়েল ও কিছু মিত্র দেশের পক্ষ থেকে স্বাগত পেয়েছে, তবে হামাসের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সম্মতি এখনও মেলেনি। ইসরায়েল প্রধান বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পরিকল্পনাটি “গাজার যুদ্ধ শেষের দিকে রয়েছে” বলে সমর্থন জানালেও সতর্ক করেন, যদি হামাস তা নাকচ করে বা মানা সত্ত্বেও এগুলোর বিপরীতে কাজ করে, ইসরায়েল একপক্ষীয়ভাবে কাজ শেষ করবে।
প্রস্তাবের মূল উপবচনগুলো সংক্ষেপে:
গাজার পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ ও নিরাপত্তা:
গাজা হবে সন্ত্রাস-মুক্ত ও প্রতিবেশীদের জন্য হুমকি নয় এমন অঞ্চল; টানেল ও যেসব সামরিক অবকাঠামো আছে তা ধ্বংস করা হবে এবং ভবিষ্যতে পুনর্নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
বিস্তৃত বন্দি বিনিময়:
প্রস্তাব অনুযায়ী হামাসকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব জীবিত ও মৃত জিম্মিকে ফিরিয়ে দিতে হবে; বিনিময়ে ইসরায়েল নির্দিষ্ট সংখ্যক গাজাবাসী ও দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিদের মুক্তি দেবে।
মানবিক ত্রাণ ও পুনর্নির্মাণ:
চুক্তি কার্যকর হলে তৎক্ষণিকভাবে বৃহৎ পরিমাণ ত্রাণ পাঠানো হবে — পানি, বিদ্যুত, স্পাতাল, চিকিৎসা ও সার্বিক অবকাঠামো পুনঃস্থাপনের জন্য আন্তর্জাতিক তহবিল ও সরঞ্জাম প্রবেশ করানো হবে; ত্রাণ বিতরণ আন্তর্জাতিক সংস্থার তত্ত্বাবধানে।
অস্থায়ী প্রশাসন:
গাজা পরিচালনার জন্য একটি রাজনীতি-বাদী নয়, টেকনোক্র্যাটিক ফিলিস্তিনি–আন্তর্জাতিক কমিটি গঠন হবে; ‘বোর্ড অব পিস’ নামের একটি আন্তর্জাতিক ট্রানজিশনাল সংস্থা গঠন করে পুনর্গঠন ও অর্থায়ন পরিচালনা করবে—চেয়ারম্যানদের মধ্যে ট্রাম্প ও টনি ব্লেয়ারের নামও প্রকাশিত হবে বলে বলা হয়েছে।
নিরাপত্তা বাহিনী ও আইএসএফ:
আন্তর্জাতিক ও আরব অংশীদারদের সহযোগিতায় ISF (ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলিটি ফোর্স) গঠন করা হবে, যা ফিলিস্তিনি পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেবে ও সীমান্ত-নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে; আইডিএফ ধাপে ধাপে প্রত্যাহার করবে যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে।
অস্ত্র কেনা ও পুনর্বাসন প্রোগ্রাম:
অস্ত্র সংগ্রহ–পুনঃঅধিগ্রহণ (buy-back) ও পুনর্বাসন কর্মসূচি থাকবে; নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের তত্ত্বাবধানে চলবে।
অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণ:
বিনিয়োগ আকর্ষণে বিশেষ অর্থনৈতিক বিধান ও শুল্কসুবিধা দিয়ে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার পরিকল্পনা; বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে।
জনগণের ইচ্ছা ও স্বেচ্ছাচারিতা নয়:
কাউকে গাজা ছাড়তে বাধ্য করা হবে না—ইচ্ছুকরা রিলোকেট হতে পারবে, তবে ফিরে আসার অধিকার রক্ষা থাকবে।
শর্তসাপেক্ষ রাজনৈতিক লক্ষ্য:
গাজার প্রশাসন ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যথাযথ সংস্কার করলে ভবিষ্যতে একটি স্বতন্ত্র ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ খোলা থাকবে; এর জন্য একটি রাজনৈতিক রোডম্যাপ নির্ধারিত হবে।
সামাজিক পুনর্মিলন:
আন্তঃধর্মীয় সংলাপ বাড়ানো, সহনশীলতা শেখানো ও শান্তির সুবিধাগুলো তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়া হবে।
এছাড়া প্রস্তাবে কড়া পর্যবেক্ষণ-নিয়ম, প্রতিবেশীদের গ্যারান্টি, বিনিয়োগ ও প্রশাসনিক সংস্কারের ধারাবাহিকতার ওপর জোর রাখা হয়েছে। ট্রাম্প বলছেন—এই প্ল্যান বাস্তবায়িত হলে গাজা “নতুন” রূপ পাবে; সমালোচকরা বলছেন—প্রস্তাব রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাগত জটিলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য কঠোর ও বাস্তবসম্মত বাস্তবায়ন ও হামাসের অংশগ্রহণ ছাড়া কার্যকর হবে না।
বর্তমানে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন:
হামাস কি সম্মতি জানাবে? সম্মতি ও কার্যকর দিকনির্দেশ ছাড়া পরিকল্পনাটি কেবল কাগজেই থেকেই যেতে পারে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন—যদি এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হয়, তবে তা তাত্ক্ষণিক মানবিক ত্রাণ ও দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা দুটোই প্রভাবিত করবে।