‘নিজের ঘরেই অবৈধ’: পাকিস্তান-তালেবান উত্তেজনায় অনিশ্চিত আফগান শরণার্থীদের জীবন

- আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার
- / 115
১৯৭৯ সালে সোভিয়েত আগ্রাসনের পর থেকে লাখ লাখ আফগান নাগরিক আশ্রয়ের খোঁজে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে এসেছিলেন। তাদেরই সন্তান আজ আল্লাহ মীর, জন্ম পাকিস্তানের কোহাট জেলার এক শরণার্থী গ্রামে। বয়স এখন ৪৫। কিন্তু চার দশকেরও বেশি সময় পর সেই মাটিতেই তিনি আজ “অবৈধ”।
দুই বছর ধরে পাকিস্তান সরকার দেশজুড়ে অবৈধ বিদেশি তাড়ানোর নামে আফগান শরণার্থীদের ফেরত পাঠাচ্ছে। সম্প্রতি কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে, পাকিস্তানের ৫৪টি আফগান শরণার্থী গ্রাম বন্ধ করে দেওয়া হবে—যার মধ্যে মীরের কোহাট গ্রামও রয়েছে। এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে লক্ষাধিক শরণার্থী পরিবার।
আল–জাজিরাকে মীর বলেন, “আমার জীবনে মাত্র একবার আফগানিস্তানে গিয়েছিলাম। এখানেই জন্মেছি, বিয়ে করেছি, সন্তানদের বড় করেছি—এখন কোথায় যাব? আমরা তো এখানেই ঘর বেঁধেছি।”
২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সীমান্তে সংঘর্ষ, পারস্পরিক অভিযোগ ও কূটনৈতিক টানাপোড়েন এখন প্রকাশ্য শত্রুতায় পরিণত হয়েছে। এই উত্তেজনার বলি হচ্ছে মীরের মতো নিরপরাধ শরণার্থী পরিবারগুলো।
১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে পাকিস্তান আফগানদের আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। কিন্তু এখন সেই দেশই কঠোর নীতি নিচ্ছে। ২০০৬ সাল থেকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) যে Proof of Registration (PoR) কার্ড দিয়েছে, তার নবায়ন এ বছর জুনে বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তান। এতে বহু শরণার্থী বৈধতা হারিয়েছেন।
ইউএনএইচসিআরের তথ্যমতে, ২০২৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৫ লাখের বেশি আফগান নাগরিক স্বেচ্ছায় বা জোরপূর্বক পাকিস্তান ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। সংস্থার মুখপাত্র কায়সার খান আফ্রিদি বলেন, “পাকিস্তানের আতিথেয়তার ইতিহাস আছে, কিন্তু এই মুহূর্তে সেই ঐতিহ্য মারাত্মক চাপে।”
পাকিস্তান সরকার দাবি করছে, আফগান শরণার্থীদের মধ্যে কিছু গোষ্ঠী নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করছে এবং সীমান্ত হামলার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু কাবুল সরকার তা অস্বীকার করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, দুই দেশের রাজনৈতিক সংঘাতের বলি হচ্ছে সেই মানুষগুলো, যারা জন্ম থেকে পাকিস্তানেই বড় হয়েছে, অথচ এখনো তাদের কোনো দেশ নেই।
আল্লাহ মীরের কণ্ঠে সেই হতাশাই ধ্বনিত হয়—
“আমাদেরকে পাকিস্তানে অবৈধ বলা হচ্ছে, অথচ আফগানিস্তানও আমাদের নিজের বলে মানবে না। আমরা এখন দুই দেশের মাঝখানে আটকে পড়া মানুষ।”