২৪ অক্টোবর ২০২৫, শুক্রবার, ৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রয়াত প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের শোকবার্তায় বিবাদে জড়াল এনসি-বিজেপি

কিবরিয়া আনসারি
  • আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার
  • / 85

পুবের কলম, শ্রীনগর: নজিরবিহীন ঘটনা জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায়। বৃহস্পতিবার প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের শোকবার্তাকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল উপত্যকার বিধানসভায়। নজিরবিহীন ভাবে বিধানসভা ভবনেই দেখা গেল এনসি-বিজেপির মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়। জানা গিয়েছে, জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার শরৎ অধিবেশনের উদ্বোধনী দিনে শোকবার্তার সময় উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় ও বিবাদ দেখা যায়। ২০১৯ সালে কেন্দ্রের মোদি সরকার জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল করে। সেই সময় উপত্যকার রাজ্যপাল ছিলেন সত্যপাল মালিক। এদিন বিধানসভায় ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) এবং রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপির মধ্যে ধারা ৩৭০ বাতিল এবং ততকালীন রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই উত্তপ্ত হয়ে উঠে বিধানসভা ভবন। চলতি বছরের অগাস্টে প্রয়াত প্রাক্তন রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) বিধায়ক বশির ভিরি। প্রাক্তন রাজ্যপালের ভূমিকাকে বিতর্কিত বলে অভিহিত করার পরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। পদ্ম বিধায়ক শ্যাম লাল শর্মা এই মন্তব্য নিয়ে আপত্তি তোলেন এবং তাঁর মন্তব্য বাদ দেওয়ার দাবি তোলেন।

বিধানসভার স্পিকার আব্দুল রহিম রাথের ভিরিকে মৃত ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বলার সময়, এনসি বিধায়কের মন্তব্য বাদ দেওয়ার জন্য শর্মার দাবি মেনে নেননি। তবে শোকবার্তার শেষে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেন, “সবাই জেনেশুনে বা অজান্তেই ভুল করে। আমরা কেউই আল্লাহর প্রেরিত ফেরেশতা নই। আমরাও ভুল করেছি। মালিক নিশ্চয়ই এই বিশ্বাস নিয়ে কাজ করেছেন যে তিনি ভালো কাজ করছেন।” এদিকে কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতা জি এ মীর অবশ্য মালিককে একজন ভাল নেতা বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর কথায়, “তিনি একজন “স্পষ্টবাদী” এবং “জনপ্রিয়” ব্যক্তি ছিলেন। ধারা ৩৭০ বাতিল ফলে মানুষ উপকৃত হবেন ভেবেছিলেন, তবে বাস্তবে তা হয়নি। আমরা দেখেছি মানুষের সামনে সত্য তুলে ধরার জন্য শেষ দিনগুলোতে তাকে কীভাবে সংগ্রাম করতে হয়েছে।” মালিকের সঙ্গে মতপার্থক্য থাকলেও মৃতের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সময় আমাদের নেতিবাচক কথা বলা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন পিডিপি বিধায়ক রফিক নায়েক। তাঁর বক্তব্য, “আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু যেহেতু সে (মালিক) আমাদের ছেড়ে চলে গেছে, তাই আমাদের উচিত তার সম্পর্কে ভালো কথা বলা।”

নায়েক দোডা জেলায় জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার অভিযোগে গত মাসে জননিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হওয়া আপ বিধায়ক মেহরাজ মালিকের বিষয়টিও উত্থাপিত হয় বিধানসভায়। তা নিয়েও রীতিমত উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে বিধানসভার স্পিকার সর্তক করে বলেছেন, “আপনি শোক রেফারেন্স নিয়ে কথা বলছেন, সেটা নিয়েই বলুন।” সত্যপাল মালিক সম্পর্কে সিপিআই(এম) বিধায়ক এম ওয়াই তারিগামির বক্তব্য, “শোকবার্তার অর্থ এই নয় যে, আমরা কোনও শিক্ষা গ্রহণ করি না।” তারিগামি বলেন, “সম্মান করা ছাড়াও, যাঁকে জনসাধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁদেরও তার কর্মের মূল্যায়ন করা উচিত। অন্যথায়, এটি একটি রুটিন ব্যায়াম হয়ে যায়। এমনকি শালীনতার স্তরের মধ্যে থেকেও সমালোচনা করা যেতেই পারে।”

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৫ অগাস্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তথা ধারা ৩৭০ বাতিল করে কেন্দ্রের মোদি সরকার। বিজেপির বিক্রম রণধাওয়া সত্যপাল মালিকের কথা উল্লেখ করে বলেন, একজন সাধারণ মানুষকে পাঁচটি রাজ্যের রাজ্যপাল এমনি এমনি করা হয়নি। বিজেপি তাঁর প্রতিভা দেখে তাঁকে রাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগ করেছে। ৫ অগাস্ট জম্মু-কাশ্মীরের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন ছিল। এটি একটি কাকতালীয় ছিল যে সত্যপাল মালিক চলতি বছরের ৫ আগস্ট শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বিজেপি নেতার এই মন্তব্যকে কটাক্ষ করে এনসি বিধায়ক নাজির গুরেজি দাবি করেন, “প্রাক্তন রাজ্যপাল যে সমস্ত অসাংবিধানিক কাজ করেছিলেন, সেগুলি কি ইতিহাসে লেখা হবে।” যদিও এনসি বিধায়কের দাবির প্রতিক্রিয়া না দিয়ে পদ্ম বিধায়ক নরিন্দর সিং বলেন, “এক দেশ, এক সংবিধান অর্জনের কৃতিত্ব মালিকের।”

প্রসঙ্গত, এর আগেও অনুচ্ছেদ ৩৭০ নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভা। রীতিমতো হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন শাসক এবং বিরোধী দলের বিধায়কেরা। পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছিল মার্শালদের। ফের উপত্যকার বিধানসভায় দেখা গেল নজিরবিহীন ঘটনা।

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

প্রয়াত প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের শোকবার্তায় বিবাদে জড়াল এনসি-বিজেপি

আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম, শ্রীনগর: নজিরবিহীন ঘটনা জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায়। বৃহস্পতিবার প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের শোকবার্তাকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল উপত্যকার বিধানসভায়। নজিরবিহীন ভাবে বিধানসভা ভবনেই দেখা গেল এনসি-বিজেপির মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়। জানা গিয়েছে, জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার শরৎ অধিবেশনের উদ্বোধনী দিনে শোকবার্তার সময় উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় ও বিবাদ দেখা যায়। ২০১৯ সালে কেন্দ্রের মোদি সরকার জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল করে। সেই সময় উপত্যকার রাজ্যপাল ছিলেন সত্যপাল মালিক। এদিন বিধানসভায় ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) এবং রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপির মধ্যে ধারা ৩৭০ বাতিল এবং ততকালীন রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই উত্তপ্ত হয়ে উঠে বিধানসভা ভবন। চলতি বছরের অগাস্টে প্রয়াত প্রাক্তন রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) বিধায়ক বশির ভিরি। প্রাক্তন রাজ্যপালের ভূমিকাকে বিতর্কিত বলে অভিহিত করার পরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। পদ্ম বিধায়ক শ্যাম লাল শর্মা এই মন্তব্য নিয়ে আপত্তি তোলেন এবং তাঁর মন্তব্য বাদ দেওয়ার দাবি তোলেন।

বিধানসভার স্পিকার আব্দুল রহিম রাথের ভিরিকে মৃত ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বলার সময়, এনসি বিধায়কের মন্তব্য বাদ দেওয়ার জন্য শর্মার দাবি মেনে নেননি। তবে শোকবার্তার শেষে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেন, “সবাই জেনেশুনে বা অজান্তেই ভুল করে। আমরা কেউই আল্লাহর প্রেরিত ফেরেশতা নই। আমরাও ভুল করেছি। মালিক নিশ্চয়ই এই বিশ্বাস নিয়ে কাজ করেছেন যে তিনি ভালো কাজ করছেন।” এদিকে কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতা জি এ মীর অবশ্য মালিককে একজন ভাল নেতা বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর কথায়, “তিনি একজন “স্পষ্টবাদী” এবং “জনপ্রিয়” ব্যক্তি ছিলেন। ধারা ৩৭০ বাতিল ফলে মানুষ উপকৃত হবেন ভেবেছিলেন, তবে বাস্তবে তা হয়নি। আমরা দেখেছি মানুষের সামনে সত্য তুলে ধরার জন্য শেষ দিনগুলোতে তাকে কীভাবে সংগ্রাম করতে হয়েছে।” মালিকের সঙ্গে মতপার্থক্য থাকলেও মৃতের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সময় আমাদের নেতিবাচক কথা বলা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন পিডিপি বিধায়ক রফিক নায়েক। তাঁর বক্তব্য, “আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু যেহেতু সে (মালিক) আমাদের ছেড়ে চলে গেছে, তাই আমাদের উচিত তার সম্পর্কে ভালো কথা বলা।”

নায়েক দোডা জেলায় জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার অভিযোগে গত মাসে জননিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হওয়া আপ বিধায়ক মেহরাজ মালিকের বিষয়টিও উত্থাপিত হয় বিধানসভায়। তা নিয়েও রীতিমত উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে বিধানসভার স্পিকার সর্তক করে বলেছেন, “আপনি শোক রেফারেন্স নিয়ে কথা বলছেন, সেটা নিয়েই বলুন।” সত্যপাল মালিক সম্পর্কে সিপিআই(এম) বিধায়ক এম ওয়াই তারিগামির বক্তব্য, “শোকবার্তার অর্থ এই নয় যে, আমরা কোনও শিক্ষা গ্রহণ করি না।” তারিগামি বলেন, “সম্মান করা ছাড়াও, যাঁকে জনসাধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁদেরও তার কর্মের মূল্যায়ন করা উচিত। অন্যথায়, এটি একটি রুটিন ব্যায়াম হয়ে যায়। এমনকি শালীনতার স্তরের মধ্যে থেকেও সমালোচনা করা যেতেই পারে।”

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৫ অগাস্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তথা ধারা ৩৭০ বাতিল করে কেন্দ্রের মোদি সরকার। বিজেপির বিক্রম রণধাওয়া সত্যপাল মালিকের কথা উল্লেখ করে বলেন, একজন সাধারণ মানুষকে পাঁচটি রাজ্যের রাজ্যপাল এমনি এমনি করা হয়নি। বিজেপি তাঁর প্রতিভা দেখে তাঁকে রাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগ করেছে। ৫ অগাস্ট জম্মু-কাশ্মীরের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন ছিল। এটি একটি কাকতালীয় ছিল যে সত্যপাল মালিক চলতি বছরের ৫ আগস্ট শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বিজেপি নেতার এই মন্তব্যকে কটাক্ষ করে এনসি বিধায়ক নাজির গুরেজি দাবি করেন, “প্রাক্তন রাজ্যপাল যে সমস্ত অসাংবিধানিক কাজ করেছিলেন, সেগুলি কি ইতিহাসে লেখা হবে।” যদিও এনসি বিধায়কের দাবির প্রতিক্রিয়া না দিয়ে পদ্ম বিধায়ক নরিন্দর সিং বলেন, “এক দেশ, এক সংবিধান অর্জনের কৃতিত্ব মালিকের।”

প্রসঙ্গত, এর আগেও অনুচ্ছেদ ৩৭০ নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভা। রীতিমতো হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন শাসক এবং বিরোধী দলের বিধায়কেরা। পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছিল মার্শালদের। ফের উপত্যকার বিধানসভায় দেখা গেল নজিরবিহীন ঘটনা।