মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে নিরপরাধ মানুষকে প্রকাশ্যে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে: ফারাক্কায় জামাআতের আমীর
- আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, রবিবার
- / 131
দেশে আজ সবথেকে বেশি প্রয়োজন শান্তি-সংহতি ও সুবিচার, ফারাক্কায় জামাআতে ইসলামী হিন্দের তিনদিনের আরকান ইজতেমার দ্বিতীয় দিনে শনিবার প্রকাশ্য সভায় এই মন্তব্য করলেন আমীরে জামাআত সাইয়েদ সাদাতুল্লাহ হোসাইনী।
সৈয়দ নুরুল হাসান কলেজ সংলগ্ন ময়দানে শনিবার তিনি বলেন, সব দিক থেকে রাজনৈতিক পরিবেশ ভীষণভাবে কলুষিত হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক সূচকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান ভারতের অবস্থান নিম্নমুখী। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গত এক দশকে আমাদের দেশের অবস্থান একেবারেই তলানিতে ঠেকেছে। রাজনীতির সঙ্গে নীতির কোনো সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে না। অথচ নীতির রাজা ছিল রাজনীতি। সেই রাজনীতির পরিবেশ পরিমন্ডলকে বিষাক্ত ও দূষিত করে দেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছিল আচ্ছে দিনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে। কিন্তু ১১ বছরে কোথায় গেল সেই অচ্ছে দিন? শান্তি কই, সম্প্রীতি, সদ্ভাব, সংহতি কোথায় যেন উবে গেল?”
সাইয়েদ সাদাতুল্লাহ হোসাইনী আরো বলেন, অশান্তির আগুনে পুড়ছে একের পর এক রাজ্য, মণিপুর থেকে অসম, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ। মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে নিরপরাধ মানুষকে প্রকাশ্যে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। একটা বিশেষ শ্রেণীকে টার্গেট করে ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক নিদর্শন থেকে শুরু করে মসজিদ, মাদ্রাসা ইত্যাদি ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। আর গর্বের সঙ্গে বলা হচ্ছে, এসব নাকি বুলডোজার জাস্টিস। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এসব করা হচ্ছে। বাংলা ভাষায় কথা বলার অপরাধে বিভিন্ন রাজ্যে বিশেষ করে বাঙালি মুসলিমদের ওপর নির্যাতন, হেনস্থা, ধরপাকড় এমনকি পুশব্যাক করা হচ্ছে। অথচ তাদের কাছে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ইত্যাদি যাবতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ বা নথিপত্র রয়েছে। কিন্তু সেসবকে কোনো গুরুত্ব বা মান্যতা দেওয়া হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, ‘ এদেশ ব্রিটিশ আমল থেকে শান্তি, সম্প্রীতি, সংহতির জন্য অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। কিন্তু দুঃখের কথা, স্বাধীনতার বয়স ৮০ বছর হতে চলল। অথচ এখনো মানুষ শান্তি পায়নি, সুবিচার পায়নি। এই স্বাধীনতার জন্য কি কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করেছিল? এই জন্যই কি জীবন দিয়েছিলেন আমাদের বীর দেশপ্রেমী স্বাধীনতা সংগ্রামীরা? আজ দেশের কোনো রাজ্যের মানুষ শান্তিতে নেই, স্বস্তিতে নেই। সর্বত্র অশান্তি, ঘৃণা, বিদ্বেষ, অসহিষ্ণুতার দাপট ক্রমেই প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় সবচেয়ে বেশি দরকার শান্তি, সংহতি ও সুবিচার।’
আমীর এ হালকা ডা. মসিহুর রহমান বলেন, আজ দেশের অন্যতম সমস্যা হল কর্মসংস্থান, বেকারত্ব, কৃষকের আত্মহত্যা, সরকারের কর্পোরেট-বান্ধব নীতি, কৃষকের ঋণ মুকুব, পরিযায়ী শ্রমিকদের দুরবস্থা, রুটি-রুজি কেড়ে নেওয়া। হাজার হাজার একর জমি মাত্র এক টাকায় দীর্ঘমেয়াদে লিজ দেওয়া হচ্ছে, কয়েক হাজার কৃষক পরিবারকে পথে বসিয়ে তাদের জমি তুলে দেওয়া হচ্ছে বড় কর্পোরেটদের হাতে—আম্বানি, আদানি প্রমুখদের কাছে। আর সাধারণ মানুষের নজর ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে এনআরসি, সিএএ, এসআইআর ইত্যাদি ইস্যুর দিকে, যাতে সরকারের ব্যর্থতা ও দেশ বিক্রির চক্রান্ত আড়াল করা যায়। এজন্য সমাজে ঘৃণা, বিদ্বেষ, অসহিষ্ণুতা, বিভাজন ও মেরুকরণের রাজনীতি চালানো হচ্ছে।
জামায়াতের রাজ্য সভাপতি আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গে সম্প্রতি ওবিসি সংরক্ষণ ইস্যুতে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি যে অবিচার করা হয়েছে, তা গভীর উদ্বেগের বিষয়। মুসলিমদের ন্যায্য অধিকার ও সংরক্ষণ নিয়ে রাজনৈতিকভাবে খেলা হচ্ছে।
সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সাদিকুর রহমান। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির অধ্যাপক সেলিম ইঞ্জিনিয়ার, কাইয়েমে জামাআত টি আরিফ আলী, কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি আব্দুর রফিক, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি ডা: রইসুদ্দিন, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মশিউর রহমান, বিভাগীয় রাজ্য সেক্রেটারি শাদাব মাসুম, রাজ্য সম্পাদিকা মঞ্জুরা খাতুন প্রমুখ।


























