আবদুল ওদুদ: নির্বাচন কমিশন বাংলায় এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু করার পর গত ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্যে একের পর এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল। পরিবারের দাবি, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম না থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে ভোট দিয়ে আসা বীরভূমের ইলামবাজারের ৯৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ বাংলাদেশে পুশব্যাকের আতঙ্কে বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ২৯ অক্টোবর আত্মহত্যা করেছেন। এর আগে ২৮ অক্টোবর পানিহাটির প্রদীপ কর নামে আরও এক ব্যক্তি সুইসাইড নোটে ‘এনআরসি’ -কে দায়ী করে আত্মহত্যা করেন এবং বুধবার (২৮ অক্টোবর) কোচবিহারের দিনহাটার একজন এসআইআর আতঙ্কে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ধারাবাহিকভাবে এসব ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির ‘ভয়, বিভাজন এবং ঘৃণার রাজনীতি’-কেই এই করুণ পরিণতির জন্য দায়ী করে তিনি এক্স হ্যান্ডেলে একটি কড়া পোস্ট করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর লড়াকু বার্তা
মুখ্যমন্ত্রীর লড়াকু বার্তা দিয়ে এক পোস্টে লিখেছেন যে, বিজেপির নির্দেশে নির্বাচন কমিশনের এসআইআর মহড়া ঘোষণার মাত্র ৭২ ঘন্টার মধ্যে ’একের পর এক এড়ানো যায় এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে’। তিনি প্রতিটি ঘটনার বিশদ উল্লেখ করে বিজেপিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। কয়েকটি ঘটনার তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
২৭ অক্টোবর: খড়দহের পানিহাটির ৫৭ বছর বয়সী প্রদীপ কর আত্মহত্যা করেন। তাঁর চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমার মৃত্যুর জন্য এনআরসি দায়ী।’
২৮ অক্টোবর: কোচবিহারের দিনহাটার ৬৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তি এসআইআর প্রক্রিয়ার হয়রানির ভয়ে নিজের জীবন নেওয়ার চেষ্টা করেন।
২৯ অক্টোবর: পশ্চিম মেদিনীপুরের কোতোয়ালি থেকে আসা ৯৫ বছর বয়সী ক্ষিতিশ মজুমদার (ইলামবাজারে মেয়ের কাছে থাকতেন) এই ভয়ে আত্মহত্যা করেন যে তিনি এবং তাঁর পরিবারকে জমি থেকে উচ্ছেদ করা হতে পারে।
মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, ‘রাজনৈতিকভাবে প্ররোচিত মর্মান্তিক ঘটনার জন্য কে জবাব দেবে? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি দায়িত্ব নেবেন? বিজেপি এবং তার মিত্ররা, যাদের তত্ত্বাবধানে এই ভয়ের মনোভাব ছড়িয়ে পড়েছে, তারা কি সাহস করে কথা বলতে পারবে?’
জনতার উদ্দেশে আবেদন ও আশ্বাস
৯৫ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধকে নিজের জন্মভূমির মানুষ প্রমাণ করার জন্য মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য হওয়ার ঘটনাকে ‘জাতির বিবেকের উপর গভীর ক্ষত’ এবং ‘মানবতার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যবাসীর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা, ‘আমি প্রত্যেক নাগিরকের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, প্ররোচনায় পা দেবেন না। বিশ্বাস হারাবেন না এবং কোনও চরম সিদ্ধান্ত নেবেন না। আমাদের মা-মাটি-মানুষের সরকার আপনাদের পাশে রয়েছে।’ এর পাশাপাশি তাঁর স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, ‘আমরা বাংলায় এনআরসি কার্যকর হতে দেব না। সামনের বা পিছনের কোনও দরজা দিয়েই নয়। কোনও যোগ্য নাগরিককে ‘বিদেশি’ বা ‘বহিরাগত’ বলে চিহ্নিত করতে দেওয়া হবে না। বাংলার মানুষদের অধিকার বাঁচাতে রক্তের শেষ বিন্দু পর্যন্ত আমরা লড়ব এবং বিজেপি ও তাদের সহযোগীদের সমাজবিধ্বংসী নীতিকে ব্যর্থ করে দেব।’
সবশেষে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর লড়াকু অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি লিখেছে ‘শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়ব’, ‘আমরা জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য এবং বিজেপি এবং তাদের মিত্রদের আমাদের জাতির সামাজিক কাঠামো ছিন্নভিন্ন করার ঘৃণ্য এজেন্ডাকে পরাজিত করার জন্য লড়াই করব। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের মধ্যে এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে তৈরি হওয়া আতঙ্ক দূর করার জন্য আরও কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে জানতে চান?



































